ডায়াবেটিস-লো-গ্লাইসিমিক ডায়েট by অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী

পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের একটি বড় উপায় হলো খাদ্যবিধি। আর লো-গ্লাইসিমিক ডায়েট হলো একটি বড় কৌশল। শর্করাজাতীয় খাদ্যকে মূল্যমান নির্ধারণের একটি নিয়ম হলো গ্লাইসিমিক ইনডেক্স।


এই সূচকের মাধ্যমে জানা যায় একটি বিশেষ শর্করা খাদ্য, আহারের পর কত দ্রুত তা রক্তের সুগার মান উন্নীত করে, যাতে যেসব শর্করা খাবার রক্তের সুগারকে ধীরে ধীরে বাড়ায়, সেগুলো বেছে নেওয়া যায়।

কিছু জানার বিষয়
 কালক্রমে রক্তের উচ্চমান সুগার চোখ, কিডনি, হূদ্যন্ত্র, স্নায়ুর ক্ষতি করে।  যেসব শর্করা খাবার আহারের পর রক্তের সুগার ধীরে ধীরে উন্নীত হয়, এদের বলা হয় লো-গ্লাইসিমিক ইনডেক্স। ডায়াবেটিস থাকলে যেসব শর্করা খাওয়া হয়, সেগুলো লো-গ্লাইসিমিক ও মিডিয়াম গ্লাইসিমিক হলেই ভালো।  খাওয়ার একটি পরিকল্পনা হলো শর্করা গণনা। কী পরিমাণ শর্করা খাওয়া হলো, তা গণনা।  গ্লাইসিমিক সূচকের নানা শর্করা খাবারে মানুষ সাড়াও দেয় নানাভাবে। সেই খাবারটি খাওয়ার আগে ও পরে রক্তের সুগার চেক করলে তা জানা যাবে।  মিশ্র খাবার খেলে গ্লাইসিমিক সূচকও যায় বদলে।  খাদ্যের সার্বিক পুষ্টিমান ও দেখার বিষয়, কেবল গ্লাইসিমিক সূচকই নয়, খাদ্য পরিকল্পনায় তা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—লো-গ্লাইসিমিক খাদ্য আইসক্রিমসম্পৃক্ত চর্বিতে ভরপর এবং তা খাওয়া উচিত কদাচিৎ। আবার হাই-গ্লাইসিমিক খাদ্য যেমন—আলুতে আছে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম ও আঁশের মতো পুষ্টি উপকরণ।  তবে হাই-গ্লাইসিমিক খাবার একেবারে বর্জন করতে হবে, তা কেন? কম করে খান, যাতে রক্তের সুগারের ওপর এর প্রভাব বেশি না পড়ে। লো-গ্লাইসিমিক খাবারের সঙ্গে হাই-গ্লাইসিমিক খেলে রক্তের সুগার দ্রুত বাড়বে না।

গ্লাইসিমিক ইনডেক্স সম্পর্কে একটু বিস্তারিত
গ্লাইসিমিক ইনডেক্স হলো শর্করাজাতীয় খাবার আহারের পর সে খাবারটি কত দ্রুত রক্তের সুগার মান উন্নীত করে এর সূচক। লো-গ্লাইসিমিক ডায়েট খেলে এমন খাবার খাওয়া হয়, যা খেলে রক্তের সুগার ওঠে ধীরে। রক্তের সুগার হঠাৎ খুব উঁচুতে তাই উঠতে পারে না। এই ডায়েট প্ল্যানকে বলে ‘Low Gi diet’।

লো-গ্লাইসিমিক ফুড: শরীরে ভাঙে ধীরে ধীরে এবং সুগারও ছাড়ে ধীরে।

হাই-গ্লাইসিমিক ফুড: ভাঙে দ্রুত এবং রক্তের সুগারও বাড়ায় দ্রুত। সার্বিকভাবে অন্যান্য পুষ্টি উপকরণ চর্বি ও আমিষের চেয়ে শর্করা খেলে রক্তের সুগার ওঠে দ্রুততর। কোনো শর্করা খাবার খেলে রক্তের সুগার ওঠে বেশ ধীরে। যেমন—ময়দার রুটি আটার রুটির চেয়ে অনেক দ্রুত তোলে রক্তের সুগার। সূচকে যেসব খাবার এদের মূল্যমান করা হয়েছে ০ থেকে ১০০।  যেসব খাবার খেলে রক্তে দ্রুত ওঠে সুগার, তা হলো হাই-গ্লাইসিমিক: এদের রেটিং ৭০ বা এর বেশি।  যেসব খাবার খেলে রক্তের সুগার মাঝারি গতিতে ওঠে তা হলো মিডিয়াম: এদের রেটিং ৫৬-৬৯।  যেসব খাবার খেলে রক্তের সুগার ওঠে ধীরে তা লো-গ্লাইসিমিক: এদের রেটিং ৫৫ এবং এর নিচে। শর্করা খাবার যা খাওয়া হবে এর বেশির ভাগ হবে লো ও মিডিয়াম গ্লাইসিমিক। পুষ্টিবিদ ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন খাদ্য নির্বাচনে সহায়তা করতে পারবে। বারডেম থেকে প্রকাশিত পুস্তিকা থেকে আরও তথ্য পাওয়া যাবে। আমেরিকান ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাওয়া যাবে তথ্য। ওয়েবসাইট www.diabetes.org.  লো-গ্লাইসিমিক খাবারের মধ্যে—  শুষ্ক বিনস বা শুঁটি ও ডালজাতীয় শস্য
 শর্করাহীন সবজি, যেমন—ব্রকোলি, মরিচ
 কিছু শ্বেতসার সবজি, যেমন—মিষ্টি আলু  শস্য, আটার রুটি, ওটমিল, লাল চালের ভাত  ফল, যেমন—আপেল, জাম, শুষ্ক ফল, চেরি ইত্যাদি।
মাঝারি গ্লাইসিমিক:  তাজা ফল এপ্রিকট  আনারস  স্প্যাগেটি
হাই-গ্লাইসিমিক:  ময়দা  মিলে ছাঁটা চাল  খেজুর, তরমুজ  আলু।

No comments

Powered by Blogger.