চার দিক-ভাষা নিয়ে আনন্দের একটি দিন by প্রদীপ্ত বসাক

ভাষা নিয়েই ছিল কথাবার্তা। ভাষা নিয়েই ছিল আগ্রহ আর উত্তেজনা। কে না জানে, ভাষা ভাবকে বহন করে। মানুষের জীবনের প্রথম বিস্ময়, প্রথম আকুতি, প্রথম উল্লাস—সবই প্রকাশ পায় ভাষার মাধ্যমে। আর ভাষাশিক্ষাকে বেগবান করার জন্য প্রচুর বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই।


সেন্ট যোসেফ স্কুলের যোসেফাইট ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড রিডিং ক্লাব (জেএলআরসি) বইপড়া আর ভাষার সঠিক চর্চার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৪ সালে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এ ক্লাবটি প্রতিবছরের মতো এ বছরও তাদের বার্ষিক কার্যক্রম ‘ভাষা উৎসব’-এর আয়োজন করে ৮ অক্টোবর ২০১০ তারিখে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই উৎসবে বইভিত্তিক কুইজ, হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, বানান প্রতিযোগিতা, ইংরেজি অলিম্পিয়াড ও উপস্থিত বক্তৃতা ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সারা দিনব্যাপী এই উৎসবকে মুখর করে তোলে। সেন্ট যোসেফ ছাড়াও রেসিডেন্সিয়াল মডেল, ফাউন্ডেশন স্কুল, সান বীমস, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্কুলসহ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই ভাষা উৎসবে যোগ দেয়। এ বছর ক্লাবটি প্রথমবারের মতো ইংরেজি উচ্চারণের কৌশলের ওপর ১০ ঘণ্টাব্যাপী একটি সংক্ষিপ্ত কোর্সের আয়োজন করে। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা এই কোর্সটি সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন ক্লাবের চিফ মডারেটর উত্তম হালদার ও মডারেটর দেবব্রত ঘোষ। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সমাপনী অনুষ্ঠানে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
এবারের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট কবি আবু বকর সিদ্দিক এবং সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের উপাধ্যাক্ষ (প্রশাসন) ব্রাদার বিজয় হেরাল্ড রড্রিক্স সিএসসি। স্বাগত বক্তব্যে ক্লাবের চিফ মডারেটর উত্তম হালদার বলেন, আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি শিক্ষার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অনুশীলন এবং দেশ-বিদেশের বই পড়া। ব্রাদার বিজয় মাতৃভাষা শিক্ষাকে আরও গুরুত্বদানের বিষয়ে জোর দেন। কবি আবু বকর সিদ্দিক তাঁর ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘একবার স্কুলের বাংলা পরীক্ষায় আমি রেকর্ড মার্কস পেয়েছিলাম, আর সে জন্য আমাকে পুরস্কার হিসেবে একটি বই দেওয়া হয়েছিল, যা আজও আমার স্মৃতিপটে অমলিন।’ তিনি জানান, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কার পাওয়ার আনন্দ তাঁকে সর্বদা উৎসাহিত করেছে, দিয়েছে প্রচুর আনন্দ। তাই তিনি সবাইকে ভাষাশিক্ষার কাজটিকে আনন্দের সঙ্গে করার জন্য অনুপ্রাণিত করেন।
অনুষ্ঠান শেষে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ইশরাক আহসান জানায়, সে সর্বমোট চারটি বিষয়ে বিজয়ী হয়েছে। সে বলে, ‘ইংরেজি অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন আমার খুব মজা লেগেছে। আমি সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করি। পুরস্কার হিসেবে সার্টিফিকেট ও The adventures of Tomsawyer বইটি পেয়ে আমার খুব ভালো লেগেছে।’ সত্যিই, মার্ক টোয়েনের এই মনকাড়া বইটি পেতে কার না ভালো লাগে!
তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ফারহান ইশরাক জানায়, এই প্রথম সে কোনো বানান প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। সে বলে, ‘WEARY, COLONEL, LIUTENANT এই তিনটি বানান ভুল করার জন্য আমি প্রথম পুরস্কার পেলাম না, তবে কবির হাত থেকে দ্বিতীয় পুরস্কার নিতে আমার খুব ভালো লেগেছে। আর পুরস্কারের বই Outstanding Great Stories পড়ে আমি খুবই মজা পেয়েছি।’ ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র অনিম জানায়, অলিম্পিয়াডে ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’ প্রবাদটি সে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে পারেনি। তা ছাড়া ‘takes after’ এর মানে বুঝতে না পারায় সে অলিম্পিয়াডে বিজয়ী হয়নি। তবে বানান প্রতিযোগিতায় সে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। সে বলে, ‘Chrysanthemum, Psychiatrist, Caesar বানানগুলো আমি প্রতিযোগিতায় ভুল করলেও ভবিষ্যতে আর ভুল হবে না। পুরস্কার হিসেবে চার্লস ডিকেন্সের Great expectations বইটি পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি।’ নবম শ্রেণীর ছাত্র তানসীর হোসেন বাংলা ও ইংরেজি উভয় হাতের লেখা বিভাগে প্রথম হয়েছে। সে জানায়, ভবিষ্যতে সে সুন্দর হাতের লেখার পাশাপাশি দ্রুত লেখার অভ্যাস করবে।
জেএলআরসির বইভিত্তিক কুইজের সার্বিক আয়োজনে ছিল এক মাসব্যাপী নির্দিষ্ট বই দলে দলে পড়া আর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর Treasure Islands, বুবুনের বাবা, কৈলাসে কেলেঙ্কারী; পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণীর The Three Musketeers, আমার বন্ধু রাশেদ, গ্যাংটকে গণ্ডগোল ইত্যাদি।
সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাব জেএলআরসি পরিচালিত হয় ১২ সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদ এবং ১০ সদস্যবিশিষ্ট শিক্ষক মডারেটরদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি নাফিস ইমতিয়াজ, সহসভাপতি প্রদীপ্ত বসাক ও আদনান বিন হক, সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুস সাকিব, যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার সামাইল হোসাইনসহ সবাই নবম শ্রেণীর ছাত্র এবং তাদের সবার মধ্যে রয়েছে নেতৃত্ব দানের চমৎকার গুণ। যোসেফাইট ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড রিডিং ক্লাব প্রতিবছর তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে বিভিন্ন স্কুলকে সংযুক্ত করে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান মডারেটর উত্তম হালদার। সবশেষে সার্বিক সহযোগিতার জন্য বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ব্রাদার লিও জে পেরেরা সিএসসির প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করে ভাষা উৎসব ২০১০-এর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.