শ্রদ্ধাঞ্জলি-সত্তরতম জন্মবার্ষিকীতে আবদুশ শাকুর by স্বকৃত নোমান
বঙ্গবাসী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. বিষ্ণু বেরা কথাশিল্পী আবদুশ শাকুর সম্পর্কে কলকাতার মাসিক একুশ শতক পত্রিকায় লিখেছেন, ‘অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও সূক্ষ্ম রসবোধসম্পন্ন কথাশিল্পী শাকুর তাঁর রচনাসাহিত্যে নিজেকে এবং তাঁর প্রিয় বাংলাদেশ ও পরিবর্তমান বাঙালি সমাজকে বিশ শতকের উত্তাল বিশ্ব ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে নানা রঙে নানা ভঙ্গিমায় স্থাপন করেছেন।
মনন ও অভিজ্ঞতায় এই লেখক প্রকৃত অর্থেই একজন বিশ্বনাগরিক। বাংলাদেশের নাগরিক বৃত্তের উচ্চমহল সম্বন্ধে বিশদ ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় তাঁর জীবনপাত্র উছলে উঠে এক স্বতন্ত্র মাধুরীর ছবি ফুটিয়ে তুলেছে তাঁর গল্প-উপন্যাসে, বিশেষত রমণীয় রচনার ছোটগল্পরূপ উপস্থাপনায়। মানুষের প্রতি গভীর ভালবাসা, সংসারের তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনাকে গভীর অন্তর্দৃষ্টির সাহায্যে অসামান্য তাৎপর্যময় করে তোলা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ উপস্থাপনার নির্মোহ দার্শনিকতা তাঁর রচনাকে একান্তই নিজস্ব করে তুলেছে।’
ড. বিষ্ণু বেরার উক্তি মোটেই বাহুল্য নয়। গত দশকের শুরুর দিকে আবদুশ শাকুরের ‘কাঁটাতে গোলাপও থাকে’ শীর্ষক স্মৃতিচারণামূলক একটি লেখা পড়ে দারুণ মুগ্ধ হয়েছিলাম। এই কারণে যে তিনি কঠিন একটি কথাকে রসিয়ে-তারিয়ে হাস্যরসের ধারা সৃষ্টি করে যেভাবে সহজ করে তোলেন, তাতে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। লেখাটির সূত্রে জানা গেল, তাঁর জন্মগ্রাম নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার রামেশ্বরপুর। জন্মগ্রহণ করেছেন ঐতিহ্যবাহী আলেম পরিবারে। পিতা মকবুল আহমাদ ও মাতা ফায়জুন্নিসা।
‘কাঁটাতে গোলাপও থাকে’-এর এক স্থানে জন্মভূমির পরিচয় দিতে গিয়ে আবদুশ শাকুর লেখেন: ‘কণ্ঠে ভাষা ও ছন্দ ফুটে উঠতেই আমাকে জানতে হলো যে আমি “স্বনামঘৃণ্য” একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষ এবং অবোধ্য এক উপভাষাভাষী।’ কারণ, ১৯৪১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি যে জেলার যে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেখানকার মানুষদের বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ একটু ‘ঘৃণা’র চোখেই দেখে বৈকি! জন্মজেলাকে ‘স্বনামঘৃণ্য’ বলে লেখক যে একটু রসের সৃষ্টি করতে চেয়েছেন, তা বেশ টের পাওয়া যায়। তবে আমাদের কাছে তিনি স্বনামধন্য।
নিসর্গপ্রেমী আবদুশ শাকুরের প্রধান পরিচয়, তিনি একজন কথাশিল্পী। কথার মাধ্যমে তিনি নিরন্তর শিল্প সৃষ্টি করেন। এ সৃষ্টিকর্ম মোটেই সহজ নয়, দুরূহ। তিনি এই দুরূহ কাজের কাজি, শিল্পী। তাঁর গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা কি রসরচনায় আমরা এই শিল্পের সন্ধান পাই। রম্য বলি কি রসরচনা বলি, এ ধারার রচনাতে আবদুশ শাকুর প্রধানতম। সত্যিকারার্থে আমাদের রম্যসাহিত্য দীর্ঘদিন ধরে একটা তীব্র কাতরতার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। রম্য, অথচ পড়তে গেলে কান্না আসে! সে ক্ষেত্রে সাহিত্যের এ ধারায় আবদুশ শাকুরের বিকল্প কি আছে? আর রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ, গোলাপ-বিশেষজ্ঞ ও সংগীতজ্ঞ আবদুশ শাকুর সম্পর্কে এই নিবন্ধে না-ই বা বলা হলো।
নিজের লেখালেখি সম্পর্কে তিনি এতই সতর্ক যে প্রতিবছর মেলায় যখন তাঁর বই বের হয়, তখন তিনি প্রুফ দেখানোর জন্য কখনো প্রুফ রিডারকে পাণ্ডুলিপি দেন না, কষ্ট হলেও নিজেই দেখেন। এবং পাণ্ডুলিপির সফট কপিও প্রকাশককে হস্তান্তর করেন না, তাঁর প্রিন্টার থেকে ট্রেসিং বের করে প্রকাশকের হাতে তুলে দেন। কারণ, পাছে যদি কোনো শব্দের ওলট-পালট ঘটে যায়! এই হচ্ছে আবদুশ শাকুরের বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ লেখালেখিটা তাঁর কাছে কোনো শখের বিষয় নয়, জীবনেরই একটি অংশ। তাঁর লেখায় শব্দচয়ন, বাক্যের গঠন ও বক্তব্যের মেজাজে মুনশিয়ানা অগ্রসর পাঠকেরাই কেবল ধরতে পারেন। তাঁর চর্চিত ভাষা নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় বটে।
আবদুশ শাকুরের প্রবন্ধ মানেই নতুন কিছু, নতুন আস্বাদ, নতুন অভিজ্ঞতা। যে বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রবন্ধ রচনা করেন, সে বিষয়টাকে বিশ্লেষণ করেন বৈশ্বিক জ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে। অর্থাৎ একককে বিশ্লেষণ করেন সমগ্র দিয়ে। ফলে তাঁর প্রতিটি প্রবন্ধ হয়ে ওঠে তথ্য ও তত্ত্ববহুল, অথচ সুখপাঠ্য। কারণ, একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে লিখলেও তিনি কেবল তাতেই স্থির থাকেন না, জ্ঞানের বিভিন্ন উপাদানকে বিষয়ের সঙ্গে একাঙ্গীকরণে তাঁর দক্ষতা অভিভূত হওয়ার মতো। তাঁর প্রতিটি প্রবন্ধই বিষয়, ভাষা ও শৈলীর দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মননশীল পাঠকের জন্য তৃপ্তিদায়ক, প্রজ্ঞার উৎকর্ষের সহায়ক। যেসব বিষয় নিয়ে তিনি প্রবন্ধ লেখেন, সেসব বিষয়কেন্দ্রিক প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যে দুর্লভই বলা চলে। পাঠেই বোঝা যাবে, এমন পরিশ্রমলব্ধ কাজ একমাত্র জ্ঞানযোগী আবদুশ শাকুরের পক্ষেই সম্ভব।
অপরদিকে, তিনি শুধু বাংলা ভাষাবিদই নন, একই সঙ্গে প্রাচ্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষাতেও—আরবি, ফারসি, উর্দু—সমান দক্ষ। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে ইংরেজি ভাষাতে তাঁর দক্ষতা তো আছেই। ফলে ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিকের বাইরে তাঁর আরেক পরিচয়—তিনি বহুভাষাবিদ।
তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে—উপন্যাস: ক্রাইসিস, সহে না চেতনা, উত্তর-দক্ষিণ সংলাপ, সংলাপ, ভালোবাসা। ছোটগল্প: ক্ষীয়মাণ, ধস, বিচলিত প্রার্থনা, গল্পসমগ্র, আঘাত, শারীর, এপিটাফ, শ্রেষ্ঠ গল্প, নির্বাচিত গল্প। প্রবন্ধ: মহামহিম রবীন্দ্রনাথ, সঙ্গীত সংবিৎ, গোলাপ সংগ্রহ, সমাজ ও সমাজ বিজ্ঞান, পরম্পরাহীন রবীন্দ্রনাথ, সংগীত বিচিত্রা, সংগীত সংগীত, আবদুশ শাকুরের শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ, মহান শ্রোতা, ভাষা ও সাহিত্য, চুয়াত্তরের কড়চা। রম্য: ভেজাল বাঙালী, রসিক বাঙালী, নির্বাচিত রম্যরচনা, নির্বাচিত কড়চা, রম্যসমগ্র। স্মৃতিকথা: কাঁটাতে গোলাপও থাকে ইত্যাদি। এ ছাড়া সম্পাদনাতেও রয়েছে তাঁর খ্যাতি। সম্পাদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: পরশুরামের সেরা হাসির গল্প ও শ্রেষ্ঠগল্প, বাংলা সাহিত্যের নির্বাচিত রমণীয় রচনা, ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের সেরা রম্যরচনা, শিবরাম চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ গল্প ও মজার গল্প ইত্যাদি।
ছোটগল্পে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর গল্পসমগ্র গ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২০০৩ সালের অমিয়ভূষণ পুরস্কার লাভ করেন। গোলাপ সংগ্রহ-এর জন্য মননশীল শাখায় প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার পান ২০০৪ সালে, সমগ্র সাহিত্যকর্মের জন্য অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার পান ২০০৮ সালে আর শ্রুতি সাংস্কৃতিক অ্যাকাডেমি পুরস্কার ২০১১।
সত্তর বছর বয়সেও তিনি লেখালেখিতে সমান সক্রিয়। উন্মোচন করে চলেছেন প্রজ্ঞার নতুন নতুন দিক। জ্ঞানের দ্বার উন্মোচনের জন্য তাঁর রচনাপাঠের বিকল্প নেই। ৭০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই বিদগ্ধ পণ্ডিত, ভাষাবিদ ও কথাশিল্পীকে আমাদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
ড. বিষ্ণু বেরার উক্তি মোটেই বাহুল্য নয়। গত দশকের শুরুর দিকে আবদুশ শাকুরের ‘কাঁটাতে গোলাপও থাকে’ শীর্ষক স্মৃতিচারণামূলক একটি লেখা পড়ে দারুণ মুগ্ধ হয়েছিলাম। এই কারণে যে তিনি কঠিন একটি কথাকে রসিয়ে-তারিয়ে হাস্যরসের ধারা সৃষ্টি করে যেভাবে সহজ করে তোলেন, তাতে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। লেখাটির সূত্রে জানা গেল, তাঁর জন্মগ্রাম নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার রামেশ্বরপুর। জন্মগ্রহণ করেছেন ঐতিহ্যবাহী আলেম পরিবারে। পিতা মকবুল আহমাদ ও মাতা ফায়জুন্নিসা।
‘কাঁটাতে গোলাপও থাকে’-এর এক স্থানে জন্মভূমির পরিচয় দিতে গিয়ে আবদুশ শাকুর লেখেন: ‘কণ্ঠে ভাষা ও ছন্দ ফুটে উঠতেই আমাকে জানতে হলো যে আমি “স্বনামঘৃণ্য” একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষ এবং অবোধ্য এক উপভাষাভাষী।’ কারণ, ১৯৪১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি যে জেলার যে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেখানকার মানুষদের বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ একটু ‘ঘৃণা’র চোখেই দেখে বৈকি! জন্মজেলাকে ‘স্বনামঘৃণ্য’ বলে লেখক যে একটু রসের সৃষ্টি করতে চেয়েছেন, তা বেশ টের পাওয়া যায়। তবে আমাদের কাছে তিনি স্বনামধন্য।
নিসর্গপ্রেমী আবদুশ শাকুরের প্রধান পরিচয়, তিনি একজন কথাশিল্পী। কথার মাধ্যমে তিনি নিরন্তর শিল্প সৃষ্টি করেন। এ সৃষ্টিকর্ম মোটেই সহজ নয়, দুরূহ। তিনি এই দুরূহ কাজের কাজি, শিল্পী। তাঁর গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা কি রসরচনায় আমরা এই শিল্পের সন্ধান পাই। রম্য বলি কি রসরচনা বলি, এ ধারার রচনাতে আবদুশ শাকুর প্রধানতম। সত্যিকারার্থে আমাদের রম্যসাহিত্য দীর্ঘদিন ধরে একটা তীব্র কাতরতার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। রম্য, অথচ পড়তে গেলে কান্না আসে! সে ক্ষেত্রে সাহিত্যের এ ধারায় আবদুশ শাকুরের বিকল্প কি আছে? আর রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ, গোলাপ-বিশেষজ্ঞ ও সংগীতজ্ঞ আবদুশ শাকুর সম্পর্কে এই নিবন্ধে না-ই বা বলা হলো।
নিজের লেখালেখি সম্পর্কে তিনি এতই সতর্ক যে প্রতিবছর মেলায় যখন তাঁর বই বের হয়, তখন তিনি প্রুফ দেখানোর জন্য কখনো প্রুফ রিডারকে পাণ্ডুলিপি দেন না, কষ্ট হলেও নিজেই দেখেন। এবং পাণ্ডুলিপির সফট কপিও প্রকাশককে হস্তান্তর করেন না, তাঁর প্রিন্টার থেকে ট্রেসিং বের করে প্রকাশকের হাতে তুলে দেন। কারণ, পাছে যদি কোনো শব্দের ওলট-পালট ঘটে যায়! এই হচ্ছে আবদুশ শাকুরের বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ লেখালেখিটা তাঁর কাছে কোনো শখের বিষয় নয়, জীবনেরই একটি অংশ। তাঁর লেখায় শব্দচয়ন, বাক্যের গঠন ও বক্তব্যের মেজাজে মুনশিয়ানা অগ্রসর পাঠকেরাই কেবল ধরতে পারেন। তাঁর চর্চিত ভাষা নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় বটে।
আবদুশ শাকুরের প্রবন্ধ মানেই নতুন কিছু, নতুন আস্বাদ, নতুন অভিজ্ঞতা। যে বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রবন্ধ রচনা করেন, সে বিষয়টাকে বিশ্লেষণ করেন বৈশ্বিক জ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে। অর্থাৎ একককে বিশ্লেষণ করেন সমগ্র দিয়ে। ফলে তাঁর প্রতিটি প্রবন্ধ হয়ে ওঠে তথ্য ও তত্ত্ববহুল, অথচ সুখপাঠ্য। কারণ, একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে লিখলেও তিনি কেবল তাতেই স্থির থাকেন না, জ্ঞানের বিভিন্ন উপাদানকে বিষয়ের সঙ্গে একাঙ্গীকরণে তাঁর দক্ষতা অভিভূত হওয়ার মতো। তাঁর প্রতিটি প্রবন্ধই বিষয়, ভাষা ও শৈলীর দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মননশীল পাঠকের জন্য তৃপ্তিদায়ক, প্রজ্ঞার উৎকর্ষের সহায়ক। যেসব বিষয় নিয়ে তিনি প্রবন্ধ লেখেন, সেসব বিষয়কেন্দ্রিক প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যে দুর্লভই বলা চলে। পাঠেই বোঝা যাবে, এমন পরিশ্রমলব্ধ কাজ একমাত্র জ্ঞানযোগী আবদুশ শাকুরের পক্ষেই সম্ভব।
অপরদিকে, তিনি শুধু বাংলা ভাষাবিদই নন, একই সঙ্গে প্রাচ্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষাতেও—আরবি, ফারসি, উর্দু—সমান দক্ষ। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে ইংরেজি ভাষাতে তাঁর দক্ষতা তো আছেই। ফলে ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিকের বাইরে তাঁর আরেক পরিচয়—তিনি বহুভাষাবিদ।
তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে—উপন্যাস: ক্রাইসিস, সহে না চেতনা, উত্তর-দক্ষিণ সংলাপ, সংলাপ, ভালোবাসা। ছোটগল্প: ক্ষীয়মাণ, ধস, বিচলিত প্রার্থনা, গল্পসমগ্র, আঘাত, শারীর, এপিটাফ, শ্রেষ্ঠ গল্প, নির্বাচিত গল্প। প্রবন্ধ: মহামহিম রবীন্দ্রনাথ, সঙ্গীত সংবিৎ, গোলাপ সংগ্রহ, সমাজ ও সমাজ বিজ্ঞান, পরম্পরাহীন রবীন্দ্রনাথ, সংগীত বিচিত্রা, সংগীত সংগীত, আবদুশ শাকুরের শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ, মহান শ্রোতা, ভাষা ও সাহিত্য, চুয়াত্তরের কড়চা। রম্য: ভেজাল বাঙালী, রসিক বাঙালী, নির্বাচিত রম্যরচনা, নির্বাচিত কড়চা, রম্যসমগ্র। স্মৃতিকথা: কাঁটাতে গোলাপও থাকে ইত্যাদি। এ ছাড়া সম্পাদনাতেও রয়েছে তাঁর খ্যাতি। সম্পাদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: পরশুরামের সেরা হাসির গল্প ও শ্রেষ্ঠগল্প, বাংলা সাহিত্যের নির্বাচিত রমণীয় রচনা, ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের সেরা রম্যরচনা, শিবরাম চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ গল্প ও মজার গল্প ইত্যাদি।
ছোটগল্পে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর গল্পসমগ্র গ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২০০৩ সালের অমিয়ভূষণ পুরস্কার লাভ করেন। গোলাপ সংগ্রহ-এর জন্য মননশীল শাখায় প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার পান ২০০৪ সালে, সমগ্র সাহিত্যকর্মের জন্য অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার পান ২০০৮ সালে আর শ্রুতি সাংস্কৃতিক অ্যাকাডেমি পুরস্কার ২০১১।
সত্তর বছর বয়সেও তিনি লেখালেখিতে সমান সক্রিয়। উন্মোচন করে চলেছেন প্রজ্ঞার নতুন নতুন দিক। জ্ঞানের দ্বার উন্মোচনের জন্য তাঁর রচনাপাঠের বিকল্প নেই। ৭০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই বিদগ্ধ পণ্ডিত, ভাষাবিদ ও কথাশিল্পীকে আমাদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
No comments