মৃত্যুগুলো দুর্ঘটনা নয়, বহুপক্ষীয় গাফিলতির ফল-রেলক্রসিংয়ের মৃত্যুফাঁদ

ট্রেন-বাস এক পথে চলে না, সেহেতু তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটার সুযোগ অতি সামান্য। তা হলেও উভয় যানের গতিপথ স্থানে স্থানে পরস্পরকে কাটাকুটি করে যায় বলে সেই স্থানগুলোতে বিপদের ঝুঁকি থাকে। এই ঝুঁকি এড়াতেই অধিকাংশ রেলক্রসিংয়ে প্রতিবন্ধক বসানো থাকে, তা কার্যকর করার জন্য একজন লাইনম্যানও থাকেন।


সুতরাং রেলক্রসিংয়ে অঘটনকে দুর্ঘটনা বলার সুযোগ কম। গত শনিবার যশোর ও কুমিল্লায় রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষে ১২ জনের মৃত্যুও পরিষ্কারভাবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের গাফিলতির ফল। মুখ্য দায় রেল বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের সড়ক বিভাগকেই নিতে হবে।
ট্রেন রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় রেলগেটে প্রতিবন্ধক থাকবে, এটাই ট্রেনচালকের জানার কথা। লাইনম্যানেরও ট্রেন আসার সময়টি জানা থাকে এবং সময়মতো প্রতিবন্ধক নামিয়ে অন্য যান চলাচল বন্ধ করার দায়িত্বটিও একান্তই তাঁর। যশোরের রাজারহাট রেলক্রসিংয়ের লাইনম্যান ট্রেন আসার শব্দ শুনতে পাবেন না কেন? কেনই বা তিনি সময়টি ভুলে গেলেন? কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার রেলক্রসিংয়ের কোনো অনুমোদনই ছিল না। তাই বাসচালকের নিজেরই সতর্ক থাকার দরকার ছিল। কিন্তু সতর্কতা দূরের কথা, তারা প্রায়শই বেপরোয়া। মৃত্যু দিয়ে এরই খেসারত দিলেন ১২ জন এবং আহত হলেন অনেকে।
প্রত্যক্ষের পাশাপাশি পরোক্ষ দায়গুলোও চিহ্নিত হওয়া প্রয়োজন। অবকাঠামো ও মানুষপিছু সরকারের অনেক সংস্থা আছে, আছেন অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে এত ছোট সমস্যায় এত বড় মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারার কথা নয়। দ্বিতীয়ত, রেল বিভাগকে বহু বছর হলো তহবিল ও লোকবল—সব দিক থেকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি রেলে সংস্কার শুরু হয়েছে এবং তহবিলও জোগানো হয়েছে। তার পরও রেল বিভাগে যে গতি আসেনি, অনুমোদনহীন রেলক্রসিং ও লাইনম্যানের দায়িত্বে অবহেলা তার প্রমাণ। এই দুটি অবহেলা ঘটতে পারত না, যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট থাকত। তাই যেকোনো দুর্ঘটনায় নিম্নপদস্থ কারও ঘাড়ে সব দায়ভার চাপিয়ে বাকিদের খালাস নেওয়া আমরা দেখতে চাই না। সব জীবনই অমূল্য, সব মৃত্যুই মারাত্মক। তাই যথাযথ তদন্ত করে বিচার হোক। রেল ও সড়ক যোগাযোগকে নিরাপদ করায় লাগাতার অবহেলাও আর সওয়া যায়না।

No comments

Powered by Blogger.