এমপি-ছাত্রলীগ প্রকল্প দ্বন্দ্ব-কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা চাই

দেশে অনেক দিন থেকেই কিছু কর্মসূচি চালু রয়েছে, যেগুলোর উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে মহৎ। এগুলোকে দরিদ্র-ক্ষুধার্ত মানুষের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে সহায়তা প্রকল্পও বলা যেতে পারে। প্রকল্পগুলো হলো- কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা), কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা), টেস্ট রিলিফ (টিআর) ইত্যাদি।


এর মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মসূচিও ত্বরান্বিত হয়ে থাকে। ২৩ এপ্রিল ২০১২ কালের কণ্ঠে প্রকাশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে টিআর প্রকল্প নিয়ে এমপি-ছাত্রলীগ দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। বিষয়টি নতুন কিছু নয়। অতীতেও এ রকম চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট ক্ষমতাবানরা এসব প্রকল্প নিয়ে নানা রকম দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন, আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা এরই সাক্ষ্যবহ।
কাবিখা, কাবিটা, টিআর ইত্যাদি প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে উন্নয়ন সাধিত হয়ে থাকে এবং এর পাশাপাশি মানুষের খাদ্যের সংস্থানও হয়। সাধিত হয় উন্নয়ন কর্মও। কিন্তু বরাদ্দের যথাযথ সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কালের কণ্ঠের ওই প্রতিবেদনে প্রকাশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদের দাখিল করা ৩০০ টন চালের ১৯৯টি প্রকল্পে হাজার হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছে নিজ দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। তারা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে লিখিত নালিশ জানানোর পাশাপাশি জেলা কমিটির সভায়ও বিষয়টি উত্থাপন করেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের নিরসন ঘটায় ইতিমধ্যে চার সদস্যের একটি 'বিরোধ নিরসন' কমিটি গঠন করা হয়েছে। দরিদ্র-অতি দরিদ্রদের কল্যাণে গৃহীত এ রকম অনেক কর্মসূচি অতীতে ভেস্তে গেছে ক্ষমতাবানদের লোভাতুর দৃষ্টির কারণে, এমন নজিরও আছে। বারবারই দেখা গেছে এগুলো হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী মোটাতাজাকরণ কর্মসূচি কিংবা প্রকল্প। এসব কর্মসূচির স্বচ্ছতা এবং বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতার পাটই যেন চুকে গেছে! স্মরণ করা আবশ্যক, বাংলাদেশ পর পর পাঁচবার বিশ্বে দুর্নীতিতে শীর্ষস্থানে অবস্থান করেছিল। এ থেকে উত্তরণ ঘটলেও দুর্নীতি নির্মূল হয়নি। রাজনীতিক, রাষ্ট্রপরিচালক কিংবা সরকারের নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, জনগণ ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অভিশাপ হয়ে আছে।
দেশকে দুর্নীতির বলয় থেকে মুক্ত করতে ব্যক্তিবিশেষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা নয়, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলোর সংস্কারের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। ক্ষমতাসীনরাও এর গুরুত্ব অনুধাবন করেন বটে, কিন্তু কার্যত ফল আশানুরূপ নয়। দেশের মানুষ আশা করেছিল, বিপুল জনরায়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা গ্রহণকারী মহাজোট সরকার অশুভ, অকল্যাণকর সব কিছুর শিকড় উৎপাটন করতে সক্ষম হবে অনেক কিছুর উর্ধ্বে ওঠে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মানুষ ক্রমেই হতাশ হচ্ছে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের সার্বিক পরিস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনার মাধ্যমে দরিদ্র সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান ও খাদ্য লাভের সহায়ক কর্মসূচিগুলোকে দুর্নীতি-অনিয়ম থেকে মুক্ত করতেই হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, সারা দেশেই কমবেশি এমনটি ঘটছে। এর অবসান ভিন্ন গত্যন্তর নেই।

No comments

Powered by Blogger.