এই দিনে-চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৪৭ বছর by বেলায়াত হোসেন মামুন
আজ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৪৭ বছর পূর্ণ হলো। একই সঙ্গে এ বছর পূর্ণ হলো বিশ্ব চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৮৫তম বছরও। ১৯৬৩ সালের ২৫ অক্টোবর বিশিষ্ট সংস্কৃতিসেবী প্রয়াত আশরাফ আলী চৌধুরীর ঢাকার ২৬ নম্বর পুরানা পল্টন লাইনের বাড়িতে ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ’ (বর্তমানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ) সংগঠনটির জন্ম হয়।
এ সংগঠনটি শুধু পূর্ববাংলায় নয়, পুরো পাকিস্তানের সে সময়ের একমাত্র চলচ্চিত্র সংসদ। সূচনাপর্বে যেসব চলচ্চিত্রপ্রেমীর উদ্যোগে সেদিন এই সংগঠনটির জন্ম হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ওয়াহিদুল হক, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক মোশারফ হোসেন চৌধুরী, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক খান, চলচ্চিত্রকার সালাউদ্দিন, এফডিসির শিল্পনির্দেশক আবদুস সবুর, তৎকালীন পিটিভির ডিজি মনিরুল আলম ও মুহম্মদ খসরু। সূচনাকালের উদ্যোক্তাদের মধ্যে মুহম্মদ খসরু ছাড়া অন্যরা আজ প্রয়াত। ১৯৬৯ সালে পূর্ববঙ্গের প্রথম এই চলচ্চিত্র সংসদের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। সেদিনের পূর্ব পাকিস্তানের চলচ্চিত্র বিষয়ে হাতে-কলমের পদ্ধতিগত শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না, তাই চলচ্চিত্র সংসদকেই উদ্যোক্তারা করতে চেয়েছিলেন চলচ্চিত্র শিক্ষার বিদ্যাপীঠ। এই পরিকল্পনা মাথায় নিয়েই চলচ্চিত্রের নান্দনিক বিকাশের উদ্দেশে শুরু হয়েছিল চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন। অগ্রজ এই মানুষেরা ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কাছে চলচ্চিত্রশিল্পের শক্তির পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে ছিলেন সদাতৎপর। তাঁদের সেই বিরামহীন শ্রম ও চিন্তার ফলেই এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে পেরেছিল সারা দেশে। সত্তরের দশকের মধ্যেই একটি সংগঠন থেকে গড়ে উঠেছিল শতাধিক চলচ্চিত্র সংসদ। এ কাজটি মোটেও সহজ ছিল না, এখনো নেই। চলচ্চিত্র যে শুধু চটুল, স্থূল বিনোদনের পসরা নয়, এর যে নান্দনিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সর্বোপরি সাংস্কৃতিক শক্তি রয়েছে, তা আমাদের এই ভূখণ্ডের শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিকসহ আপামর মানুষকে বোঝানোর জন্য করতে হয়েছে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। কর্মসূচির মধ্যে ছিল পৃথিবীর মহত্তম চলচ্চিত্রকর্মগুলোর প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র পাঠচক্র, সেমিনার, কর্মশালা, পত্রপত্রিকা প্রকাশ, ব্যাপকভিত্তিক লেখালেখি, কোর্সের আয়োজন, চলচ্চিত্র উৎসবসহ নানা রকম কর্মকাণ্ড।
১৯৬৮ সালে যখন তৎকালীন পাকিস্তান ফিল্ম সোসাইটি থেকে মুহম্মদ খসরুর সম্পাদনায় চলচ্চিত্রের কাগজ ধ্রুপদী প্রকাশের প্রথম প্রয়াস নেওয়া হয়, তখন তা ছিল এক অসম্ভব কাজ। মুহম্মদ খসরুর নেতৃতে মাহবুব আলম ও কাইজার চৌধুরীকে কত জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে, অপদস্থ হয়ে এই পত্রিকার জন্য বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করতে হয়েছে তা অনেকেরই অজানা নয়। তাঁদের এবং আরও অনেকের সেই সব দিনের শ্রম-ঘাম বৃথা যায়নি। উভয় বাংলায় এখনো ধ্রুপদী অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের কাগজ। ২০০৬ সালে এর ষষ্ঠ সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। চলচ্চিত্র সংসদগুলোর আয়োজনে এখন দেশে প্রতি দুই বছরে তিনটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বছরজুড়ে সারা দেশে উৎসব, প্রদর্শনী, কর্মশালা, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন, চলচ্চিত্রের কাগজ প্রকাশ করাসহ চলচ্চিত্র-সংস্কৃতির চর্চায় ব্যাপকভাবে কাজ করে থাকে। চলচ্চিত্র সংসদগুলো দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় মানুষের মধ্যে ‘সুস্থ ও নির্মল’ চলচ্চিত্র ধারণাটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।
বিগত ৪৭ বছরে এই আন্দোলন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘতম আন্দোলন। দেশের চলচ্চিত্রের প্রধান নির্মাণযজ্ঞের পাশাপাশি ভিন্নতর চলচ্চিত্র নির্মাণের যে ধারা গড়ে উঠেছে তা এই আন্দোলন থেকেই। এই আন্দোলনকে বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বর্তমানে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি মানজারে হাসিন মুরাদ ও সাধারণ সম্পাদক সুশীল সূত্রধর এই আন্দোলনেরই বর্ষীয়ান কর্মী। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ দেশে ফিল্ম আর্কাইভস প্রতিষ্ঠায় করেছে সফল লড়াকু আন্দোলন। যদিও প্রতিষ্ঠানটি তার জন্মের ৩০ বছর পরও একটি নিজস্ব ভবন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। আর তাই যে প্রত্যাশায় চলচ্চিত্র সংসদ আর্কাইভস প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছিল, তা আজও অপূর্ণই রয়ে গেছে। যেমন বহুদিনের দাবির পরও আজও সরকার গড়ে তোলেনি দেশের জন্য কোনো ফিল্ম ইনস্টিটিউট, জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র। প্রণয়ন করেনি জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা। উপরন্তু সামরিক শাসনামলে এই আন্দোলনের কণ্ঠরোধ করার জন্য প্রণীত ‘চলচ্চিত্র সংসদ নিয়ন্ত্রণ ও নিবন্ধন আইন ১৯৮০’ নামে একটি কালাকানুন বহাল রয়েছে ৩০ বছর ধরেই। আইনটি বাতিলের প্রতিশ্রুতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকবার দিলেও তা এখনো কার্যকর করা হয়নি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের এই ৪৭ বছর পূর্তিতে বিগত দিনের ও বর্তমানের সব চলচ্চিত্র সংসদ-কর্মীদের জানাই সংগ্রামী অভিনন্দন। ৪৭ বছর পূর্তির এই দিনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের পুরোধা মুহম্মদ খসরুকে দেশের সংসদ-কর্মীদের পক্ষ থেকে জানাই শ্রদ্ধা।
চলচ্চিত্রশিল্প-চর্চার ৪৭ বছরের অর্জন এবং ব্যর্থতাকে সম্যকভাবে বুঝেই ৫০ অভিমুখে আমাদের যাত্রা। এই ভূখণ্ডের মানুষের জীবনের সংগ্রামকে চলচ্চিত্রের ভাষায় বুনে দেওয়ার আগামীর অভিযাত্রায় সবার নিমন্ত্রণ।
১৯৬৮ সালে যখন তৎকালীন পাকিস্তান ফিল্ম সোসাইটি থেকে মুহম্মদ খসরুর সম্পাদনায় চলচ্চিত্রের কাগজ ধ্রুপদী প্রকাশের প্রথম প্রয়াস নেওয়া হয়, তখন তা ছিল এক অসম্ভব কাজ। মুহম্মদ খসরুর নেতৃতে মাহবুব আলম ও কাইজার চৌধুরীকে কত জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে, অপদস্থ হয়ে এই পত্রিকার জন্য বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করতে হয়েছে তা অনেকেরই অজানা নয়। তাঁদের এবং আরও অনেকের সেই সব দিনের শ্রম-ঘাম বৃথা যায়নি। উভয় বাংলায় এখনো ধ্রুপদী অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের কাগজ। ২০০৬ সালে এর ষষ্ঠ সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। চলচ্চিত্র সংসদগুলোর আয়োজনে এখন দেশে প্রতি দুই বছরে তিনটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বছরজুড়ে সারা দেশে উৎসব, প্রদর্শনী, কর্মশালা, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন, চলচ্চিত্রের কাগজ প্রকাশ করাসহ চলচ্চিত্র-সংস্কৃতির চর্চায় ব্যাপকভাবে কাজ করে থাকে। চলচ্চিত্র সংসদগুলো দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় মানুষের মধ্যে ‘সুস্থ ও নির্মল’ চলচ্চিত্র ধারণাটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।
বিগত ৪৭ বছরে এই আন্দোলন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘতম আন্দোলন। দেশের চলচ্চিত্রের প্রধান নির্মাণযজ্ঞের পাশাপাশি ভিন্নতর চলচ্চিত্র নির্মাণের যে ধারা গড়ে উঠেছে তা এই আন্দোলন থেকেই। এই আন্দোলনকে বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বর্তমানে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি মানজারে হাসিন মুরাদ ও সাধারণ সম্পাদক সুশীল সূত্রধর এই আন্দোলনেরই বর্ষীয়ান কর্মী। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ দেশে ফিল্ম আর্কাইভস প্রতিষ্ঠায় করেছে সফল লড়াকু আন্দোলন। যদিও প্রতিষ্ঠানটি তার জন্মের ৩০ বছর পরও একটি নিজস্ব ভবন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। আর তাই যে প্রত্যাশায় চলচ্চিত্র সংসদ আর্কাইভস প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছিল, তা আজও অপূর্ণই রয়ে গেছে। যেমন বহুদিনের দাবির পরও আজও সরকার গড়ে তোলেনি দেশের জন্য কোনো ফিল্ম ইনস্টিটিউট, জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র। প্রণয়ন করেনি জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা। উপরন্তু সামরিক শাসনামলে এই আন্দোলনের কণ্ঠরোধ করার জন্য প্রণীত ‘চলচ্চিত্র সংসদ নিয়ন্ত্রণ ও নিবন্ধন আইন ১৯৮০’ নামে একটি কালাকানুন বহাল রয়েছে ৩০ বছর ধরেই। আইনটি বাতিলের প্রতিশ্রুতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকবার দিলেও তা এখনো কার্যকর করা হয়নি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের এই ৪৭ বছর পূর্তিতে বিগত দিনের ও বর্তমানের সব চলচ্চিত্র সংসদ-কর্মীদের জানাই সংগ্রামী অভিনন্দন। ৪৭ বছর পূর্তির এই দিনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের পুরোধা মুহম্মদ খসরুকে দেশের সংসদ-কর্মীদের পক্ষ থেকে জানাই শ্রদ্ধা।
চলচ্চিত্রশিল্প-চর্চার ৪৭ বছরের অর্জন এবং ব্যর্থতাকে সম্যকভাবে বুঝেই ৫০ অভিমুখে আমাদের যাত্রা। এই ভূখণ্ডের মানুষের জীবনের সংগ্রামকে চলচ্চিত্রের ভাষায় বুনে দেওয়ার আগামীর অভিযাত্রায় সবার নিমন্ত্রণ।
No comments