লোকসানের হাত থেকে চাষিদের বাঁচাতে হবে-আলু সংরক্ষণ ও বিপণন

যে দেশের ৩৮ শতাংশ মানুষকে এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দিনে সোয়া এক ডলারের (প্রায় ৯০ টাকা) কম আয়ের ওপর নির্ভর করে বাঁচতে হয়, সে দেশের কৃষক আলুর অতি উৎপাদনের কারণে আজ লোকসানের ভারে কাহিল।


অথচ খাদ্যপণ্য বেশি উৎপাদিত হলে কৃষক ও দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটার কথা। সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত হিমাগারের অভাব, বেশি ভাড়া, বিদ্যুতের ঘাটতি, পণ্য পরিবহনে সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে আজ আলুর অতি উৎপাদন নিয়ে কৃষককে বিপাকে পড়তে হয়েছে। মুন্সিগঞ্জে এ বছর প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন-ব্যয় পড়েছে আট টাকা ৯২ পয়সা, বিক্রি হচ্ছে চার থেকে সাড়ে চার টাকায়। উত্তরাঞ্চলে দাম আরও কম। কৃষকের পক্ষে এত লোকসান পোষানো সম্ভব নয়।
দেশে আলুর মোট চাহিদা বছরে ৬০-৬৫ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর উৎপাদিত হয়েছিল ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। ফলে আলুর ভালো দাম পাওয়া গিয়েছিল। এতে কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়ে এ বছর বিপুল ফলন দিয়েছেন। প্রায় ৮০-৯০ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হবে বলে এক হিসাবে জানা গেছে। এখন সরকারের উচিত দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে আলু রপ্তানির ব্যবস্থা করা। বিশ্বে খাদ্যের চাহিদা রয়েছে। সুতরাং আলু রপ্তানি করলে কৃষক ও দেশের বিদেশি মুদ্রাভান্ডার—উভয়ই লাভবান হবে।
ইতিমধ্যে উদ্যোগ নিতে হবে, কৃষক যেন রোদে শুকিয়ে ও দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্তত তিন-চার মাস আলু সংরক্ষণ করতে পারেন। এর কৌশল গতকাল শনিবার প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছে। জাতীয় গণমাধ্যম ও কৃষি বিভাগের কর্মীরা এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে কৃষকদের সচেতন করতে পারেন। পাশাপাশি দেশে আরও হিমাগার তৈরি এবং কম দামে আলু রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।
ভাতের পাশাপাশি আলু খাওয়ার অভ্যাস করলেও আলুর চাহিদা বাড়বে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা বলছেন, আলুর পুষ্টিগুণ যথেষ্ট, তাই খাদ্যতালিকায় আলুর অনুপাত বাড়াতে পারলে সমস্যা কিছুটা কমবে। চার বছর আগে ২০০৭ সালে ৮০ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হওয়ায় একই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তখন মানুষ আলু কিছু বেশি খাওয়ার অভ্যাস করেছিল। এবারও খাদ্যতালিকায় আলুর অংশ বাড়ানোর জন্য মানুষকে সচেতন উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশে চালের মোট চাহিদা বছরে প্রায় দুই কোটি ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর উৎপাদিত হয় দুই কোটি ৭৫ লাখ মেট্রিক টন, উদ্বৃত্ত ৪০ লাখ মেট্রিক টন। কিছু ধান রাখতে হয়েছে বীজ হিসেবে, আর কিছু চাল পরিবহন ও অন্যান্য সময় নষ্ট হয়। দেখা যায়, চালের চাহিদা ও উৎপাদন প্রায় সমান-সমান। আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে সরকার চাল আমদানি করে হাতে রাখে। এ অবস্থায় আলু বেশি খেয়ে কিছু চাল বাঁচালে আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। দেশবাসীকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। অন্যদিকে, কৃষক যেন আলুর যথার্থ দাম পান, তা নিশ্চিত করতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ একান্ত কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.