ক্যাম্পাসের শান্তি ভঙ্গ করা চলবে না-আবার ছাত্রলীগের মারামারি

খুবই তুচ্ছ কারণে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের তরুণেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন। কিন্তু সেদিন তাঁদের কর্মসূচি ছিল অভ্যর্থনামূলক। স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য যেসব তরুণ-তরুণী সেদিন ভর্তি-পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছিলেন, ছাত্রলীগের উভয় গ্রুপ মিছিল করেছিল তাঁদের শুভেচ্ছা জানাতে।


কিন্তু তাঁদের হাতে লাঠি, রড, চাপাতি, পরস্পরকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার দৃশ্যে ক্যাম্পাসে নতুন আসা ভর্তি-ইচ্ছুক তরুণ-তরুণী ও তাঁদের সঙ্গে যেসব অভিভাবক এসেছিলেন, সবার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছিল আতঙ্ক, নিরাপত্তাহীনতাবোধ এবং সম্ভবত হতাশাও।
সরকারের একাধিক মন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, ছাত্রলীগের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের দায়ভার আওয়ামী লীগ নেবে না। কিন্তু দেশের মানুষ জানে এবং ছাত্রলীগের ব্যাপারে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে নমনীয়তা বা ক্ষেত্রবিশেষে নিষ্ক্রিয়তায় এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের প্রশ্রয়প্রাপ্ত ছাত্রসংগঠন। ছাত্রদল বা ইসলামী ছাত্রশিবির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গণ্ডগোল পাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ওপর যেভাবে চড়াও হয়, ছাত্রলীগের বেলায় সে রকম ঘটে না। প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদল বা ছাত্রশিবিরের কর্মকাণ্ড নেই, ছাত্রশিবির তো কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গুপ্ত সংগঠনে পরিণত হতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহিংসতা বন্ধ হয়নি। এর প্রধান কারণ ছাত্রলীগ। এই ছাত্রসংগঠনের বিভিন্ন অংশের মধ্যে মারামারি, এমনকি রক্তক্ষয়ী সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ—কোনো তরফেই যথেষ্ট কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বস্তি-শান্তি ও শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ফিরে আসছে না।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিজেদেরও এমন বিবেচনা থাকা উচিত যে তাঁদের সমর্থিত সরকার এখন দেশ পরিচালনা করছে, নিজেদের মধ্যে মারামারি বা সহিংস আচরণের দ্বারা সরকারের কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অশান্ত হলে, রক্তপাত ঘটলে তার দায়ভার শেষ পর্যন্ত সরকারের কাঁধেই বর্তায়। সরকারকে এভাবে বিব্রত কেন করবে ছাত্রলীগ?

No comments

Powered by Blogger.