প্রধানমন্ত্রী আগলে রাখতে চাইলেও দূরে সরে গেছেন তিনি by আশরাফুল হক রাজীব

মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার ইস্তফাপত্র কার্যকর করার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সোহেল তাজের অবস্থানপত্র তৈরি করছিল। তবে এ অবস্থান জানার আগেই সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দিলেন তিনি। এ ঘটনায় সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। জেলহত্যার শিকার চার নেতার অন্য সন্তানদের মতো সোহেল তাজকেও সব সময় আগলে রাখতে চাইতেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


কিন্তু এমপিত্ব ছেড়ে দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত আর পারলেন না তিনি। সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ ধরনের খবর কোনো দলের জন্যই প্রত্যাশিত নয়। তার পরও পদত্যাগ সোহেল তাজের ব্যক্তিগত বিষয়। বিদেশে অবস্থানের কারণে তিনি হয়তো তাঁর নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাজে আসতে পারছিলেন না। সে কারণেও তিনি এ ধরনের সিদ্ধান্তে আসতে পারেন।'

এক প্রশ্নের জবাবে মতিয়া চৌধুরী বলেন, 'সোহেল তাজের যদি তাঁর পিতার দলের প্রতি ও তাঁর নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা না থাকে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। চার নেতার সন্তানদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মমত্ববোধের কোনো কমতি নেই। তিনি সব সময় তাঁদের প্রতি দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেন।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিসভার এক সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, জেলহত্যার শিকার চার নেতার সন্তানদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সীমাহীন মমত্ববোধ। এ কারণেই সোহেল তাজের ইমোশনকে আমলে নিতে চাননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বারবার তাঁকে কাছে টেনেছেন। কিন্তু বারবারই সোহেল তাজ তাঁকে এড়িয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত সংসদ সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি আরো দূরে সরে গেলেন।

মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার তিন বছর পরও সোহেল তাজের ব্যাংক হিসাবে প্রতিমন্ত্রীর বেতন-ভাতা জমা হতে থাকায় গত ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি চিঠি দেন তাজ। চিঠিতে ব্যাংক হিসাবে বেতন-ভাতা পাঠানো বন্ধ করাসহ তাঁর পদত্যাগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারিরও আবেদন জানান তিনি। তাঁর এ চিঠি পাওয়ার পরের দিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সার-সংক্ষেপে সোহেল তাজকে একটি ডিও লেটার পাঠিয়ে সরকারে তাঁর অবস্থান জানানোর প্রস্তাব ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফরে কাতার চলে যাওয়ায় ডিও লেটার পাঠাতে বিলম্ব হয়। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এলেই তাঁকে ডিও লেটার পাঠানোর কথা ছিল।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূইঞা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা এখনো সোহেল তাজকে ডিও লেটার পাঠাইনি। তাঁর আগেই তিনি পদত্যাগ করলে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এখন সংসদের স্পিকারের চিঠির জন্য অপেক্ষা করছি।'

২০০৮ সালের নির্বাচনে গাজীপুর-৪ কাপাসিয়া আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেও ২০০৯ সালের ৩১ মে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। তবে সে সময় রাষ্ট্রপতি তা 'গ্রহণ করেননি' বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

পদত্যাগের পরও সোহেল তাজের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। তাঁর প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে দপ্তরবিহীন প্রতিমন্ত্রী করেন। সোহেল তাজ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বিভিন্ন সময় দেশে এলেও তিনি কোনো প্রটোকল নেননি। তিনি প্রত্যাখ্যান করলেও সরকারের তরফ থেকে তাঁকে বারবার প্রটোকল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে সোহেল তাজ তাঁর ব্যাংক হিসাবে সরকারের বেতন-ভাতা প্রদান বন্ধ করার জন্য চিঠি লিখলে সরকার নতুন করে ভাবতে থাকে। তাড়াহুড়া না করে চিন্তাভাবনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই প্রধানমন্ত্রী কাতার সফরে যাওয়ার আগে কোনো সার-সংক্ষেপ অনুমোদন করেননি বলে মনে করছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা।

No comments

Powered by Blogger.