পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী পদে গিলানিকে এবার অযোগ্যই ঘোষণা

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে ইউসুফ রাজা গিলানিকে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে সংসদ সদস্য হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনকেও অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ইফতিখার চৌধুরীর নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টে তিন সদস্যের বেঞ্চ এই রায় দেন।


দুই মাস আগে আদালত অবমাননার অভিযোগে গিলানিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এরপর গতকাল তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদেই অযোগ্য ঘোষণা করলেন সুপ্রিম কোর্ট।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় অবশ্য মেনে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। গতকালই জরুরি বৈঠকে বসে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছে দলটি। আজ বুধবার পার্লামেন্টের অধিবেশন ডেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্র মতে, বস্ত্রমন্ত্রী মাখদুম শাহবুদ্দিন, পানি ও বিদ্যুৎমন্ত্রী চৌধুরী আহমেদ মুখতার ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী খুরশিদ শাহ- এই তিনজনের মধ্যে একজনকে প্রধানমন্ত্রী পদে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
রায় ঘোষণাকালে প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালত অবমাননা মামলার রায়ের বিরুদ্ধে এখনো কোনো আপিল নথিভুক্ত হয়নি। সুতরাং সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানি মজলিশ-এ-শুরার (পার্লামেন্ট) সদস্য থাকার যোগ্য নন। ইফতিখার বলেন, 'তিনি (গিলানি) আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নন। প্রধানমন্ত্রীর পদটি এখন শূন্য। এই রায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও গিলানির উপস্থিতি অবৈধ হবে।'
নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের উদ্যোগ নিতেও প্রেসিডেন্টকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। প্রধান বিচারপতি ছাড়া ওই বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি জাওয়াদ এস খাজা ও বিচারপতি খিলজি আরিফ হোসাইন। মজলিশ-এ-শুরার স্পিকার ড. ফাহমিদা মির্জার করা রুলের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি পিটিশনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল আদালত এ রায় দেন।
এই অবস্থায় গিলানি এখন কী পদক্ষেপ নেবেন, তা স্পষ্ট নয়। এই রায় সরকারের পতন ডেকে আনবে কি না, তাও এখনই বলতে পারছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে গিলানির জায়গায় নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করার মতো মজলিশ-এ-শুরায় পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে পিপিপির।
গতকাল রায় ঘোষণার পরই পিপিপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ইসলামাবাদে জরুরি বৈঠকে বসে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল রাতের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী পদে নতুন কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজই মজলিশ-এ-শুরার নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে পারে দলটি। দলের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন (রিভিউ পিটিশন) করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডের জরুরি সভা আহ্বান করে আজ দলীয় সব সংসদ সদস্যকে ইসলামাবাদে তলব করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থাগুলো জানায়, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির দুর্নীতির মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে গিলানিকে বলেছিলেন আদালত। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সংবিধান অনুযায়ী দায়মুক্তি পান- এই যুক্তিতে প্রেসিডেন্টের দুর্নীতি মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে সুইস কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাতে রাজি হননি গিলানি। এ জন্য আদালত অবমাননার অপরাধে গত ২৬ এপ্রিল গিলানিকে দোষী সাব্যস্ত এবং প্রতীকী সাজা প্রদান করা হয়।
এরপর গত ২৪ মে প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে অযোগ্য ঘোষণা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে জাতীয় পরিষদের রুলিং দেন স্পিকার ড. ফাহমিদা মির্জা। পরে ওই রুলিং চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দুটি পিটিশন দায়ের করে মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ও ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ। পিটিশনে গিলানি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারেন কি না তা জানতে চাওয়া হয়। দুটি পিটিশনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল প্রধানমন্ত্রীকে অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দেন আদালত।
রায় ঘোষণার পর অ্যাটর্নি জেনারেল ইরফান কাদির গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গিলানিকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোনো রকম সংঘাত যাতে না বাধে, সেই আশাবাদের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বিচারপতি খিলজি বলেন, আদালতের কর্তব্য হলো আইন ও সংবিধানকে সমুন্নত রাখা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনিতেই পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা লেগেই রয়েছে। এর ওপর প্রধানমন্ত্রী গিলানিকে অযোগ্য ঘোষণা করে আদালতের দেওয়া রায়ে দেশটির বিচার বিভাগ ও জাতীয় সংসদের মধ্যে নতুন করে বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, আল-জাজিরা, রয়টার্স, ডন, জিনিউজ অনলাইন।

No comments

Powered by Blogger.