সমুদ্রসম্পদ আহরণ-বঙ্গোপসাগর কমিশন সময়ের দাবি
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সমুদ্রসীমা যে কেবল আত্মবিশ্বাস বাড়ায় না, সম্ভাবনারও সোনালি রেখা হয়ে উঠতে পারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বঙ্গোপসাগরের সম্পদরাজির তালিকা প্রণয়ন তারই প্রমাণ। এর আগেও বিরোধপূর্ণ সমুদ্র এলাকায় আমরা তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ব্লক ঘোষণা করেছিলাম। সেগুলো নিয়ে আহ্বান করা দরপত্র প্রক্রিয়ায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অংশও নিয়েছিল।
আখেরে কোনো কাজ হয়নি। বরং মিয়ানমারের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কে ছন্দপতন ঘটেছিল। বঙ্গোপসাগরের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত চিহ্নিত হওয়ার পর এখন তেল-গ্যাস, মৎস্য তো বটেই; সাগরের পানি ও ভূমিতে থাকা দুর্লভ খনিজসম্পদ আহরণের কথাও আমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পারছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সময়োচিত। আমরা স্বাগত জানাই। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশ বিধৌত এই বিপুল জলরাশির পশ্চিমাঞ্চল এখনও অচিহ্নিত। ভারতের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমার বিরোধ ২০১৪ সাল নাগাদ সুরাহা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। কিন্তু সে জন্য বসে না থেকে সম্পদ আহরণের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ দূরদর্শিতারই প্রমাণ বলে আমরা মনে করি। সমকালে সোমবার প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজনীয় তহবিল, প্রযুক্তি ও জনবল প্রস্তুতের যে তাগিদ দিয়েছেন, নীতিনির্ধারকরা তা বিবেচনায় নেবেন বলে প্রত্যাশা। সমুদ্রনীতি প্রণয়নের যে দাবি উঠেছে, তাও আমলযোগ্য। একই সঙ্গে আমরা সরকারকে বলব সমুদ্র কমিশন গঠনের বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চিন্তা-ভাবনা করতে। মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পর সমকালের বিশেষ আয়োজনে সমুদ্র বিশেষজ্ঞরাও এ ব্যাপারে যথেষ্ট জোর দিয়েছেন। অস্বীকার করা যাবে না যে, বাংলাদেশের সমুদ্র অধিকার সুরক্ষায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত বিভাগ যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছে। আমাদের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের ভূমিকাও প্রশ্নাতীত। পেট্রোবাংলাও তেল-গ্যাসসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। সমুদ্র সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কথাও বলতে হবে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে সমুদ্র কমিশনের মতো একটি একচ্ছত্র প্রতিষ্ঠান (আমব্রেলা বডি) এখন সময়ের দাবি। তাহলে সমুদ্রের বিপুল সম্পদ ব্যবস্থাপনা, আহরণ ও কাজে লাগানোর কাজটি অনেক সহজ হয়ে যাবে।
No comments