৪০ বছরে সাদা হয়েছে ১২ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা কর ১ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা-কালোটাকা সাদা হয় সামান্যই
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারগুলো ১৬ বার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলেও এতে টাকা সাদা হয়েছে সামান্যই। ৪০ বছরে সব মিলিয়ে দেশে কালোটাকা সাদা হয়েছে মাত্র ১২ হাজার ৯৯৬ কোটি আর এতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা।
বিশ্বব্যাপী কালোটাকা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ২০ বছর ধরে কাজ করছেন অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ফ্রেডারিক স্নাইডার। তাঁর হিসাবে বাংলাদেশে কালোটাকার হার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩৭ শতাংশ। এই হিসাবে কালোটাকার পরিমাণ হয় প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা মানলে বাংলাদেশে কালোটাকার হার আরও বেশি—সর্বনিম্ন ৪৬ থেকে ৮১ শতাংশ পর্যন্ত। সুতরাং দেশে খুব সামান্য কালোটাকার খোঁজই সরকার এখন পর্যন্ত পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
সামান্য অর্থ সাদা হলেও এই সুযোগ দিতে দেশের প্রায় সরকারই ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। আর নির্বাচনের আগেই এই আগ্রহ বেশি দেখা গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পাওয়া কালোটাকা সাদা করার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
সাবেক তত্ত্বাধবায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খান গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে বহুবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে কারই লাভ হয় না, সরকারেরও না, আবার জনগণেরও না। বিশেষ একটি গোষ্ঠী এই সুযোগ নিয়ে লাভবান হয়েছে।
সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ ও অর্থসচিব জানান, কালোটাকা সাদা করার সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নৈতিক অবস্থান থেকে তিনি দেখেন। তিনি মনে করেন, প্রতিবারই আইন ভেঙে এই সুবিধা দেওয়া হয়। বারবার এভাবে এ ধরনের সুবিধা দিলে বিদ্যমান আইনের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা কমে যায়। তাই এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রথম সুযোগ: দেশে প্রথম কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালে, সামরিক আইনের আওতায়। সে সময়ে ৬ নম্বর সামরিক আইনের অধীনে ‘কর-অনারোপিত আয়ের’ ঘোষণার জন্য ১৯৭৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সে সময়ের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কালোটাকা সাদা করার সময় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আশা করা যায় যে, করদাতারা তাঁদের এখনো অপ্রকাশিত আয় ঘোষণার এই শেষ সুযোগ হারাবেন না। কেননা, এর পরে কর ফাঁকির কেসসমূহের ব্যাপারে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এই হুমকির পরও প্রথমবার মাত্র ৭০ কোটি টাকা সাদা হয়েছিল এবং তাতে সরকার পায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার রাজস্ব। ১৯৮১-৮২ অর্থবছরের বাজেটে আবারও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।
এরশাদ আমল: ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক আইন জারি করেন এরশাদ। সে সময় সামরিক আইনের ৫ নম্বর ধারায় ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরের বাজেটে আবার ২০ শতাংশ আয়কর দিয়ে অর্থ সাদা করার বিধান রাখা হয়। সব মিলিয়ে এ সময় মাত্র ২০০ কোটি টাকা সাদা হয় এবং সরকার রাজস্ব পায় ৪০ কোটি টাকা।
এরপর এরশাদ সরকার পরপর দুই অর্থবছরে একই সুযোগ দিলে ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে ২৫০ কোটি টাকা সাদা হয় এবং সরকার আয় করে ২৫ কোটি টাকা। আর ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে ৪০০ কোটি টাকা সাদা হয়, সরকার কর পায় ৪০ কোটি টাকা।
ব্যতিক্রমী পাঁচ বছর: আন্দোলনের মুখে এরশাদের পতনের পর সরকার গঠন করে বিএনপি। নতুন সরকারের প্রথম বাজেট (১৯৯১-৯২ অর্থবছর) ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান বলেছিলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে কালোটাকা বৈধ করার যে ধরনের বৈষম্যমূলক কর-দায়মুক্তির সুবিধা দেওয়া হয়েছে, আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে, এ ধরনের অগণতান্ত্রিক ও গোষ্ঠীস্বার্থপ্রসূত বৈষম্যমূলক করনীতি আমাদের এ গণতান্ত্রিক সরকার সম্পূর্ণ পরিহার করবে।’ সে কথা তিনি রেখেছিলেন, পাঁচ বছরে আর এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
আবার সুযোগ: ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের সময় প্রায় প্রতিবছরই নানাভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। সে সময়ের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া বিভিন্নভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেন।
১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরের বাজেটে বলা হয়েছিল, কেউ নতুন শিল্পে বিনিয়োগ করলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। আর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর দিলে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পুঁজি বিনিয়োগকারী নতুন করদাতারা যদি তাঁদের পুঁজির কমপক্ষে এক-চতুর্থাংশ আয় দেখান, তাহলেও এর উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হবে না। এই সুযোগ তেমন কেউ গ্রহণ না করলে শর্ত আরও শিথিল করা হয়।
১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরের বাজেটে অভিনব কিছু উপায়ে আবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ওইবারই প্রথম কর দিলে বিলাসবহুল গাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনলে আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন না করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০০০-২০০১ অর্থবছরের বাজেটেও আয়করের পরিমাণ সামান্য সংশোধন করে এসব সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়। এ সময় ১০ শতাংশ হারে আয়কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগও রাখা হয়। এতে সব মিলিয়ে ১০০০ কোটি টাকা সাদা হয়েছিল, আর সরকার রাজস্ব পায় ১০০ কোটি টাকা।
সুযোগ দিল বিএনপিও: ২০০১ সালে বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে সেবারও অর্থমন্ত্রী হন এম সাইফুর রহমান। এবার তিনি আগের ঘোষণা থেকে সরে এসে শর্তহীনভাবে বিভিন্ন খাতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেন। এমনকি, এ জন্য কোনো করও নির্ধারণ করা হয়নি। ২০০২ সালের জুলাই থেকে ২০০৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে প্রায় ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা সাদা হয়। আর এই সুযোগ নিয়েছিলেন ১ হাজার ৭৭ জন। এ সময় কোনো করহার নির্ধারণ করে না দেওয়ায় সরকার একটি টাকাও রাজস্ব পায়নি।
আগের ঘোষণা অনুযায়ী কালোটাকা সাদা করার মেয়াদ ২০০৫ সালের জুনেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০০৫-০৬ অর্থবছরের বাজেটে আবার এই সুযোগ রাখেন এম সাইফুর রহমান। তবে ওই বার সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এই সুযোগ নিয়েছিলেন ৭ হাজার ২৫২ জন। আর সাদা হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। আর সরকার কর পায় ৩৪৫ কোটি টাকা।
তত্ত্বাবধায়ক আমল: ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর আবারও কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ সময় অবশ্য কালোটাকা না বলে অপ্রদর্শিত অর্থ বলা হয়। ওইবারই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অর্থ সাদা হয়। এই সুযোগ নেয় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। আর এতে বৈধ হয় ৩ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা এবং সরকার রাজস্ব পায় ৬৮৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
আবার আওয়ামী লীগ: নির্বাচিত হয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ আবারও বাজেটের মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করার সব ধরনের সুযোগ দেয়। প্রথমে তিন অর্থবছরের জন্য এ সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হলেও ব্যাপক সমালোচনার মুখে তা কমিয়ে এক অর্থবছর করা হয়। ১ হাজার ৯২৩ জন ব্যক্তি এই সুযোগ নিয়ে ৯২২ কোটি ৯৮ লাখ ৮ হাজার ৯৭২ টাকা বৈধ করেছিলেন।
সর্বশেষ ২০১০-১১ অর্থবছরর বাজেটেও কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এ থেকে কত টাকা সাদা হয়েছে, সে তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
সামান্য অর্থ সাদা হলেও এই সুযোগ দিতে দেশের প্রায় সরকারই ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। আর নির্বাচনের আগেই এই আগ্রহ বেশি দেখা গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পাওয়া কালোটাকা সাদা করার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
সাবেক তত্ত্বাধবায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খান গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে বহুবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে কারই লাভ হয় না, সরকারেরও না, আবার জনগণেরও না। বিশেষ একটি গোষ্ঠী এই সুযোগ নিয়ে লাভবান হয়েছে।
সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ ও অর্থসচিব জানান, কালোটাকা সাদা করার সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নৈতিক অবস্থান থেকে তিনি দেখেন। তিনি মনে করেন, প্রতিবারই আইন ভেঙে এই সুবিধা দেওয়া হয়। বারবার এভাবে এ ধরনের সুবিধা দিলে বিদ্যমান আইনের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা কমে যায়। তাই এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রথম সুযোগ: দেশে প্রথম কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালে, সামরিক আইনের আওতায়। সে সময়ে ৬ নম্বর সামরিক আইনের অধীনে ‘কর-অনারোপিত আয়ের’ ঘোষণার জন্য ১৯৭৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সে সময়ের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কালোটাকা সাদা করার সময় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আশা করা যায় যে, করদাতারা তাঁদের এখনো অপ্রকাশিত আয় ঘোষণার এই শেষ সুযোগ হারাবেন না। কেননা, এর পরে কর ফাঁকির কেসসমূহের ব্যাপারে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এই হুমকির পরও প্রথমবার মাত্র ৭০ কোটি টাকা সাদা হয়েছিল এবং তাতে সরকার পায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার রাজস্ব। ১৯৮১-৮২ অর্থবছরের বাজেটে আবারও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলেও তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।
এরশাদ আমল: ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক আইন জারি করেন এরশাদ। সে সময় সামরিক আইনের ৫ নম্বর ধারায় ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরের বাজেটে আবার ২০ শতাংশ আয়কর দিয়ে অর্থ সাদা করার বিধান রাখা হয়। সব মিলিয়ে এ সময় মাত্র ২০০ কোটি টাকা সাদা হয় এবং সরকার রাজস্ব পায় ৪০ কোটি টাকা।
এরপর এরশাদ সরকার পরপর দুই অর্থবছরে একই সুযোগ দিলে ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে ২৫০ কোটি টাকা সাদা হয় এবং সরকার আয় করে ২৫ কোটি টাকা। আর ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে ৪০০ কোটি টাকা সাদা হয়, সরকার কর পায় ৪০ কোটি টাকা।
ব্যতিক্রমী পাঁচ বছর: আন্দোলনের মুখে এরশাদের পতনের পর সরকার গঠন করে বিএনপি। নতুন সরকারের প্রথম বাজেট (১৯৯১-৯২ অর্থবছর) ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান বলেছিলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে কালোটাকা বৈধ করার যে ধরনের বৈষম্যমূলক কর-দায়মুক্তির সুবিধা দেওয়া হয়েছে, আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে, এ ধরনের অগণতান্ত্রিক ও গোষ্ঠীস্বার্থপ্রসূত বৈষম্যমূলক করনীতি আমাদের এ গণতান্ত্রিক সরকার সম্পূর্ণ পরিহার করবে।’ সে কথা তিনি রেখেছিলেন, পাঁচ বছরে আর এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
আবার সুযোগ: ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের সময় প্রায় প্রতিবছরই নানাভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। সে সময়ের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া বিভিন্নভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেন।
১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরের বাজেটে বলা হয়েছিল, কেউ নতুন শিল্পে বিনিয়োগ করলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। আর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর দিলে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পুঁজি বিনিয়োগকারী নতুন করদাতারা যদি তাঁদের পুঁজির কমপক্ষে এক-চতুর্থাংশ আয় দেখান, তাহলেও এর উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হবে না। এই সুযোগ তেমন কেউ গ্রহণ না করলে শর্ত আরও শিথিল করা হয়।
১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরের বাজেটে অভিনব কিছু উপায়ে আবার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ওইবারই প্রথম কর দিলে বিলাসবহুল গাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনলে আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন না করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০০০-২০০১ অর্থবছরের বাজেটেও আয়করের পরিমাণ সামান্য সংশোধন করে এসব সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়। এ সময় ১০ শতাংশ হারে আয়কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগও রাখা হয়। এতে সব মিলিয়ে ১০০০ কোটি টাকা সাদা হয়েছিল, আর সরকার রাজস্ব পায় ১০০ কোটি টাকা।
সুযোগ দিল বিএনপিও: ২০০১ সালে বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে সেবারও অর্থমন্ত্রী হন এম সাইফুর রহমান। এবার তিনি আগের ঘোষণা থেকে সরে এসে শর্তহীনভাবে বিভিন্ন খাতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেন। এমনকি, এ জন্য কোনো করও নির্ধারণ করা হয়নি। ২০০২ সালের জুলাই থেকে ২০০৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে প্রায় ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা সাদা হয়। আর এই সুযোগ নিয়েছিলেন ১ হাজার ৭৭ জন। এ সময় কোনো করহার নির্ধারণ করে না দেওয়ায় সরকার একটি টাকাও রাজস্ব পায়নি।
আগের ঘোষণা অনুযায়ী কালোটাকা সাদা করার মেয়াদ ২০০৫ সালের জুনেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০০৫-০৬ অর্থবছরের বাজেটে আবার এই সুযোগ রাখেন এম সাইফুর রহমান। তবে ওই বার সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এই সুযোগ নিয়েছিলেন ৭ হাজার ২৫২ জন। আর সাদা হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। আর সরকার কর পায় ৩৪৫ কোটি টাকা।
তত্ত্বাবধায়ক আমল: ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর আবারও কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ সময় অবশ্য কালোটাকা না বলে অপ্রদর্শিত অর্থ বলা হয়। ওইবারই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অর্থ সাদা হয়। এই সুযোগ নেয় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। আর এতে বৈধ হয় ৩ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা এবং সরকার রাজস্ব পায় ৬৮৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
আবার আওয়ামী লীগ: নির্বাচিত হয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ আবারও বাজেটের মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করার সব ধরনের সুযোগ দেয়। প্রথমে তিন অর্থবছরের জন্য এ সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হলেও ব্যাপক সমালোচনার মুখে তা কমিয়ে এক অর্থবছর করা হয়। ১ হাজার ৯২৩ জন ব্যক্তি এই সুযোগ নিয়ে ৯২২ কোটি ৯৮ লাখ ৮ হাজার ৯৭২ টাকা বৈধ করেছিলেন।
সর্বশেষ ২০১০-১১ অর্থবছরর বাজেটেও কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এ থেকে কত টাকা সাদা হয়েছে, সে তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
No comments