কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই by গৌরাঙ্গ নন্দী
পুলিশের পরিদর্শক এস এম কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন, ভূমিহীন নেতা অপহরণ ও খুন, যেকোনো কাজে খুলনার মেয়রের নাম ব্যবহার, সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া দায়িত্ব পালনের সময় নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে একাধিক জায়গা থেকে তাঁকে বিদায় নিতে হয়েছে। সর্বশেষ খুলনা সদর থানায় ঝুলিয়ে রাজনৈতিক কর্মী নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল সোমবার প্রত্যাহার করা হয়েছে ওসি কামরুজ্জামানকে। একই অভিযোগে আরো তিন কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি কামরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা আমি মেনে নিয়েছি।' খুলনা থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কামরুজ্জামান নানা কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচিত হন। তিনি যাকে-তাকে বলতেন খুলনার সিটি মেয়র তাঁর মামা। খুলনা সদরের সংসদ সদস্য ও বিএনপি খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকেও তিনি এই কথা বলেছিলেন। অবশ্য খুলনা সিটির মেয়র ও মহানগর শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক একাধিকবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ওসি কামরুজ্জামানের সঙ্গে তাঁর কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই।
জানা যায়, ওসি এস এম কামরুজ্জামানের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার উজলকুড় ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামে।
একাধিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, রামপাল-মংলা আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন তালুকদার আবদুল খালেক। বর্তমানে তাঁর স্ত্রী হাবিবুন নাহার ওই এলাকার সংসদ সদস্য। তাঁদের বাড়িও ওই এলাকায়। ওসি কামরুজ্জামান তাঁদের নাম ব্যবহার করে সেই সুবিধাটাই নিয়েছেন।
অন্যের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া শিখেছেন কামরুজ্জামান। ১৯৮৭ সালে তিনি পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। ইতিমধ্যে তিনি অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। খুলনা নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকায় তাঁর একটি চারতলা ভবন এবং পাশেই একটি টিনশেড বাড়ি আছে। রাজধানীর বনানীতে তাঁর বাড়ি আছে, যেখানে তাঁর স্ত্রী-ছেলে-মেয়েরা বসবাস করেন। রাজধানীর উত্তরায় ডেভেলপারদের দিয়ে তিনি একটি ভবন তৈরি করাচ্ছেন।
গত বছরের ১২ এপ্রিল খুলনা নগরীর নিরালা এলাকা থেকে ১০ বছরের শিশু বেলালকে থানায় ধরে এনে ওসি কামরুজ্জামান বৈদ্যুতিক শক দিয়েছিলেন। বলা হয়েছিল, ওই শিশুটি সংঘবদ্ধ চোর দলের সদস্য। তখন ঘটনাটি নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়। এই ঘটনায় উচ্চ আদালতে মামলা দায়েরও হয়।
এর আগে এক হরতালের সময় সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর দিকে ওসি কামরুজ্জামান লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যান। গত রবিবার হরতাল চলাকালে তাঁর নেতৃত্বে দুই ছাত্রদলকর্মীকে ধরে এনে থানায় ঝুলিয়ে পেটানো হয়। এ সময় এক সাংবাদিকের মুভি ক্যামেরায় দৃশ্যটি ধরা পড়েছে বুঝতে পেরে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং সাংবাদিকদের থানা থেকে বের করে দেন তিনি।
পরিদর্শক কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় দায়িত্ব পালনের সময় সেখানকার ভূমিহীন নেতা সাইফুল্লাহ লস্করকে নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানায় দায়িত্ব পালনকালেও তাঁর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় তাঁর নামে মামলাও হয়েছে।
সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যাকাণ্ড
আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, ২০০৯ সালের ৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে জেলার ভূমিহীন আন্দোলনের নেতা সাইফুল্লাহ লস্করের শহরের কাটিয়া লস্করপাড়ার বাড়ি ঘিরে ফেলে সেই সময় সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি এস এম কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ। একপর্যায়ে কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম ওই বাড়িতে হানা দেন। গ্রেপ্তার এড়াতে সাইফুল্লাহ লস্কর বাড়ির পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। পরদিন সকালে বাড়ির পাশের পুকুরপাড়ে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। পুলিশের নির্যাতনেই সাইফুল্লাহ লস্করের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ থাকলেও পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যায়। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালীন ওসি কামরুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার সামছুল আলম ও উপপরিদর্শক নজরুলের যোগসাজশে পুলিশের নির্যাতনেই সাইফুল্লাহ লস্করের মৃত্যু হয়। সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলী নূর খান বাবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেবহাটা উপজেলার নোড়ারচকে প্রায় ৩০০ বিঘা সরকারি সম্পত্তি ভূমিহীনরা দখল করে নিলে স্থানীয় প্রশাসন ভূমিহীন নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এমনকি ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে ওই সম্পত্তি প্রশাসন ইজারাগ্রহীতার অনুকূলে দখল বুঝে দেওয়ার জন্য ভূমিহীন নেতাদের সঙ্গে দেনদরবার করে ব্যর্থ হয়। যার ফলে ঘটনার তিন দিন আগে সাতক্ষীরা থানার তৎকালীন ওসি কামরুজ্জামান আস্ফালেন করে বলেছিলেন ভূমিহীন নেতারা বাড়াবাড়ি করছে। তাঁদের এই বাড়াবাড়ির চরম মাসুল দিতে হবে। সাইফুল্লাহ লস্কর তাই জীবন দিয়ে ভূমিহীন আন্দোলনের মাসুল দিয়ে গেলেন।'
এই ঘটনায় ব্যাপক জনরোষের মুখে সেই সময়ের ওসি কামরুজ্জামানকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
নির্যাতনের ঘটনায় প্রত্যাহার
থানায় ভবনের ছাদের হুকের সঙ্গে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে দুই ছাত্রদলকর্মীকে নির্যাতন করার ঘটনায় খুলনা থানার ওসিসহ চার পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার (ক্লোজ) করা হয়েছে। গতকাল সোমবার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ঘটনাটি তদন্তে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পরিদর্শক কামরুজ্জামান ছাড়া প্রত্যাহার করে নেওয়া অন্য তিন পুলিশ সদস্য হলেন কনস্টেবল আবু সুফিয়ান, সুধাংশু ও মামুন।
ওই দিন প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল তা অনুসন্ধানের জন্যে কেএমপির পক্ষ থেকে উপকমিশনার (বিশেষ শাখা) হায়দার আলীকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে এ পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।'
নির্যাতিতরা জেলহাজতে
নির্যাতনের শিকার ছাত্রদলকর্মী এস এম মাহমুদুল হক টিটো ও ফেরদৌস রহমান মুন্নাকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়। আইনজীবীরা তাঁদের জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজত (রিমান্ড) চেয়ে আবেদন করে। আদালত দুটি আবেদন নাকচ করে তাঁদের জেলহাজতে পাঠান।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি
বিএনপি খুলনা মহানগরের সভাপতি সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু রাজনৈতিক কর্মী নির্যাতনকারী ওসি ও তাঁর সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। তিনি বলেন, ওসি খুলনার মেয়রের নাম ভাঙিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন করেছে। বিষয়টি মেয়রকে জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এর কোনো প্রতিকার পাওয়া তো যায়নি বরং ওসি কামরুজ্জামানের দৌরাত্ম্য দিনকে দিন বেড়ে যায়। এ থেকে ধারণা করা যায়, খুলনা আওয়ামী লীগ পুলিশকে দলীয়করণ করে বিরোধী দল নির্যাতনের কাজে ব্যবহার করছে।'
কামরুজ্জামানের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা নগর পুলিশের কমিশনার সফিকুর রহমান বলেন, 'ওসির একটি ত্রুটির জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। সাইফুল্লাহ লস্করের ঘটনাটি সাতক্ষীরার এবং অনেক আগের। সেটা এখন আমাদের আওতাধীন নয়।'
ওসির বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ অন্যান্য অভিযোগ বিষয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'এসব বিষয় প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবে।'
জানা যায়, ওসি এস এম কামরুজ্জামানের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার উজলকুড় ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামে।
একাধিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, রামপাল-মংলা আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন তালুকদার আবদুল খালেক। বর্তমানে তাঁর স্ত্রী হাবিবুন নাহার ওই এলাকার সংসদ সদস্য। তাঁদের বাড়িও ওই এলাকায়। ওসি কামরুজ্জামান তাঁদের নাম ব্যবহার করে সেই সুবিধাটাই নিয়েছেন।
অন্যের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া শিখেছেন কামরুজ্জামান। ১৯৮৭ সালে তিনি পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। ইতিমধ্যে তিনি অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। খুলনা নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকায় তাঁর একটি চারতলা ভবন এবং পাশেই একটি টিনশেড বাড়ি আছে। রাজধানীর বনানীতে তাঁর বাড়ি আছে, যেখানে তাঁর স্ত্রী-ছেলে-মেয়েরা বসবাস করেন। রাজধানীর উত্তরায় ডেভেলপারদের দিয়ে তিনি একটি ভবন তৈরি করাচ্ছেন।
গত বছরের ১২ এপ্রিল খুলনা নগরীর নিরালা এলাকা থেকে ১০ বছরের শিশু বেলালকে থানায় ধরে এনে ওসি কামরুজ্জামান বৈদ্যুতিক শক দিয়েছিলেন। বলা হয়েছিল, ওই শিশুটি সংঘবদ্ধ চোর দলের সদস্য। তখন ঘটনাটি নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়। এই ঘটনায় উচ্চ আদালতে মামলা দায়েরও হয়।
এর আগে এক হরতালের সময় সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর দিকে ওসি কামরুজ্জামান লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যান। গত রবিবার হরতাল চলাকালে তাঁর নেতৃত্বে দুই ছাত্রদলকর্মীকে ধরে এনে থানায় ঝুলিয়ে পেটানো হয়। এ সময় এক সাংবাদিকের মুভি ক্যামেরায় দৃশ্যটি ধরা পড়েছে বুঝতে পেরে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং সাংবাদিকদের থানা থেকে বের করে দেন তিনি।
পরিদর্শক কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় দায়িত্ব পালনের সময় সেখানকার ভূমিহীন নেতা সাইফুল্লাহ লস্করকে নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানায় দায়িত্ব পালনকালেও তাঁর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় তাঁর নামে মামলাও হয়েছে।
সাইফুল্লাহ লস্কর হত্যাকাণ্ড
আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, ২০০৯ সালের ৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে জেলার ভূমিহীন আন্দোলনের নেতা সাইফুল্লাহ লস্করের শহরের কাটিয়া লস্করপাড়ার বাড়ি ঘিরে ফেলে সেই সময় সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি এস এম কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ। একপর্যায়ে কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম ওই বাড়িতে হানা দেন। গ্রেপ্তার এড়াতে সাইফুল্লাহ লস্কর বাড়ির পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। পরদিন সকালে বাড়ির পাশের পুকুরপাড়ে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। পুলিশের নির্যাতনেই সাইফুল্লাহ লস্করের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ থাকলেও পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যায়। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালীন ওসি কামরুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার সামছুল আলম ও উপপরিদর্শক নজরুলের যোগসাজশে পুলিশের নির্যাতনেই সাইফুল্লাহ লস্করের মৃত্যু হয়। সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলী নূর খান বাবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেবহাটা উপজেলার নোড়ারচকে প্রায় ৩০০ বিঘা সরকারি সম্পত্তি ভূমিহীনরা দখল করে নিলে স্থানীয় প্রশাসন ভূমিহীন নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এমনকি ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে ওই সম্পত্তি প্রশাসন ইজারাগ্রহীতার অনুকূলে দখল বুঝে দেওয়ার জন্য ভূমিহীন নেতাদের সঙ্গে দেনদরবার করে ব্যর্থ হয়। যার ফলে ঘটনার তিন দিন আগে সাতক্ষীরা থানার তৎকালীন ওসি কামরুজ্জামান আস্ফালেন করে বলেছিলেন ভূমিহীন নেতারা বাড়াবাড়ি করছে। তাঁদের এই বাড়াবাড়ির চরম মাসুল দিতে হবে। সাইফুল্লাহ লস্কর তাই জীবন দিয়ে ভূমিহীন আন্দোলনের মাসুল দিয়ে গেলেন।'
এই ঘটনায় ব্যাপক জনরোষের মুখে সেই সময়ের ওসি কামরুজ্জামানকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
নির্যাতনের ঘটনায় প্রত্যাহার
থানায় ভবনের ছাদের হুকের সঙ্গে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে দুই ছাত্রদলকর্মীকে নির্যাতন করার ঘটনায় খুলনা থানার ওসিসহ চার পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার (ক্লোজ) করা হয়েছে। গতকাল সোমবার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ঘটনাটি তদন্তে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পরিদর্শক কামরুজ্জামান ছাড়া প্রত্যাহার করে নেওয়া অন্য তিন পুলিশ সদস্য হলেন কনস্টেবল আবু সুফিয়ান, সুধাংশু ও মামুন।
ওই দিন প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল তা অনুসন্ধানের জন্যে কেএমপির পক্ষ থেকে উপকমিশনার (বিশেষ শাখা) হায়দার আলীকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে এ পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।'
নির্যাতিতরা জেলহাজতে
নির্যাতনের শিকার ছাত্রদলকর্মী এস এম মাহমুদুল হক টিটো ও ফেরদৌস রহমান মুন্নাকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়। আইনজীবীরা তাঁদের জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজত (রিমান্ড) চেয়ে আবেদন করে। আদালত দুটি আবেদন নাকচ করে তাঁদের জেলহাজতে পাঠান।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি
বিএনপি খুলনা মহানগরের সভাপতি সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু রাজনৈতিক কর্মী নির্যাতনকারী ওসি ও তাঁর সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। তিনি বলেন, ওসি খুলনার মেয়রের নাম ভাঙিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন করেছে। বিষয়টি মেয়রকে জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এর কোনো প্রতিকার পাওয়া তো যায়নি বরং ওসি কামরুজ্জামানের দৌরাত্ম্য দিনকে দিন বেড়ে যায়। এ থেকে ধারণা করা যায়, খুলনা আওয়ামী লীগ পুলিশকে দলীয়করণ করে বিরোধী দল নির্যাতনের কাজে ব্যবহার করছে।'
কামরুজ্জামানের বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা নগর পুলিশের কমিশনার সফিকুর রহমান বলেন, 'ওসির একটি ত্রুটির জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। সাইফুল্লাহ লস্করের ঘটনাটি সাতক্ষীরার এবং অনেক আগের। সেটা এখন আমাদের আওতাধীন নয়।'
ওসির বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ অন্যান্য অভিযোগ বিষয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'এসব বিষয় প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবে।'
No comments