কূটনীতিকদের তৎপরতা দরকার-জনশক্তি রপ্তানি

জনশক্তি রপ্তানি কমে গেলে বিদেশি আয়ের ওপর চাপ পড়ে। এখন সেটাই হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম নয় মাসে জনসংখ্যা রপ্তানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এটা আশঙ্কাজনক। আমাদের প্রবাসী-আয় বছরে মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশ। বছরে অর্জিত মোট বিদেশি মুদ্রার প্রায় ৩৫ শতাংশ আসে প্রবাসী-আয় থেকে।


সুতরাং প্রবাসীদের অনেকে যখন চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসেন আর বিদেশে নতুন চাকরির সুযোগও যখন কমতে থাকে, তখন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, এর ধাক্কা তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশে তেমন তীব্রভাবে না পড়লেও বিলম্বিত প্রভাব পড়বে। বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকায় মন্দার প্রভাব কাটতে শুরু করলেও যেসব দেশে আমাদের দেশের মানুষ বেশি চাকরি করেন, সেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ও মালয়েশিয়ার বাজারে জনশক্তির চাহিদা বাড়ছে না। আসলে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা কাটতে শুরু করলেও খোদ আমেরিকায়ও চাকরির বাজারে মন্দা চলছে। শুধু গত মাসেই আমেরিকার সরকারি খাতে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে এক লাখ ৫৯ হাজার চাকরি গেছে, আর বেসরকারি খাতে নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৬৪ হাজার। এই যদি আমেরিকার চিত্র হয়, তাহলে আমাদের চাকরির বাজারের ভবিষ্যৎ যে কত ধূসর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু এর মধ্যেও আমাদের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। মূলত তিনটি দিকে এখন কাজ করা দরকার। প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যের চাকরির বাজার ধরে রাখার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা দক্ষতার সঙ্গে চালানো। সেখানে তো ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমজীবীরা কাজ করেন। তাহলে বাজারে মন্দার ধাক্কাটা কেন শুধু আমাদের ওপরই পড়বে? মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আমাদের কূটনীতিকদের সক্রিয় উদ্যোগ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বাজার ধরে রাখতে সাহায্য করবে। বস্তুত, অন্যান্য দেশের সময়োচিত বাড়তি উদ্যোগ তাদের দেশের স্বার্থ রক্ষা করছে আর বেশির ভাগ চাকরি হারাতে হচ্ছে আমাদের দেশের কর্মীদের। এই প্রতিকূল অবস্থা বদলাতে হলে আমাদের কূটনীতিকদের তৎপরতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।
দ্বিতীয়ত, নতুন বাজারও বের করতে হবে। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু শুধু কাগজে-কলমে আটকে থাকলে চলবে না। নতুন শ্রমবাজার বের করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। শ্রমশক্তি রপ্তানি হতে হবে বহুমাত্রিক। না হলে বিশ্ব অর্থনীতির উত্থান-পতনের এই দুঃসময়ে সব দিক সামাল দেওয়া কঠিন।
তৃতীয়ত, দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির ব্যবস্থা করা। বিদেশি ভাষাশিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, কারিগরি দক্ষতা, হাসপাতালের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবিকাসহ বেশ কিছু উচ্চমানের চাকরির চাহিদা বিদেশে বাড়ছে। তাই জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) এদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রশিক্ষণ পাওয়া দক্ষ জনশক্তির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে বিদেশের বাজার ধরে রাখা ও নতুন বাজার খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে না।

No comments

Powered by Blogger.