হত্যার বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা আশকারা পায়-জুরাইনে আওয়ামী লীগের নেতা খুন

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন আইনশৃঙ্খলা-পরিস্থিতি ‘অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো’ বলে দাবি করেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অপরাধ দমনে নিজেদের কৃতিত্বে সন্তোষ প্রকাশ করেন, তখন খোদ মহানগরে উপর্যুপরি হত্যার ঘটনা জনমনে শঙ্কা ও ভীতি বাড়িয়ে দেয় বৈকি। বুধবার জুরাইনে একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ্ ও তাঁর গাড়িচালককে হত্যা করে।


নিহত আওয়ামী লীগের নেতার পরিবারের সদস্যদের ধারণা, দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে স্থানীয় সাংসদ সানজিদা খানম তাঁর সঙ্গে একটি স্কুলের নামকরণ নিয়ে বিএনপির নেতা ও সাবেক সাংসদ সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিরোধ থাকার কথাও উল্লেখ করেন। ঘটনার কারণ যা-ই হোক, আইনশৃঙ্খলা-পরিস্থিতি যে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো নয়, এ হত্যাকাণ্ড তারই প্রমাণ। এর আগে ১৪ জানুয়ারি পশ্চিম আগারগাঁওয়ে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও দলীয় কোন্দলের কারণে নিহত হন। সেই ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলেও গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এসব কিসের আলামত? আইন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, অপরাধী যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন, তাদের পাকড়াও করা হবে। মন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী যদি সব অপরাধীকে পাকড়াও করা হতো, তা হলে তারা এতটা আশকারা পেত না, দিনদুপুরে হত্যার ঘটনাও ঘটত না। একদিকে অপরাধী যে-ই হোক, তাকে ধরা হবে বলে মন্ত্রীদের হুংকার; অন্যদিকে কথিত রাজনৈতিক মামলার নামে চিহ্নিত ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দেওয়া কেবল স্ববিরোধী নয়, আইনের শাসনেরও পরিপন্থী। রাজনৈতিক দলে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে। এমনকি পদ-পদবি নিয়ে নেতৃত্বে বিরোধ থাকাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেই বিরোধ খুনোখুনিতে গড়াবে কেন? কেনই বা প্রতিপক্ষকে নির্মূল করে দিতে সন্ত্রাসী, খুনিকে ভাড়া করা হবে? বিএনপির আমলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে একাধিক কমিশনার মারা গেছেন সন্ত্রাসীদের হাতে। এখন আওয়ামী লীগের নেতারা মারা পড়ছেন। এর পেছনে ক্ষমতার বখরা ভাগাভাগির বিষয় রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
আশা করি, প্রতিমন্ত্রীর অঙ্গীকার অনুযায়ী মোহাম্মদ উল্লাহ্র ঘাতকদের অবিলম্বে পাকড়াও করা হবে এবং মামলার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের শাস্তিও নিশ্চিত করা হবে। মন্ত্রী-নেতাদের মৌখিক আশ্বাস নয়, অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে হত্যার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে এবং জনজীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে।

No comments

Powered by Blogger.