মায়েশার ফিরে আসা-সর্বত্র মিলুক এমন স্বস্তির খবর

অপহরণের মাত্র ১৭ ঘণ্টা পর মায়ের বুকে ফিরে এলো মোবাশ্বিরা আলম মায়েশা। রোববার যখন টেলিভিশনের সংবাদচিত্রে অশ্রুসিক্ত মা-বাবার মুখে ৮ মাসের নিষ্পাপ শিশুটির কোমল হাতের স্পর্শ বুলিয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখানো হচ্ছিল, তখন অগণিত দর্শকও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।


একই সঙ্গে তাদের হাসি সবাইকে হাসিয়েছে। সব মহলেই ছড়িয়েছে প্রশান্তি, এনে দিয়েছে স্বস্তির ভাব। মুক্তিপণ আদায় কিংবা ভীতি সঞ্চার অথবা শত্রুতার বশে হোক, একটি ফুটফুটে শিশুকে অপহরণ কিংবা জিম্মি করা কেউ মেনে নিতে পারে না। সর্বত্রই ছিল আতঙ্ক_ যদি মায়েশা ফিরে না আসে? সবার মনে আরও প্রশ্ন, অপরাধীদের জাল থেকে কি তাহলে দুধের শিশুদেরও নিস্তার নেই? শনিবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ের এক বাসায় ডাকাতরা হানা দিয়ে স্বর্ণালঙ্কার ও অর্থ লুটের পাশাপাশি মায়েশাকেও তুলে নিয়ে যায়। ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কী কারণে মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়া এলাকায় শিশুটিকে রাস্তায় ফেলে রেখে গেল দুর্বৃত্তরা, তার কারণ অজ্ঞাত। হতে পারে যে পুলিশ-র‌্যাবের সক্রিয়তায় তারা শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল, কিংবা এমনও হতে পারে যে সন্ত্রাসী-বদমায়েশ যাই হোক, 'তবুও মানুষ তো!' শিশুটিকে একটি বাড়ির পাশে ফেলে রাখার কারণে সহজেই তার কান্নার শব্দ অন্যরা টের পেয়েছে। আর পাশে রাখা গেঞ্জিতে মোড়ানো একটি ফিডার ছাড়াও লেখা ছিল মায়েশার পরিবারের মোবাইল টেলিফোন নম্বর। এ শিশুটিকেই যে খিলগাঁও থেকে কয়েক ঘণ্টা আগে অপহরণ করা হয়েছিল, সেটাও এভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। ব্যাংক কর্মকর্তা শাহ আলম এবং তার স্ত্রী খালেদা বেগম নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান যে, তারা বুকের ধন ফিরে পেয়েছেন। এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ-উৎকণ্ঠা চরমে সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলীর 'নিখোঁজ' রহস্য নিয়ে। পুলিশ-র‌্যাব ঘটনার কূলকিনারা করতে পারছে না। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি নিজেদের ঘরে খুন হয়েছেন প্রায় আড়াই মাস আগে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, '৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিকে ধরা হবে।' রাজধানীর অভিজাত এলাকায় দেড় মাস আগে খুন হয়েছেন সৌদি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা। কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে এক স্কুলছাত্রী অপহৃত হওয়ার পর তার লাশ মিলেছে জামালপুরে। বগুড়ার কাহালুতে এক স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর হত্যা করে ইটভাটায় পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এসব নিষ্ঠুর ও অমানবিক ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ-উৎকণ্ঠা আছে, রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ও ব্লেমগেম আছে। মায়েশার পিতা-মাতা ও পরিবারের সদস্যদের চরম শঙ্কা দীর্ঘায়িত হতে পারেনি, এ বড় আনন্দের খবর। কেন অপরাধীরা তাকে 'ছেড়ে দিল' তা নিয়ে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও মনোবিজ্ঞানীরা আলোচনায় বসতে পারেন। তার এ ফিরে আসায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ কোনো অবদান রয়েছে, সেটা সম্ভবত বলা যাবে না। তারা প্রথমত অপরাধ ঠেকাতে পারেনি, দ্বিতীয়ত গুরুতর অপরাধ সংঘটনের পরও কাউকে আটক করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাহলে মানুষের ভরসা মিলবে কোথায়? অপরাধীরাই-বা নিজেদের যে কোনো অবস্থাতেই অনিরাপদ বোধ করবে কেন? মায়েশার ক্ষেত্রে হয়তোবা 'তবুও মানুষ তো' মনোবৃত্তি কাজ করেছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেটা ঘটছে না বা ঘটবে এমন নিশ্চয়তা নেই। এটা সম্ভব কেবল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরবচ্ছিন্ন তৎপরতার কারণেই। কিন্তু তেমন অভয়বাণী মিলছে কোথায়?

No comments

Powered by Blogger.