বিদ্যুৎ উধাও by আসিফ আহমেদ

'একে গরমে রক্ষে নেই। তার উপরে বিদ্যুৎ উধাও! লোডশেডিং বলা হোক বা বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। ঘর্মাক্ত ভুক্তভোগীদের কাছে ফল একই_ দ্বিগুণ দহন-যন্ত্রণা।' সোমবার ভারতের বহুল প্রচারিত আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনের শুরু ছিল এভাবেই। এর শিরোনাম : 'উধাও বিদ্যুৎ, দহন-জ্বালা দ্বিগুণ'।


বাংলাদেশের চিত্রের সঙ্গে কোনো পার্থক্য আছে কি?
রোববার ঢাকার বাইরে বরিশালের একটি এলাকায় ছিলাম। উপজেলা হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ বেশিরভাগ সময় থাকে না, প্রকৃতপক্ষে মাঝে মধ্যে আসে। রোগীদের কষ্ট অশেষ। তার হাসপাতালের একটি জেনারেটর আছে ৩০ কিলোওয়াট ক্ষমতার। কিন্তু দিনে-রাতে এতটা সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না যে, জেনারেটরটি ডিজেল ব্যবহার করে চালিয়ে রাখা কঠিন।
আরেকটি প্রতিবেদন দেখুন, যা প্রকাশিত হয়েছে পাকিস্তানের ডন পত্রিকায়। এতে বলা হয় : 'একনাগাড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ফিলিং স্টেশনগুলোতে জ্বালানির রেশন চলছে। পরিস্থিতি বাধ্য করছে ঘরে ঘরে ও ব্যবসাকেন্দ্রে ব্যয়বহুল জেনারেটর ব্যবহার করতে।'
বাংলাদেশের পরিস্থিতির সঙ্গে মেলে কি?
আনন্দবাজার লিখেছে : 'বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল না। রোববার একই ঘটনা ঘটল উত্তর কলকাতা এবং উত্তর শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকায়। বাড়ির বাইরে তীব্র গরম। সন্ধ্যাতেও গরম বাতাস। পাখা চালিয়ে ঘরে বসে থাকলে যে একটু স্বস্তি মিলবে, উপায় নেই তারও। কারণ বিদ্যুৎই যে পলাতক! পাখা ঘুরবে কিসে? অগত্যা ছুটির দিনের সন্ধ্যায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা ঘরের মধ্যেও প্রায় নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হলো মহানগরীর বড় অংশের মানুষকে। রাত পৌনে ১১টা নাগাদ আরও এক দফা বিদ্যুৎ চলে যায় দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। বাদ যায়নি সল্টলেকও। সেখানকার বিভিন্ন অঞ্চলে রাত ৯টা থেকে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল না।'
এবার গরমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মানুষকে আর লোডশেডিংয়ের কষ্ট পেতে হবে না বলে সম্প্রতি দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কলকাতাবাসীর একটা বড় অংশের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। গরম পড়তে না পড়তেই 'লোডশেডিং' হানা দিয়েছে খাস কলকাতাতেই। তবে বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা এটাকে 'লোডশেডিং' বলতে রাজি নন। তারা বলছেন, এটা বিদ্যুৎ বিভ্রাট। বৃহস্পতিবার বা রোববার, কোনো দিনই বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো ঘাটতি ছিল না। কিন্তু স্বাভাবিক উৎপাদন সত্ত্বেও বিদ্যুৎ সবার কাছে পেঁৗছে দেওয়া যায়নি বিভ্রাটের কারণে।
পাকিস্তানের ডন লিখেছে : 'শিয়ালকোট হাতের সেলাইয়ের চামড়ার ফুটবলের জন্য সুপরিচিত। কিন্তু এখন বিদ্যুতের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ বন্ধ থাকে। ব্যবসায়ী আসাদ বাজওয়া বলেন, বিদেশিরা তার কারখানা পরিদর্শনে আসতে চায় না। অর্ডার ৪০ শতাংশ কমে গেছে।'
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সংকটে জেরবার। মহাজোট সরকার দাবি করছে, তিন বছরে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তারা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করেছে এবং এটা বড় সাফল্য। কিন্তু বাস্তবে বিদ্যুৎ নিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই। লোডশেডিং নাকি বিদ্যুৎ বিভ্রাট, এ নিয়ে খুব একটা বিতর্ক নেই। আসলেই চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। ফলে অবশ্যম্ভাবী লোডশেডিং। শহর ও গ্রাম সর্বত্র চিত্র অভিন্ন। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেছিলেন, মার্চ মাসটা একটু কষ্ট করতে। কারণ এ সময়ে বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি দিতে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হবে। কিন্তু প্রকৃতি এ বছর উদারতা দেখিয়েছে। চৈত্র-বৈশাখে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় সেচের প্রয়োজন কম ছিল। কৃষকের সেচ খরচ খানিকটা বেঁচে গেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ পরিস্থিতি যে তিমিরে সেই তিমিরেই। আঁধার যে আর কাটছে না। আমাদের একটাই সান্ত্বনা_ প্রতিবেশীরাও ভালো নেই। বিদ্যুৎ এখানে-সেখানে উধাও হওয়ায় দহন-যন্ত্রণা সর্বত্রই। কবে তা দূর হবে? নাকি কেবলই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাওয়া হবে?

No comments

Powered by Blogger.