মুরগি ও ডিমের দাম অস্বাভাবিক নয়! by আবুল কাশেম
ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম কমানোর বিষয়ে সম্প্রতি এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির বর্তমান দর অস্বাভাবিক বা ভয়াবহ নয়। বৈঠকে আলোচনা হয় কিভাবে পোলট্রি শিল্প মালিকদের আরো সুবিধা দেওয়া যায়।
সিদ্ধান্ত হয়, দাম কমাতে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহায়তা নেওয়ার, পোলট্রি খামারিদের ভর্তুকি দেওয়ার, হ্যাচারি মালিক ও বড় খামারিদের ঋণের সুদ মাফ করাসহ কম সুদে ঋণ দিতে সুপারিশ করার। অথচ ডিমের হালি ৪০ টাকায় উঠেছে। আর ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৯০ টাকা। সরকারের হিসাবেই বছরে যে পরিমাণ ডিমের চাহিদা রয়েছে, দেশে উৎপাদন হচ্ছে তার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ। তবুও আমদানি বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটছে না তারা।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নানা ছলচাতুরীর পর গত ৩ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আমদানি অবাধ করার ঘোষণা দিলেও তাতে কার্যত উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ডিম আমদানির সুযোগ নেই। এ পর্যন্ত বলার মতো ডিম আমদানির তথ্য জানাতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। আর বাকি ১০ দিনে তেমন কোনো ডিম আমদানি করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন তাঁরা। বার্ড ফ্লুর প্রভাব থাকায় ভারত থেকে আমদানি করা যাবে না। আর অন্য দেশ থেকে বিমানে ডিম আমদানি করলে তার খরচ হবে অনেক বেশি।
ডিমের উৎপাদকরা বেশি মুনাফার লোভে বরাবরই আমদানি বন্ধ রাখার পক্ষে। ডিম উৎপাদকদের সংগঠন বাংলাদেশ এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমদ সিদ্দিকী গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমদানি অবাধ করে দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো ডিম আমদানি হওয়ার তথ্য আমার কাছে নেই। আর ৩০ জুন আসতে বাকি আছে ১১ দিন। এই কয়েক দিনে কত পিসই বা আমদানি করা সম্ভব হবে।' তিনি আরো বলেন, বার্ড ফ্লুর কারণে ভারত থেকে ডিম আমদানি করা যাবে না। অন্য কোনো দেশ থেকে ডিম আনতে হলে তা বিমানে পরিবহন করতে হবে। তাতে আমদানি করা ডিমের দাম দেশের বাজারের চেয়েও বেশি হবে। ডিমের দাম এখন বেশি স্বীকার করে তিনি বলেন, 'আপনাকে কথা দিলাম রমজান মাসে প্রতিটা ডিম অন্তত এক টাকা কমে ভোক্তাদের হাতে তুলে দেব। তাই ডিম আমদানির দরকার নাই।' তাঁর মতে, সঠিকভাবে বাজার মনিটরিং করে মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর নজরদারি রাখলেই ডিমের দাম হালিতে এখনই চার টাকা কমে যাবে।
মুরগি ও ডিমের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উজ্জ্বল বিকাশ দত্তের সভাপতিত্বে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রাণিস্বাস্থ্য ও প্রশাসন) ডা. মোছাদ্দেক হোসেনের উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে এক হাজার ৪৬৪ কোটি পিস ডিমের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে বছরে মাত্র ৫৭৪ কোটি পিস। অর্থাৎ মোট চাহিদার তিন ভাগের দুই ভাগই ঘাটতি রয়েছে। আগে দেশে দৈনিক এক কোটি ৭০ লাখ পিস ডিম উৎপাদন হতো। এখন তা ২০ লাখ পিস কমে দেড় কোটিতে নেমেছে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডিমের এই বিপুল ঘাটতির সুযোগ নিয়েই উৎপাদকরা অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি দীর্ঘদিন ধরে আমদানির কোনো সুযোগই দেয়নি বাণিজ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান আমদানি নীতি ২০০৯-২০১২-তে ডিম আমদানি নিষিদ্ধ না থাকলেও আমদানি বন্ধ করে রাখার ক্ষমতা রয়েছে আমলাদের হাতে। আমদানি নীতি অনুযায়ী, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সাপেক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ডিম আমদানি করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বছরজুড়ে ডিম আমদানির অনুমোদন চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিলেও সে সুযোগ দেননি কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত জুনের প্রথমদিকে শুরুতে শুধু বে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে তিন কোটি পিস এবং প্যাসিফিক পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারিকে পাঁচ কোটি পিস হ্যাচিং ডিম (বাচ্চা উৎপাদনের ডিম) আমদানির অনুমোদন দেয় দুই মন্ত্রণালয়। পরে অবশ্য সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই ডিম আমদানি উন্মুক্ত করা হয়, তবে তা কেবল ৩০ জুন পর্যন্ত। অথচ ডিম উৎপাদক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, চলতি অর্থবছরের বাকি দিনগুলোতেও দেশে ডিমের উৎপাদন বাড়বে না। সে ক্ষেত্রে জুলাই ও আগস্ট মাসে রমজানের সময় ডিমের সংকট আরো বাড়বে। সেসব বিবেচনা না করে ৩০ জুনের পর ডিম আমদানি করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হিসাবে, এখন একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ৬ টাকা ৭৮ পয়সা। বাজারে খুচরা মূল্য ৮ থেকে সাড়ে ৮ টাকা। অথচ সরকারি বিক্রয় সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির গতকাল মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি হালি ডিমের দাম ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এক কেজি ব্রয়লার মাংসের গড় উৎপাদন খরচ ১৩৩ টাকা ১১ পয়সা। টিসিবির গতকালের বাজারদর অনুযায়ী, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। মন্ত্রণালয়ের হিসাবেই এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগিতে ব্যবসায়ীরা মুনাফা করছেন ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ডিম ও ব্রয়লারের উচ্চমূল্য সম্পর্কে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মোছাদ্দেক হোসেন বৈঠকে বলেছেন, ডিম ও ব্রয়লারের উৎপাদন খরচের তুলনায় বর্তমান বাজার দর তেমন অস্বাভাবিক নয়। পোলট্রি খাদ্যের দাম ও অন্যান্য উপকরণে ব্যয় বাড়ার কারণে মূল্য কিছুটা বেড়েছে। পাওয়ার পয়েন্টে তথ্য উপস্থাপন করে তিনি বলেছেন, বার্ড ফ্লু (এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা), পোরট্রিখাদ্যের দাম বৃদ্ধি, পুলেট রিপ্লেসমেন্ট স্টক তৈরি ও গত কয়েক সপ্তাহের গরমের কারণে পোলট্রি শিল্পের উৎপাদন অনেক কমেছে। ফলে বাজারে ডিম ও মাংসের জোগান কমে যাওয়ায় এ দুটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কিছুটা বেড়েছে। তবে বর্তমান মূল্য উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই পরিস্থিতি ততটা ভয়াবহ নয়।
কাজী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহিদুল ইসলাম আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ডিমের বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে উৎপাদন বাড়াতে সরকারকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, উৎপাদন বাড়লে পণ্যের জোগান বাড়বে। ফলে বাজার স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। ডিম আমদানির অনুমোদনের বিরোধিতা করে তিনি বলেছেন, আমদানি করে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুযায়ী, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালককে (গবাদিপশু ক্রয়) প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সদস্যরা ঢাকার বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করে ডিম ও মুরগির বাজারমূল্য পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণসহ করণীয় নির্ধারণ করবেন। ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা বাড়তি দাম নিচ্ছে কি না তা দেখে বাজার স্থিতিশীলতায় কাজ করবে। এ ছাড়া পোলট্রি খাতে ১০ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া, প্রণোদনা দেওয়া, বড় খামারিদের ঋণের সুদ মওকুফ, ২০১৫ সাল থেকে কর অবকাশ সুবিধা ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়াতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নানা ছলচাতুরীর পর গত ৩ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আমদানি অবাধ করার ঘোষণা দিলেও তাতে কার্যত উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ডিম আমদানির সুযোগ নেই। এ পর্যন্ত বলার মতো ডিম আমদানির তথ্য জানাতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। আর বাকি ১০ দিনে তেমন কোনো ডিম আমদানি করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন তাঁরা। বার্ড ফ্লুর প্রভাব থাকায় ভারত থেকে আমদানি করা যাবে না। আর অন্য দেশ থেকে বিমানে ডিম আমদানি করলে তার খরচ হবে অনেক বেশি।
ডিমের উৎপাদকরা বেশি মুনাফার লোভে বরাবরই আমদানি বন্ধ রাখার পক্ষে। ডিম উৎপাদকদের সংগঠন বাংলাদেশ এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমদ সিদ্দিকী গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমদানি অবাধ করে দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো ডিম আমদানি হওয়ার তথ্য আমার কাছে নেই। আর ৩০ জুন আসতে বাকি আছে ১১ দিন। এই কয়েক দিনে কত পিসই বা আমদানি করা সম্ভব হবে।' তিনি আরো বলেন, বার্ড ফ্লুর কারণে ভারত থেকে ডিম আমদানি করা যাবে না। অন্য কোনো দেশ থেকে ডিম আনতে হলে তা বিমানে পরিবহন করতে হবে। তাতে আমদানি করা ডিমের দাম দেশের বাজারের চেয়েও বেশি হবে। ডিমের দাম এখন বেশি স্বীকার করে তিনি বলেন, 'আপনাকে কথা দিলাম রমজান মাসে প্রতিটা ডিম অন্তত এক টাকা কমে ভোক্তাদের হাতে তুলে দেব। তাই ডিম আমদানির দরকার নাই।' তাঁর মতে, সঠিকভাবে বাজার মনিটরিং করে মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর নজরদারি রাখলেই ডিমের দাম হালিতে এখনই চার টাকা কমে যাবে।
মুরগি ও ডিমের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উজ্জ্বল বিকাশ দত্তের সভাপতিত্বে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রাণিস্বাস্থ্য ও প্রশাসন) ডা. মোছাদ্দেক হোসেনের উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে এক হাজার ৪৬৪ কোটি পিস ডিমের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে বছরে মাত্র ৫৭৪ কোটি পিস। অর্থাৎ মোট চাহিদার তিন ভাগের দুই ভাগই ঘাটতি রয়েছে। আগে দেশে দৈনিক এক কোটি ৭০ লাখ পিস ডিম উৎপাদন হতো। এখন তা ২০ লাখ পিস কমে দেড় কোটিতে নেমেছে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডিমের এই বিপুল ঘাটতির সুযোগ নিয়েই উৎপাদকরা অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি দীর্ঘদিন ধরে আমদানির কোনো সুযোগই দেয়নি বাণিজ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান আমদানি নীতি ২০০৯-২০১২-তে ডিম আমদানি নিষিদ্ধ না থাকলেও আমদানি বন্ধ করে রাখার ক্ষমতা রয়েছে আমলাদের হাতে। আমদানি নীতি অনুযায়ী, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি সাপেক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ডিম আমদানি করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বছরজুড়ে ডিম আমদানির অনুমোদন চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিলেও সে সুযোগ দেননি কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত জুনের প্রথমদিকে শুরুতে শুধু বে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে তিন কোটি পিস এবং প্যাসিফিক পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারিকে পাঁচ কোটি পিস হ্যাচিং ডিম (বাচ্চা উৎপাদনের ডিম) আমদানির অনুমোদন দেয় দুই মন্ত্রণালয়। পরে অবশ্য সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই ডিম আমদানি উন্মুক্ত করা হয়, তবে তা কেবল ৩০ জুন পর্যন্ত। অথচ ডিম উৎপাদক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, চলতি অর্থবছরের বাকি দিনগুলোতেও দেশে ডিমের উৎপাদন বাড়বে না। সে ক্ষেত্রে জুলাই ও আগস্ট মাসে রমজানের সময় ডিমের সংকট আরো বাড়বে। সেসব বিবেচনা না করে ৩০ জুনের পর ডিম আমদানি করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হিসাবে, এখন একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ৬ টাকা ৭৮ পয়সা। বাজারে খুচরা মূল্য ৮ থেকে সাড়ে ৮ টাকা। অথচ সরকারি বিক্রয় সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির গতকাল মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি হালি ডিমের দাম ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এক কেজি ব্রয়লার মাংসের গড় উৎপাদন খরচ ১৩৩ টাকা ১১ পয়সা। টিসিবির গতকালের বাজারদর অনুযায়ী, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। মন্ত্রণালয়ের হিসাবেই এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগিতে ব্যবসায়ীরা মুনাফা করছেন ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ডিম ও ব্রয়লারের উচ্চমূল্য সম্পর্কে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মোছাদ্দেক হোসেন বৈঠকে বলেছেন, ডিম ও ব্রয়লারের উৎপাদন খরচের তুলনায় বর্তমান বাজার দর তেমন অস্বাভাবিক নয়। পোলট্রি খাদ্যের দাম ও অন্যান্য উপকরণে ব্যয় বাড়ার কারণে মূল্য কিছুটা বেড়েছে। পাওয়ার পয়েন্টে তথ্য উপস্থাপন করে তিনি বলেছেন, বার্ড ফ্লু (এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা), পোরট্রিখাদ্যের দাম বৃদ্ধি, পুলেট রিপ্লেসমেন্ট স্টক তৈরি ও গত কয়েক সপ্তাহের গরমের কারণে পোলট্রি শিল্পের উৎপাদন অনেক কমেছে। ফলে বাজারে ডিম ও মাংসের জোগান কমে যাওয়ায় এ দুটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য কিছুটা বেড়েছে। তবে বর্তমান মূল্য উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই পরিস্থিতি ততটা ভয়াবহ নয়।
কাজী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহিদুল ইসলাম আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ডিমের বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে উৎপাদন বাড়াতে সরকারকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, উৎপাদন বাড়লে পণ্যের জোগান বাড়বে। ফলে বাজার স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। ডিম আমদানির অনুমোদনের বিরোধিতা করে তিনি বলেছেন, আমদানি করে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুযায়ী, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালককে (গবাদিপশু ক্রয়) প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সদস্যরা ঢাকার বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করে ডিম ও মুরগির বাজারমূল্য পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণসহ করণীয় নির্ধারণ করবেন। ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা বাড়তি দাম নিচ্ছে কি না তা দেখে বাজার স্থিতিশীলতায় কাজ করবে। এ ছাড়া পোলট্রি খাতে ১০ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া, প্রণোদনা দেওয়া, বড় খামারিদের ঋণের সুদ মওকুফ, ২০১৫ সাল থেকে কর অবকাশ সুবিধা ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়াতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
No comments