বিশেষ সাক্ষাৎকার-যাঁরা দোষী তাঁদেরই শাস্তি হচ্ছে by মো. রফিকুল ইসলাম
বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. রফিকুল ইসলামের জন্ম ১৯৫৬ সালে, গাইবান্ধায়। শৈশব কেটেছে দিনাজপুরে। গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরে কমিশনপ্রাপ্ত হন।
তিনি সিগন্যাল ব্যাটালিয়নের স্টাফ এবং কমান্ড পর্যায়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১-৮২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে ‘ডিপ্লোমা ইন অনার্স অ্যাডভান্স কমিউনিকেশন কোর্স’, ১৯৮৭ সালে মালয়েশিয়ান আর্মড ফোর্সেস স্টাফ কলেজ থেকে ‘স্টাফ কোর্স’ এবং ২০০৩ সালে ভারতের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে ‘এনডিসি’ কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ইন ডিফেন্স স্টাডিজ ডিগ্রি লাভ করেন। এ বছরের ৯ মে মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলাম বিডিআরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর আগে তিনি আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক ছিলেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কামরুল হাসান
প্রথম আলো কিছুদিন আগে শেষ হওয়া বিডিআর ও বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের মতপার্থক্য লক্ষ করা গেছে। আমরা যত দূর জানি, ভারতীয় পক্ষ সীমান্তে গুলিবর্ষণ বন্ধ করতে রাজি হয়নি। দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে এটা কোনো বাধা কি না?
রফিকুল ইসলাম অবশ্যই এটা বড় বাধা। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করেছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কলকাতায় গিয়েছিলাম। আমার প্রথম আলোচ্যসূচি ছিল সীমান্তে যেন কোনো নিরীহ লোককে গুলি করে হত্যা করা না হয়। আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম, তাঁরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন। ইদানীং লক্ষ করছি, এ হার কমে এসেছে। তবে এতে আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই। আমরা চাই সীমান্তে একজন নিরপরাধ লোকও যেন বিচার ছাড়া শাস্তি না পায়। সীমান্ত নিয়ে গত বৈঠকে আমরা এ বক্তব্য খুব জোরালোভাবে তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না। আমরা বলেছি, সীমান্তে গুলি করার ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী নয় (নন-লেথাল) এমন সব অস্ত্র যেন ব্যবহার করা হয়। ওই বৈঠকের পর বিএসএফের প্রধান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সে কথাই বলেছিলেন। থিম্পুতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের বৈঠকেও এ প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছিল।
প্রথম আলো ভারত তো রাতের বেলা সীমান্তে কারফিউ জারির জোর দাবি জানিয়ে আসছে। আপনারা এ নিয়ে কী ভাবছেন?
রফিকুল ইসলাম ভারতের এ প্রস্তাব আমরা আগেই মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ প্রস্তাবের পক্ষে নই। আমি মন্ত্রণালয়ে বলেছি, কারফিউর প্রস্তাব আমরা মেনে নিতে পারি না। দেশে এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে সীমান্ত এলাকায় কারফিউ জারি করতে হবে।
প্রথম আলো তা হলে রাতে সীমান্ত অপরাধ বন্ধ হবে কী করে?
রফিকুল ইসলাম যেসব এলাকায় চোরাচালান বেশি হয়, সেসব এলাকায় আমরা টহল বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি। বিএসএফের পক্ষ থেকে চোরাচালানপ্রবণ নয়টি এলাকার তালিকা আমাদের দেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায়ই মানুষ বেশি গোলাগুলির শিকার হচ্ছে। এসব তালিকা আমরা সেক্টর ও ব্যাটালিয়নগুলোকে দিয়েছি। সেখানে বিডিআর রাতের বেলা টহল জোরদার ও চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা বলতে চাই, কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা সীমান্তে গোলাগুলি মেনে নিতে পারি না।
প্রথম আলো এ বিষয়টি কি শুধু বিডিআর ও বিএসএফের পর্যায়ে আছে, না সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়েও আলোচনা হচ্ছে?
রফিকুল ইসলাম না, এটা শুধু বিএসএফ ও বিডিআরের পর্যায়ে সীমিত নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
প্রথম আলো সীমান্তে কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও চোরাচালান হচ্ছে। বিশেষ করে মাদক ও অস্ত্র আসছে। এসব কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
রফিকুল ইসলাম যত দূর জানি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছেন সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার বন্ধের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। অস্ত্র চোরাচালানসহ সব অপরাধ বন্ধ করার কথাও তিনি বলেছেন। বিডিআর এসব বন্ধে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা ব্যর্থতা-সফলতার ব্যাপার নয়। চোরাচালান বিডিআরের একার পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রথম আলো সীমান্তের ওপারে গড়ে ওঠা ফেনসিডিল কারখানা বন্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি?
রফিকুল ইসলাম সীমান্তের আশপাশে ফেনসিডিলের কারখানা, রি-প্যাকিংয়ের কারখানা গড়ে উঠেছে। কারণ, ফেনসিডিলের তথাকথিত বাজার এ দেশে তৈরি হয়েছে। ফেনসিডিল কারখানা যেসব এলাকায়, তার একটি তালিকা আমরা দিয়েছি। বিএসএফ বলেছে, এটা তাদের কাজ নয়। তার পরও তাদের অনুরোধ করেছি, এসব কাগজপত্র যেন তারা তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বাংলাদেশের লাগোয়া রাজ্যগুলোর প্রশাসনকে পৌঁছে দেয়।
প্রথম আলো মিয়ানমারের সীমান্তে নাসাকার সঙ্গে কোনো আলোচনা কি হয়েছে?
রফিকুল ইসলাম নাসাকা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে। সেটা তাদের ভূখণ্ডে, সীমান্তের জিরো পয়েন্টের ১৫০ গজ ভেতরে। নাসাকা এটা করছে সীমান্ত দিয়ে তথাকথিত রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে। দুই দেশের সম্পর্ক ভালোর দিকে যাচ্ছে। বিডিআরের আগের মহাপরিচালক মিয়ানমার সফর করেছিলেন। সেখান থেকে একটি প্রতিনিধিদলও আসার কথা ছিল, আগামী ফেব্রুয়ারিতে সেটি আসতে পারে। ভারতের মতো তাদের সঙ্গে সীমান্তে আমাদের গোলাগুলি হয় না। তবে সীমান্তে চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে।
প্রথম আলো সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে কী করছে বিডিআর?
রফিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে তিন-চার ধরনের কার্যক্রম আছে। জেলা প্রশাসনে চোরাচালান প্রতিরোধে কমিটি কাজ করছে। উপজেলায়ও কমিটি আছে। তবে বিডিআরের একার পক্ষে চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমাদের বেকার সংখ্যা বেশি। একটি মানুষ ৫০ বোতল ফেনসিডিল আনতে পারলেই ৫০০ টাকা আয় করতে পারে। মরণপণ ঝুঁকি নিয়ে সে এসব করছে।
প্রথম আলো সীমান্ত এলাকায় হাট হচ্ছে। এটা আসলে কী কাজে লাগবে?
রফিকুল ইসলাম তিনটি স্থানে সীমান্ত হাট হচ্ছে। দুটি হবে ভারতের মেঘালয়ে, একটি আমাদের কুড়িগ্রামে। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এসব হাটের নিরাপত্তার জন্য। এ হাট কীভাবে চলবে, কোন কোন পণ্য কেনাবেচা হবে, সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখবে।
প্রথম আলো এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। বিডিআর বিদ্রোহের বিচার হচ্ছে। বিচার-প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা যাবে কি না, লঘুপাপে কারও গুরুদণ্ড হওয়ার আশঙ্কা কি আছে?
রফিকুল ইসলাম এই বিদ্রোহের দুই ধরনের বিচার হচ্ছে। যাঁরা খুন, লুটপাট করেছেন, তাঁদের বিচার হচ্ছে দেশের প্রচলিত আইনে। আর বিদ্রোহের বিচার হচ্ছে বিডিআরের নিজস্ব আইনে। বিদ্রোহের বিচারে আপনি যদি আসামির সংখ্যার কথা বলেন, তবে আমরা সেটা মেনে নিতে পারব না। যেমন, অনেক জায়গা আছে, যেখানে সবাই বিদ্রোহ করেছেন। কিন্তু আমরা তদন্তের মাধ্যমে শুধু যাঁরা দোষী ও প্রকৃত ইন্ধনদাতা, তাঁদেরই শাস্তি দিয়েছি। একজন নিরীহ লোকও শাস্তি পাননি। বিডিআরের বিচারের জন্য আদালত গঠিত হয়েছে, সেই আদালতের দায়িত্ব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
প্রথম আলো যেসব জওয়ান বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছেন, তাঁদের একটি বড় অংশ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন, বিশেষ করে ঢাকার বাইরের স্থাপনাগুলোতে। তাঁরা কি ন্যায়বিচার পাবেন?
রফিকুল ইসলাম হ্যাঁ, অনেকে বাধ্য হয়েছিলেন। বাধ্য হওয়ার কারণে যাঁরা বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিলেন, অভিযোগ থেকে আমরা তাঁদের বাদ দিয়েছি। ইতিমধ্যে ৮১ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটাও ঠিক যে অনেকে হুজুগে মেতে সেদিন অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন। যেমন, ঢাকার বাইরের বিদ্রোহের বিচারের ক্ষেত্রে ১০০ জনের বেশি আসামি আছেন মাত্র দুটি স্থানে, একটি বিডিআর প্রশিক্ষণ স্কুল, অন্যটি টেকনাফে। অন্য সব স্থানে এই আসামির সংখ্যা ১০০-এর নিচে। ধরুন, নওগাঁর বিচারের কথা। সেখানে আসামির সংখ্যা মাত্র ১০। অথচ সেখানে প্রায় সবাই অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন।
প্রথম আলো সংখ্যায় বেশি না হলেও বেশ কিছু জওয়ান বিদ্রোহের বিপক্ষে ছিলেন। অনেকে কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সহায়তা করেছেন। তাঁরা কি পুরস্কৃত হবেন?
রফিকুল ইসলাম অবশ্যই। তাঁরা সংখ্যায় কম নন, তাঁরা অনেক বেশি। তাঁদের আমরা পুরস্কৃত করছি। এটা বেশি হয়েছে ঢাকার বাইরে। তবে পিলখানার ব্যাপারটি অন্য। এখানে জঘন্য হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এখানে কেউ বিরোধিতা করেননি।
প্রথম আলো বাধ্য হয়ে যাঁরা বিদ্রোহে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হচ্ছে কি না।
রফিকুল ইসলাম বিচার খুবই স্বচ্ছ হচ্ছে। সবাই সেটা দেখতে পারছেন। আদালতে এসে আপনারা কথা শুনলেই বুঝতে পারছেন, তাঁরা দোষী না নির্দোষ। তাঁদের কী দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে, সেটা বুঝতে পারবেন। আদালতের সব তথ্যপ্রমাণ ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। বিডিআরের মধ্যে এ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।
প্রথম আলো বিচারের কারণে পিলখানা তো প্রায় খালি। এত অল্পসংখ্যক সদস্য দিয়ে বাহিনীর কার্যক্রম চলছে কী করে?
রফিকুল ইসলাম বাহিনী মানে কিন্তু শুধু পিলখানা নয়। পিলখানায় মাত্র চারটি ব্যাটালিয়ন আছে। সত্যি যে পিলখানায় সবচেয়ে বেশি হত্যা সংঘটিত হয়েছে। এটাও ঠিক যে পিলখানার বেশির ভাগ সদস্যই অভিযুক্ত হয়ে হাজতে আছেন। এ কারণে আইনশৃঙ্খলার যেসব কাজ বিডিআর করত, সেসব কাজের দায়িত্ব তাদের দেওয়া হচ্ছে না। অবশ্য এমনিতেও ঢাকার ইউনিটগুলো সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করে না। আমরা আশা করি, বিচার শেষ হলে বিডিআর আবার সব কাজ ঠিকমতো করতে পারবে।
প্রথম আলো বিচারের কারণে যাঁদের চাকরি যাবে, তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ করতে কত সময় লাগবে?
রফিকুল ইসলাম বিডিআরের যেসব সদস্য হাজতে আছেন, প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাঁরা ভাতা পাচ্ছেন, রেশন পাচ্ছেন। তাঁরা বিডিআরের বাসভবন ও কোয়ার্টারে আছেন। তাঁদের পদ এখনো খালি হয়নি। তবে বাহিনীর নিয়মিত লোকবল বাড়াতে দুটি ব্যাচের একটি বাহিনীতে যোগদান করেছে। অভিযুক্ত সদস্যদের মধ্যে ঘাটতির কারণে কিন্তু তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
প্রথম আলো বাহিনীর প্রধানের পাশাপাশি আপনি তো বিচার আদালতেরও প্রধান। আদালতে বিচারের ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা দেখছেন?
রফিকুল ইসলাম বিডিআরের সাধারণ সদস্যরা ভালো করে আদালতের কার্যক্রম বুঝছেন না। তাঁরা বারবার আদালতের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা বিডিআরের আদালতকে প্রচলিত আদালতের মতো মনে করছেন। জেরা করতে গিয়ে নিজেই নিজকে অভিযুক্ত প্রমাণ করছেন। আদালত থেকে বারবার তাঁদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রথম আলো যেসব দাবিদাওয়াকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহ হয়েছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ও পদোন্নতি—এসব বিষয়ে আপনারা কী ভাবছেন?
রফিকুল ইসলাম বাহিনীর কল্যাণের জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। বিদ্রোহের পর বাহিনীতে বদলি ও পদোন্নতি বন্ধ ছিল, সেটা চালু করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে পদোন্নতি আবার শুরু হবে। এতে করে বাহিনীর সদস্যদের মনোবল চাঙা হবে। বিডিআরের সদস্যদের যেসব মেধাবী ছেলেমেয়ে আছে, তাদের থাকার জন্য পিলখানায় একটি হোস্টেল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। তারা বিনা খরচে হোস্টেলে থাকতে পারবে।
প্রথম আলো জাতিসংঘ মিশনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা যেতে পারেন, বিডিআরের সদস্যরা কি যেতে পারবেন? এটা নিয়ে সরকারের কোনো ভাবনা আছে কি না।
রফিকুল ইসলাম বিডিআরের দাবিগুলো কীভাবে মেটানো যায়, সেটা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার যে প্রস্তাব আসে, সেটা জাতিসংঘ সুনির্দিষ্ট করে দেয়। এর আগে পুলিশের সঙ্গে বিডিআরের ৩০ জনের একটি দল শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছিল। ওই মিশন থেকে পর্যালোচনা করা হয় যে বিডিআর সীমান্ত সুরক্ষার কাজ করে। সীমান্ত সুরক্ষার জন্য বিডিআরের যেসব সুবিধা আছে, তা নিয়ে বিডিআর শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ প্রস্তাব জাতিসংঘকে জানানোর জন্য আমরা সুপারিশ করেছি। আমরা পুলিশ বা সেনাবাহিনীর আদলে যেতে চাই না। যে কাজে বিডিআরের অভিজ্ঞতা আছে, সেই কাজের প্রস্তাব এলে আমরা যোগদানের জন্য প্রস্তুত আছি।
প্রথম আলো বিডিআর বাহিনীর নাম বদল হচ্ছে। নতুন আইন হচ্ছে। এসব হলে কি সব সমস্যা মিটে যাবে? এর ফলে আসলেই কি পরিবর্তন আসবে?
রফিকুল ইসলাম সব ঠিক হয়ে যাবে এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না, তবে প্রচেষ্টা থাকবে। এ বাহিনীকে কীভাবে আধুনিক করা যায়, সে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সীমান্ত রক্ষার কাজে গতিশীলতা আনতে এখন মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হচ্ছে। সীমান্তচৌকি তৈরি করা হচ্ছে। বর্ডার গার্ড আইন বিলটি জাতীয় সংসদের শরৎকালীন অধিবেশনে উত্থাপন করা হয়েছে। এ আইনে বাহিনীর নাম পরিবর্তনসহ আমূল পরিবর্তন হচ্ছে। আগের আইনে যেসব দুর্বলতা ছিল, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হয়েছে। জনবলও বাড়ানো হবে। নতুন চারটি সেক্টর হবে। সদর দপ্তরের প্রশাসনিক চাপও কমে যাবে। এই আইনটি বিডিআরকে আরও কার্যকর করবে, সেক্টর ও অঞ্চলগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়াবে এবং আইনগত দিক থেকে পরিবর্তিত হবে। এতে সবকিছুর ভারসাম্য থাকবে। এটি অন্য সব বাহিনী থেকে একেবারেই স্বতন্ত্র আইন।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
রফিকুল ইসলাম ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কামরুল হাসান
প্রথম আলো কিছুদিন আগে শেষ হওয়া বিডিআর ও বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের মতপার্থক্য লক্ষ করা গেছে। আমরা যত দূর জানি, ভারতীয় পক্ষ সীমান্তে গুলিবর্ষণ বন্ধ করতে রাজি হয়নি। দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে এটা কোনো বাধা কি না?
রফিকুল ইসলাম অবশ্যই এটা বড় বাধা। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করেছি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কলকাতায় গিয়েছিলাম। আমার প্রথম আলোচ্যসূচি ছিল সীমান্তে যেন কোনো নিরীহ লোককে গুলি করে হত্যা করা না হয়। আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম, তাঁরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন। ইদানীং লক্ষ করছি, এ হার কমে এসেছে। তবে এতে আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই। আমরা চাই সীমান্তে একজন নিরপরাধ লোকও যেন বিচার ছাড়া শাস্তি না পায়। সীমান্ত নিয়ে গত বৈঠকে আমরা এ বক্তব্য খুব জোরালোভাবে তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না। আমরা বলেছি, সীমান্তে গুলি করার ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী নয় (নন-লেথাল) এমন সব অস্ত্র যেন ব্যবহার করা হয়। ওই বৈঠকের পর বিএসএফের প্রধান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সে কথাই বলেছিলেন। থিম্পুতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের বৈঠকেও এ প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছিল।
প্রথম আলো ভারত তো রাতের বেলা সীমান্তে কারফিউ জারির জোর দাবি জানিয়ে আসছে। আপনারা এ নিয়ে কী ভাবছেন?
রফিকুল ইসলাম ভারতের এ প্রস্তাব আমরা আগেই মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ প্রস্তাবের পক্ষে নই। আমি মন্ত্রণালয়ে বলেছি, কারফিউর প্রস্তাব আমরা মেনে নিতে পারি না। দেশে এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে সীমান্ত এলাকায় কারফিউ জারি করতে হবে।
প্রথম আলো তা হলে রাতে সীমান্ত অপরাধ বন্ধ হবে কী করে?
রফিকুল ইসলাম যেসব এলাকায় চোরাচালান বেশি হয়, সেসব এলাকায় আমরা টহল বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি। বিএসএফের পক্ষ থেকে চোরাচালানপ্রবণ নয়টি এলাকার তালিকা আমাদের দেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায়ই মানুষ বেশি গোলাগুলির শিকার হচ্ছে। এসব তালিকা আমরা সেক্টর ও ব্যাটালিয়নগুলোকে দিয়েছি। সেখানে বিডিআর রাতের বেলা টহল জোরদার ও চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা বলতে চাই, কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা সীমান্তে গোলাগুলি মেনে নিতে পারি না।
প্রথম আলো এ বিষয়টি কি শুধু বিডিআর ও বিএসএফের পর্যায়ে আছে, না সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়েও আলোচনা হচ্ছে?
রফিকুল ইসলাম না, এটা শুধু বিএসএফ ও বিডিআরের পর্যায়ে সীমিত নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
প্রথম আলো সীমান্তে কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও চোরাচালান হচ্ছে। বিশেষ করে মাদক ও অস্ত্র আসছে। এসব কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
রফিকুল ইসলাম যত দূর জানি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছেন সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার বন্ধের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। অস্ত্র চোরাচালানসহ সব অপরাধ বন্ধ করার কথাও তিনি বলেছেন। বিডিআর এসব বন্ধে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা ব্যর্থতা-সফলতার ব্যাপার নয়। চোরাচালান বিডিআরের একার পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রথম আলো সীমান্তের ওপারে গড়ে ওঠা ফেনসিডিল কারখানা বন্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি?
রফিকুল ইসলাম সীমান্তের আশপাশে ফেনসিডিলের কারখানা, রি-প্যাকিংয়ের কারখানা গড়ে উঠেছে। কারণ, ফেনসিডিলের তথাকথিত বাজার এ দেশে তৈরি হয়েছে। ফেনসিডিল কারখানা যেসব এলাকায়, তার একটি তালিকা আমরা দিয়েছি। বিএসএফ বলেছে, এটা তাদের কাজ নয়। তার পরও তাদের অনুরোধ করেছি, এসব কাগজপত্র যেন তারা তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বাংলাদেশের লাগোয়া রাজ্যগুলোর প্রশাসনকে পৌঁছে দেয়।
প্রথম আলো মিয়ানমারের সীমান্তে নাসাকার সঙ্গে কোনো আলোচনা কি হয়েছে?
রফিকুল ইসলাম নাসাকা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে। সেটা তাদের ভূখণ্ডে, সীমান্তের জিরো পয়েন্টের ১৫০ গজ ভেতরে। নাসাকা এটা করছে সীমান্ত দিয়ে তথাকথিত রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে। দুই দেশের সম্পর্ক ভালোর দিকে যাচ্ছে। বিডিআরের আগের মহাপরিচালক মিয়ানমার সফর করেছিলেন। সেখান থেকে একটি প্রতিনিধিদলও আসার কথা ছিল, আগামী ফেব্রুয়ারিতে সেটি আসতে পারে। ভারতের মতো তাদের সঙ্গে সীমান্তে আমাদের গোলাগুলি হয় না। তবে সীমান্তে চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে।
প্রথম আলো সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে কী করছে বিডিআর?
রফিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে তিন-চার ধরনের কার্যক্রম আছে। জেলা প্রশাসনে চোরাচালান প্রতিরোধে কমিটি কাজ করছে। উপজেলায়ও কমিটি আছে। তবে বিডিআরের একার পক্ষে চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমাদের বেকার সংখ্যা বেশি। একটি মানুষ ৫০ বোতল ফেনসিডিল আনতে পারলেই ৫০০ টাকা আয় করতে পারে। মরণপণ ঝুঁকি নিয়ে সে এসব করছে।
প্রথম আলো সীমান্ত এলাকায় হাট হচ্ছে। এটা আসলে কী কাজে লাগবে?
রফিকুল ইসলাম তিনটি স্থানে সীমান্ত হাট হচ্ছে। দুটি হবে ভারতের মেঘালয়ে, একটি আমাদের কুড়িগ্রামে। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এসব হাটের নিরাপত্তার জন্য। এ হাট কীভাবে চলবে, কোন কোন পণ্য কেনাবেচা হবে, সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখবে।
প্রথম আলো এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। বিডিআর বিদ্রোহের বিচার হচ্ছে। বিচার-প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা যাবে কি না, লঘুপাপে কারও গুরুদণ্ড হওয়ার আশঙ্কা কি আছে?
রফিকুল ইসলাম এই বিদ্রোহের দুই ধরনের বিচার হচ্ছে। যাঁরা খুন, লুটপাট করেছেন, তাঁদের বিচার হচ্ছে দেশের প্রচলিত আইনে। আর বিদ্রোহের বিচার হচ্ছে বিডিআরের নিজস্ব আইনে। বিদ্রোহের বিচারে আপনি যদি আসামির সংখ্যার কথা বলেন, তবে আমরা সেটা মেনে নিতে পারব না। যেমন, অনেক জায়গা আছে, যেখানে সবাই বিদ্রোহ করেছেন। কিন্তু আমরা তদন্তের মাধ্যমে শুধু যাঁরা দোষী ও প্রকৃত ইন্ধনদাতা, তাঁদেরই শাস্তি দিয়েছি। একজন নিরীহ লোকও শাস্তি পাননি। বিডিআরের বিচারের জন্য আদালত গঠিত হয়েছে, সেই আদালতের দায়িত্ব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
প্রথম আলো যেসব জওয়ান বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছেন, তাঁদের একটি বড় অংশ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন, বিশেষ করে ঢাকার বাইরের স্থাপনাগুলোতে। তাঁরা কি ন্যায়বিচার পাবেন?
রফিকুল ইসলাম হ্যাঁ, অনেকে বাধ্য হয়েছিলেন। বাধ্য হওয়ার কারণে যাঁরা বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিলেন, অভিযোগ থেকে আমরা তাঁদের বাদ দিয়েছি। ইতিমধ্যে ৮১ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটাও ঠিক যে অনেকে হুজুগে মেতে সেদিন অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন। যেমন, ঢাকার বাইরের বিদ্রোহের বিচারের ক্ষেত্রে ১০০ জনের বেশি আসামি আছেন মাত্র দুটি স্থানে, একটি বিডিআর প্রশিক্ষণ স্কুল, অন্যটি টেকনাফে। অন্য সব স্থানে এই আসামির সংখ্যা ১০০-এর নিচে। ধরুন, নওগাঁর বিচারের কথা। সেখানে আসামির সংখ্যা মাত্র ১০। অথচ সেখানে প্রায় সবাই অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন।
প্রথম আলো সংখ্যায় বেশি না হলেও বেশ কিছু জওয়ান বিদ্রোহের বিপক্ষে ছিলেন। অনেকে কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের সহায়তা করেছেন। তাঁরা কি পুরস্কৃত হবেন?
রফিকুল ইসলাম অবশ্যই। তাঁরা সংখ্যায় কম নন, তাঁরা অনেক বেশি। তাঁদের আমরা পুরস্কৃত করছি। এটা বেশি হয়েছে ঢাকার বাইরে। তবে পিলখানার ব্যাপারটি অন্য। এখানে জঘন্য হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এখানে কেউ বিরোধিতা করেননি।
প্রথম আলো বাধ্য হয়ে যাঁরা বিদ্রোহে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হচ্ছে কি না।
রফিকুল ইসলাম বিচার খুবই স্বচ্ছ হচ্ছে। সবাই সেটা দেখতে পারছেন। আদালতে এসে আপনারা কথা শুনলেই বুঝতে পারছেন, তাঁরা দোষী না নির্দোষ। তাঁদের কী দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে, সেটা বুঝতে পারবেন। আদালতের সব তথ্যপ্রমাণ ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। বিডিআরের মধ্যে এ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।
প্রথম আলো বিচারের কারণে পিলখানা তো প্রায় খালি। এত অল্পসংখ্যক সদস্য দিয়ে বাহিনীর কার্যক্রম চলছে কী করে?
রফিকুল ইসলাম বাহিনী মানে কিন্তু শুধু পিলখানা নয়। পিলখানায় মাত্র চারটি ব্যাটালিয়ন আছে। সত্যি যে পিলখানায় সবচেয়ে বেশি হত্যা সংঘটিত হয়েছে। এটাও ঠিক যে পিলখানার বেশির ভাগ সদস্যই অভিযুক্ত হয়ে হাজতে আছেন। এ কারণে আইনশৃঙ্খলার যেসব কাজ বিডিআর করত, সেসব কাজের দায়িত্ব তাদের দেওয়া হচ্ছে না। অবশ্য এমনিতেও ঢাকার ইউনিটগুলো সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করে না। আমরা আশা করি, বিচার শেষ হলে বিডিআর আবার সব কাজ ঠিকমতো করতে পারবে।
প্রথম আলো বিচারের কারণে যাঁদের চাকরি যাবে, তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ করতে কত সময় লাগবে?
রফিকুল ইসলাম বিডিআরের যেসব সদস্য হাজতে আছেন, প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাঁরা ভাতা পাচ্ছেন, রেশন পাচ্ছেন। তাঁরা বিডিআরের বাসভবন ও কোয়ার্টারে আছেন। তাঁদের পদ এখনো খালি হয়নি। তবে বাহিনীর নিয়মিত লোকবল বাড়াতে দুটি ব্যাচের একটি বাহিনীতে যোগদান করেছে। অভিযুক্ত সদস্যদের মধ্যে ঘাটতির কারণে কিন্তু তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
প্রথম আলো বাহিনীর প্রধানের পাশাপাশি আপনি তো বিচার আদালতেরও প্রধান। আদালতে বিচারের ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা দেখছেন?
রফিকুল ইসলাম বিডিআরের সাধারণ সদস্যরা ভালো করে আদালতের কার্যক্রম বুঝছেন না। তাঁরা বারবার আদালতের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা বিডিআরের আদালতকে প্রচলিত আদালতের মতো মনে করছেন। জেরা করতে গিয়ে নিজেই নিজকে অভিযুক্ত প্রমাণ করছেন। আদালত থেকে বারবার তাঁদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রথম আলো যেসব দাবিদাওয়াকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহ হয়েছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ও পদোন্নতি—এসব বিষয়ে আপনারা কী ভাবছেন?
রফিকুল ইসলাম বাহিনীর কল্যাণের জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। বিদ্রোহের পর বাহিনীতে বদলি ও পদোন্নতি বন্ধ ছিল, সেটা চালু করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে পদোন্নতি আবার শুরু হবে। এতে করে বাহিনীর সদস্যদের মনোবল চাঙা হবে। বিডিআরের সদস্যদের যেসব মেধাবী ছেলেমেয়ে আছে, তাদের থাকার জন্য পিলখানায় একটি হোস্টেল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। তারা বিনা খরচে হোস্টেলে থাকতে পারবে।
প্রথম আলো জাতিসংঘ মিশনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা যেতে পারেন, বিডিআরের সদস্যরা কি যেতে পারবেন? এটা নিয়ে সরকারের কোনো ভাবনা আছে কি না।
রফিকুল ইসলাম বিডিআরের দাবিগুলো কীভাবে মেটানো যায়, সেটা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার যে প্রস্তাব আসে, সেটা জাতিসংঘ সুনির্দিষ্ট করে দেয়। এর আগে পুলিশের সঙ্গে বিডিআরের ৩০ জনের একটি দল শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছিল। ওই মিশন থেকে পর্যালোচনা করা হয় যে বিডিআর সীমান্ত সুরক্ষার কাজ করে। সীমান্ত সুরক্ষার জন্য বিডিআরের যেসব সুবিধা আছে, তা নিয়ে বিডিআর শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ প্রস্তাব জাতিসংঘকে জানানোর জন্য আমরা সুপারিশ করেছি। আমরা পুলিশ বা সেনাবাহিনীর আদলে যেতে চাই না। যে কাজে বিডিআরের অভিজ্ঞতা আছে, সেই কাজের প্রস্তাব এলে আমরা যোগদানের জন্য প্রস্তুত আছি।
প্রথম আলো বিডিআর বাহিনীর নাম বদল হচ্ছে। নতুন আইন হচ্ছে। এসব হলে কি সব সমস্যা মিটে যাবে? এর ফলে আসলেই কি পরিবর্তন আসবে?
রফিকুল ইসলাম সব ঠিক হয়ে যাবে এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না, তবে প্রচেষ্টা থাকবে। এ বাহিনীকে কীভাবে আধুনিক করা যায়, সে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সীমান্ত রক্ষার কাজে গতিশীলতা আনতে এখন মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হচ্ছে। সীমান্তচৌকি তৈরি করা হচ্ছে। বর্ডার গার্ড আইন বিলটি জাতীয় সংসদের শরৎকালীন অধিবেশনে উত্থাপন করা হয়েছে। এ আইনে বাহিনীর নাম পরিবর্তনসহ আমূল পরিবর্তন হচ্ছে। আগের আইনে যেসব দুর্বলতা ছিল, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হয়েছে। জনবলও বাড়ানো হবে। নতুন চারটি সেক্টর হবে। সদর দপ্তরের প্রশাসনিক চাপও কমে যাবে। এই আইনটি বিডিআরকে আরও কার্যকর করবে, সেক্টর ও অঞ্চলগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়াবে এবং আইনগত দিক থেকে পরিবর্তিত হবে। এতে সবকিছুর ভারসাম্য থাকবে। এটি অন্য সব বাহিনী থেকে একেবারেই স্বতন্ত্র আইন।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
রফিকুল ইসলাম ধন্যবাদ।
No comments