জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করুন-গতিহীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যাটির গুরুত্ব কি আমাদের জাতীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে হ্রাস পেয়েছে? জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কি আজ আর কোনো জাতীয় অগ্রাধিকার নয়? এ প্রশ্ন জাগছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের দুর্দশা দেখে।


প্রথমত লোকবলসংকট, দ্বিতীয়ত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসকদের প্রাধান্যের ফলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিজস্ব গতিশীলতা কমেছে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠপর্যায় পর্যন্ত মোট প্রায় সাড়ে আট হাজার পদ শূন্য রয়েছে। ৮০টি সহকারী পরিচালকের পদ শূন্য রয়েছে ১০ বছর ধরে। লোকবলের এই ঘাটতির সঙ্গে যোগ হয়েছে বিদ্যমান লোকবলের হতাশা। এই অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি হয় না বছরের পর বছর। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে যোগ দিয়ে ১২ বছর ধরে একই পদে কাজ করছেন এমন কর্মকর্তাও আছেন, যাঁরা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে ভাবছেন তাঁদের ‘কোনো ভবিষ্যৎ নেই’।
পরিবার পরিকল্পনা একটি ক্যাডারভুক্ত অধিদপ্তর, অথচ এই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) প্রশাসন ক্যাডার থেকে আসা একজন কর্মকর্তা। নয়টি পরিচালক পদে অধিদপ্তরের নিজস্ব কর্মকর্তা নেই। বিভাগীয় পর্যায়ের ছয়টি পরিচালকের পদে এবং জেলা পর্যায়ে ৬৪টি উপপরিচালকের পদের মধ্যে ৫৩টিতেই আছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে জ্যেষ্ঠ হয়ে গেছেন, তাঁদের অধীনে চাকরি করছেন পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারের বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। তাঁদের হতাশার কারণ বোধগম্য।
সরকারের কোনো বিভাগ বা অধিদপ্তরের কার্যক্রমের গতিশীলতা নির্ভর করে তার নিজস্ব লোকবলের উৎসাহ-উদ্দীপনার ওপর; সরকার সে অধিদপ্তরের দিকে কতটা নজর দিচ্ছে, তার ওপরও বটে। প্রথমেই প্রয়োজন লোকবলের শূন্যতা দূর করা, প্রয়োজনীয়সংখ্যক যোগ্য ও দক্ষ লোক নিয়োগ করা। আর যা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, এই অধিদপ্তরের নিজস্ব কর্মকর্তাদেরই গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ করা, তাঁদের নিজস্ব দায়দায়িত্ব ও জবাবদিহির ব্যবস্থা করা। অনিয়ন্ত্রিতভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিচিত্রমুখী সমস্যা-সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, বিদ্যমান সমস্যাগুলো আরও প্রকট হচ্ছে। কিন্তু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সরকারি উদ্যোগে স্পষ্টতই ভাটা পড়েছে। কিন্তু এভাবে আর চলতে পারে না। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে প্রথম সারির অগ্রাধিকারগুলোর অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত জরুরি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরকে পুরোপুরি ঢেলে সাজিয়ে পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ করে এবং অর্থ বরাদ্দ দিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে আবার নতুন করে গতি সঞ্চার করা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.