ইলিয়াস নিখোঁজঃ একটি ফরেনসিক বিশ্লেষণ by অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিমুল ইসলাম
পেশায় একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ বলেই হয়ত প্রবাসীদের অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ইলিয়াস আলী কি আর ফিরে আসবেন না? বলে নেওয়া ভাল যে আমি বর্তমানে মালয়েশিয়া সরকারের অধীনে অধ্যাপক ও ফরেনসিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত আছি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছিলাম, কিন্তু টিকতে না পেরে বিদেশে পাড়ি দিয়েছি। কথাগুলো বললাম নিজেকে জাহির করার জন্য নয়; বরঞ্চ পাঠককুলকে আমার দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞতার বিষয়টি জানাতে।
একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই ঘটনার ভিতরের ঘটনা উদঘাটনে আমাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। তারপরও ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধান রহস্য আমাকে বিশেষভাবে শঙ্কিত করেছে। পরবর্তি সময়ে কার পালা সেটাই যে আমার শঙ্কার কারণ!
কে ইলিয়াস আলীকে অপহরণ করেছে? সাধারণ অপহরণকারীরা! সরকারী বাহিনী!! না তার নিজ দলেরই কেউ!!!
ঘটনার বিবরণ বিশ্লেষণে সাধারণ অপহরণকারীদের এর দায় নেই বললেই চলে, কেননা এ ধরনের হাইপ্রোফাইল অপহরণে অপহরণকারীরা মোটিভ নিয়ে অগ্রসর হয়। তাছাড়া সাধারণ অপহরণকারীরা এ উটকো ঝমেলা নিজ ঘাড়ে নেবে কেন? তাদের কি জানের ভয় ডর নেই! বিএনপি, বিরোধী দল থেকে সরকারী দলে উন্নীত হবে এ আশায বৃহত্তর সিলেটে বহু মানুষ যার দিকে তাকিয়ে আছে, সেই ইলিয়াস আলীকে নিয়ে অপহরণ অধ্যায়ই বা তারা রচনা করবে কেন?
স্থানীয় রাজনীতিতে সাইফুরের মত জাঁদরেল নেতারা যেখানে কুপোকাত ছিল, সেখানে স্থানীয় কোন্দলে তার অপহরণের চাইতে খুন হওয়ার আশংকাই কি বেশি থাকে না! আর সন্দেহের তীরের মাথায় থাকা সরকারি দলের নেতা, মন্ত্রীরা যেভাবে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাতে আমার মনে হয় না তারাও এতে জড়িত। তাহলে কে ঘটাল এই লোমহর্ষক ঘটনা! আর এ প্রশ্নই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এমন কি হতে পারে না, সরকারের ভিতর রয়েছে কঠিন স্তরের এক বলয় যেখানে সবার প্রবেশাধিকার নেই। বলয়ের বাইরে থাকা সবাইকে অন্ধকারে রেখে সেখান থেকে আসা সিদ্ধান্তসমূহ বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে তামিল হয়। এটা যদি মেনে নেওয়া যায় তাহলে অংকটা ভয়ংকর, তবে অনেকটাই মিলে যায়।
তারপরও ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তার নিয়তি অনেকগুলো ``যদি``র উপর দোদ্যুল্যমান।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তাকে অপহরণ করা হয়ে থাকলে আমরা তাকে চিরদিনের মত হারাতে পারি। রাজনীতির গতি প্রতিকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, যেই তাকে অপহরণ করে থাকুক না কেন ব্যাপারটি আর তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এ ঘটনার দায় যে স্বীকার করবে তার জন্য রাজনীতিতে টিকে থাকাই হবে কষ্টকর। প্রাথমিকভাবে চলমান রাজনীতিতে ইলিয়াস ঘুঁটির চাল হলেও এখন অপাংক্তেয়। সুরক্ষিত বলয়ে না থাকলে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে ডালভাত সরবরাহ করাও এখন দুরূহ। বিরোধী দলের আন্দোলন বেগবান হলেও তাকে আমরা চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলতে পারি। কেউ তো আর ঝুট-ঝামেলা পুষে রাখবে না। দিন যত যাবে তাকে উদ্ধারের সম্ভবনা ততই লোপ পাবে। আর তাই তাকে ছাড়ানোর স্বার্থে কোনো শর্ত আরোপিত হলে তা মেনে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
একটি ক্ষেত্রে সাগর-রুনী অথবা ইলিয়াস আলী-আনসারের অর্ন্তধানে ``কপিবুক-মিল`` পাওয়া যায়। দুটো ক্ষেত্রেই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের চেয়ে আলামত নষ্টের প্রতিযোগিতা লক্ষ্যণীয়। মেডিকেল সায়েন্সের যে বিষয় ঘটনা উদঘাটনে ভুমিকা রাখবে সেই ফরেনসিক সায়েন্স আজ অবহেলিত! সরকারি বলুন আর বিরোধীই বলুন কারো তাতে মাথাব্যথা নেই। তারা ভালভাবেই জানেন, ফরেনসিক সায়েন্সের প্রসার ঘটলে তাদের কুকীর্তিই ফাঁস হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের ভাবনা কি তাদের আছে?
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! যে রাজনৈতিক দল বিশেষ বাহিনী গঠন করে আর বিশেষ ক্ষমতা আইন দিয়ে ক্ষমতা পাকা পোক্ত করতে চেয়েছে, তারাই ওই বাহিনী আর বিশেষ ক্ষমতা আইনের মার প্যাঁচে সব চাইতে বেশি নিগৃহীত হয়েছে। র্যাব সৃষ্টিকারীরা র্যাবের হাতেই সবচাইতে বেশি নিগৃহীত হবেন, তাতে অবাক হওয়ার কি আছে!
অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিমুল ইসলাম, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ
nasimul@salam.uitm.edu.my
কে ইলিয়াস আলীকে অপহরণ করেছে? সাধারণ অপহরণকারীরা! সরকারী বাহিনী!! না তার নিজ দলেরই কেউ!!!
ঘটনার বিবরণ বিশ্লেষণে সাধারণ অপহরণকারীদের এর দায় নেই বললেই চলে, কেননা এ ধরনের হাইপ্রোফাইল অপহরণে অপহরণকারীরা মোটিভ নিয়ে অগ্রসর হয়। তাছাড়া সাধারণ অপহরণকারীরা এ উটকো ঝমেলা নিজ ঘাড়ে নেবে কেন? তাদের কি জানের ভয় ডর নেই! বিএনপি, বিরোধী দল থেকে সরকারী দলে উন্নীত হবে এ আশায বৃহত্তর সিলেটে বহু মানুষ যার দিকে তাকিয়ে আছে, সেই ইলিয়াস আলীকে নিয়ে অপহরণ অধ্যায়ই বা তারা রচনা করবে কেন?
স্থানীয় রাজনীতিতে সাইফুরের মত জাঁদরেল নেতারা যেখানে কুপোকাত ছিল, সেখানে স্থানীয় কোন্দলে তার অপহরণের চাইতে খুন হওয়ার আশংকাই কি বেশি থাকে না! আর সন্দেহের তীরের মাথায় থাকা সরকারি দলের নেতা, মন্ত্রীরা যেভাবে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাতে আমার মনে হয় না তারাও এতে জড়িত। তাহলে কে ঘটাল এই লোমহর্ষক ঘটনা! আর এ প্রশ্নই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এমন কি হতে পারে না, সরকারের ভিতর রয়েছে কঠিন স্তরের এক বলয় যেখানে সবার প্রবেশাধিকার নেই। বলয়ের বাইরে থাকা সবাইকে অন্ধকারে রেখে সেখান থেকে আসা সিদ্ধান্তসমূহ বিশেষ বাহিনীর মাধ্যমে তামিল হয়। এটা যদি মেনে নেওয়া যায় তাহলে অংকটা ভয়ংকর, তবে অনেকটাই মিলে যায়।
তারপরও ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে তার নিয়তি অনেকগুলো ``যদি``র উপর দোদ্যুল্যমান।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তাকে অপহরণ করা হয়ে থাকলে আমরা তাকে চিরদিনের মত হারাতে পারি। রাজনীতির গতি প্রতিকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, যেই তাকে অপহরণ করে থাকুক না কেন ব্যাপারটি আর তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এ ঘটনার দায় যে স্বীকার করবে তার জন্য রাজনীতিতে টিকে থাকাই হবে কষ্টকর। প্রাথমিকভাবে চলমান রাজনীতিতে ইলিয়াস ঘুঁটির চাল হলেও এখন অপাংক্তেয়। সুরক্ষিত বলয়ে না থাকলে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে ডালভাত সরবরাহ করাও এখন দুরূহ। বিরোধী দলের আন্দোলন বেগবান হলেও তাকে আমরা চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলতে পারি। কেউ তো আর ঝুট-ঝামেলা পুষে রাখবে না। দিন যত যাবে তাকে উদ্ধারের সম্ভবনা ততই লোপ পাবে। আর তাই তাকে ছাড়ানোর স্বার্থে কোনো শর্ত আরোপিত হলে তা মেনে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
একটি ক্ষেত্রে সাগর-রুনী অথবা ইলিয়াস আলী-আনসারের অর্ন্তধানে ``কপিবুক-মিল`` পাওয়া যায়। দুটো ক্ষেত্রেই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের চেয়ে আলামত নষ্টের প্রতিযোগিতা লক্ষ্যণীয়। মেডিকেল সায়েন্সের যে বিষয় ঘটনা উদঘাটনে ভুমিকা রাখবে সেই ফরেনসিক সায়েন্স আজ অবহেলিত! সরকারি বলুন আর বিরোধীই বলুন কারো তাতে মাথাব্যথা নেই। তারা ভালভাবেই জানেন, ফরেনসিক সায়েন্সের প্রসার ঘটলে তাদের কুকীর্তিই ফাঁস হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের ভাবনা কি তাদের আছে?
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! যে রাজনৈতিক দল বিশেষ বাহিনী গঠন করে আর বিশেষ ক্ষমতা আইন দিয়ে ক্ষমতা পাকা পোক্ত করতে চেয়েছে, তারাই ওই বাহিনী আর বিশেষ ক্ষমতা আইনের মার প্যাঁচে সব চাইতে বেশি নিগৃহীত হয়েছে। র্যাব সৃষ্টিকারীরা র্যাবের হাতেই সবচাইতে বেশি নিগৃহীত হবেন, তাতে অবাক হওয়ার কি আছে!
অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিমুল ইসলাম, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ
nasimul@salam.uitm.edu.my
No comments