কাতারে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী-সহস্রাব্দের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নারীদের সম-অধিকার চাই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহস্রাব্দের আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তিপূর্ণ বিশ্ব নিশ্চিত করতে নারীদের সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিকাশমান প্রযুক্তি ও তথ্যের মাধ্যমে আমাদের দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে নারী ও মেয়েদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন ঘটছে।


এ জন্য আমরা যত দ্রুত তাদের সমান সুযোগ-সুবিধা দেব, আসন্ন সহস্রাব্দের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা ততই ঐক্যবদ্ধ হতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার সকালে কাতার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ‘উন্নয়নে নারী’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা বলেন, অবশেষে বিশ্ব অনুধাবন করেছে, নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ এবং পরিবার, সম্প্রদায়, সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের নিজ নিজ ভূমিকার জন্য সমান শ্রদ্ধাবোধের ওপর কোনো জাতির প্রকৃত ও টেকসই উন্নয়ন নির্ভরশীল।
‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি এবং জেন্ডার ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জেন্ডারবৈষম্যের বিলোপ ও নারীর ক্ষমতায়ন অর্থনীতির উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও বৃহত্তর সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০০ সালে সহস্রাব্দ ঘোষণা গ্রহণ করার সময় তাঁর সরকারের প্রাথমিক লক্ষ ছিল, উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে নারীর জন্য সমতা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। এসব লক্ষ্যমাত্রার অনেকগুলো এখনো অসম্পূর্ণ থাকায় তিনি উদ্বিগ্ন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত কয়েক দশকে আমাদের নীতিমালায় বাণিজ্য উদারীকরণ ও নিয়ন্ত্রণ শিথিলের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতির কারণে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর অবস্থা পরিবর্তনে কোনো অগ্রগতি হয়নি।’
শিক্ষাকে নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম কার্যকর হাতিয়ার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে নারীশিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা তহবিল’ গঠন ও দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্টমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক স্টিফেন সিগুইনো, কাতারের মহিলা ব্যবসায়ী সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা আলফারদান এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধি জর্জ সাম্পিউও বক্তৃতা করেন।
জনগণের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ: প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে গত রোববার রাতে দোহা কূটনীতিক ক্লাবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি তাঁর পূর্ণ আস্থার কথা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে কীভাবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে, তা দেশের মানুষই নির্ধারণ করবে।
দোহায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শাহদাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এম জিয়াউদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।
দেশের বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কঠিন কাজ শুরু করেছে। তবে প্রধান বিরোধী দল এ কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নামে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের চেষ্টা করছে।
কাতারে বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয় পরিদর্শন: প্রধানমন্ত্রী রোববার সন্ধ্যায় কাতারের দোহায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন বাংলা মাধ্যমের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় বাংলাদেশ এমএইচএম স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি শিশুদের বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য শেখাতে প্রবাসী নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা তাদের নিজস্ব সমাজ ও সভ্যতার প্রতি অবিচল থাকে।
৫৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯৯৮ সালে যাত্রা করা এই প্রতিষ্ঠানের আরও সম্প্রসারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী তিন কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.