ধর্ম-সমাজে আমানত রক্ষার তাগিদ by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
ইসলাম একটি সর্বজনীন কল্যাণকামী জীবনব্যবস্থা। সমাজজীবনে মানুষ একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। সমাজে মানুষের পরস্পরের মধ্যে আস্থা বা বিশ্বস্ততা না থাকলে জীবনে চলার পথ সুখকর হয় না। তাই মানবসমাজের প্রতিটি ধর্মপ্রাণ লোকের মধ্যে সততা, আমানতদারিতা, আস্থা ও বিশ্বস্ততা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সমাজকে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার
জন্য ইসলাম আমানতদারিতার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে। আরবি ‘আমানত’ শব্দের অর্থ হচ্ছে গচ্ছিত রাখা, নিরাপদ রাখা, প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা প্রভৃতি। ইসলামের পরিভাষায় কারও কাছে কোনো অর্থ-সম্পদ গচ্ছিত রাখাই আমানত।
যিনি গচ্ছিত দ্রব্য যথাযথভাবে সংরক্ষণে করেন এবং এর প্রকৃত হকদার বা মালিক চাওয়ামাত্র তা অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেন, তাঁকে ‘আমিন’ অর্থাৎ বিশ্বস্ত বা আমানতদার বলা হয়। পক্ষান্তরে অপরের গচ্ছিত সম্পদ যথাযথভাবে মালিকের কাছে প্রত্যর্পণ না করে আত্মসাৎ বা লোকসান করাই হচ্ছে খেয়ানত। যে ব্যক্তি লোভের বশবর্তী হয়ে অন্যের গচ্ছিত সম্পদ খেয়ানত করে, সে আত্মসাৎকারীরূপে বিবেচিত হয়। মানুষের অর্থলিপ্সা তাকে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য করে ফেলে এমনভাবে যে সে বৈধ-অবৈধ সব পন্থায় অর্থ-সম্পদ লাভে ব্রতী হয়। তাই ইসলামে আমানত সুরক্ষার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের কাছে পেশ কোরো না।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৮)
আমানত রক্ষা করা মানবচরিত্রের একটি বিশেষ গুণ। ইসলামের সুমহান আদর্শ বাস্তবায়নে এবং সুখী-সমৃদ্ধ সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণে আমানত রক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারও কাছে কোনো লোক যদি কিছু মালপত্র বা ধন-সম্পদ বা টাকা-পয়সা বা অন্য কোনো বিষয় ও দায়িত্ব আমানত রাখে, তা যত্নসহকারে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। আর যখন মালিক তা ফেরত পেতে চায়, সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হয়—এটাই ইসলামের বিধান। তাই সমাজজীবনে আমানত রক্ষা করা এবং তা যথাযথভাবে ফেরত দেওয়া অপরিহার্য কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা মানুষকে আমানত রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে তোমরা আমানত তার মালিককে প্রত্যর্পণ করবে বা ফেরত দেবে।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত-৫৮)
পার্থিব জগতে প্রতিটি নর-নারীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তথা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র পর্যন্ত কিছু দায়-দায়িত্ব রয়েছে। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেকের ওপর অনেক দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো আমানতের অন্তর্ভুক্ত। ব্যাংকের ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে মানুষের টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত, স্বর্ণালংকার প্রভৃতি মূল্যবান বস্তু গচ্ছিত রাখা হয়—এসবই আমানত। দোকানের কর্মচারীর কাছে দোকানটি ও শ্রমিকের কাছে কাঁচামাল বা তার উপাদান নিজের মালিকের আমানতস্বরূপ। রাষ্ট্রের শাসক ও তত্ত্বাবধায়কের কাছে সরকারি অর্থ-সম্পদ, গোপনীয় দলিলপত্র, নীতিনির্ধারণী কৌশল এবং জনগণের স্বার্থ ও অধিকার আমানতস্বরূপ। ব্যাপক অর্থে একের কাছে অন্যের জান-মাল, মান-সম্মান—সবই আল্লাহর আমানত। প্রত্যেকে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবগত হয়ে তা যথাযথভাবে পালন করা দরকার। সব আমানতের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করাই একজন প্রকৃত মুসলমান আমানতদারের কর্তব্য। এই দায়িত্বগুলো পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে।
কোনো ব্যক্তি যদি কারও কাছে গোপন কথা বলে, সে কথাও একটি আমানতস্বরূপ। বিনা অনুমতিতে তা প্রকাশ করা হলে আমানতের খেয়ানত করা হয়। এ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘যখন কোনো কথা হয়, সে কথাও আমানতস্বরূপ।’ আমানত রক্ষা করা একজন প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আর (তারাই প্রকৃত মুমিন) যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।’ (সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত-৮)
আমানতদারি ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ। যাদের ঈমান ঠিক আছে, তারা আমানতের খেয়ানত করতে পারে না। আর যারা অন্যের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ বা খেয়ানত করে, তারা প্রকৃত মুমিন নয়, তারা প্রতারক, ভণ্ড ও মুনাফিক। তাই প্রত্যেক মুসলমানের আমানত রক্ষা করে ঈমানদার হওয়া উচিত। আমানত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করে এবং আমানতদারকে সবাই ভালোবাসে।
আমানত রক্ষা করলে মানুষের উত্তম চরিত্র গঠিত হয়। আমানত রক্ষা তাকওয়া অর্জনে সহায়তা করে। কোনো কিছু গচ্ছিত রাখলে মানুষের কুপ্রবৃত্তি তা ভোগ বা জবরদখল বা আত্মসাৎ করার প্ররোচনা জাগায়। কিন্তু আমানতদার ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি প্রকৃত মালিককে যথাযথ প্রত্যর্পণের মাধ্যমে তাকওয়া বা খোদাভীতির দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। এভাবে আমানত রক্ষার মাধ্যমে পরকালের সুখের স্থান জান্নাতের পথ সুগম হয়। পবিত্র কোরআনে আমানতদারির পুরস্কার ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘(যারা আমানত রক্ষা করে) তারা ফেরদাউস নামক উদ্যানের অধিকারী হবে, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।’ (সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত-১১)
ইসলামের দৃষ্টিতে আমানত একটি মহৎ মানবিক গুণ, যা আল্লাহর সব নবী-রাসুলের জীবনচরিতে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন আমানতদারির মূর্ত প্রতীক। নবীজির আমানতদারির ও বিশ্বস্ততার সুখ্যাতি উজ্জ্বল দৃষ্টান্তস্বরূপ লোকের মুখে মুখে উচ্চারিত ছিল। ইসলামবিরোধী চরম শত্রুরাও মহানবী (সা.)-এর কাছে সম্পদ আমানত রাখতেন। তাই তদানীন্তন ঘোর তমসাচ্ছন্ন নীতিহীন বিশ্বে তিনিই জগৎশ্রেষ্ঠ ‘আল-আমিন’ উপাধি লাভ করেছিলেন।
সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে যদি আমানতের মহৎ গুণটি বিকশিত হয়, তাহলে সমাজজীবনে পরিবেশ সুন্দর ও নির্মল হতে পারে। মানুষের পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বস্ততা ফিরে আসে এবং কাজ-কর্মে, লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নিরাপত্তা বিরাজ করে। তখন সমাজে সুখ-শান্তি, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণতা লাভ করে। এভাবে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজ পরিমণ্ডলে তাদের আমানত যথাযথভাবে পালন করার মাধ্যমেই একটি সুখী, সমৃদ্ধ সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। তাই ইহকালীন জীবনে ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও আত্মসাতের প্রবণতা প্রতিরোধে শান্তি-শৃঙ্খলাপূর্ণ সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমানতদারের বিকল্প নেই।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
dr.munimkhan@yahoo.com
যিনি গচ্ছিত দ্রব্য যথাযথভাবে সংরক্ষণে করেন এবং এর প্রকৃত হকদার বা মালিক চাওয়ামাত্র তা অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেন, তাঁকে ‘আমিন’ অর্থাৎ বিশ্বস্ত বা আমানতদার বলা হয়। পক্ষান্তরে অপরের গচ্ছিত সম্পদ যথাযথভাবে মালিকের কাছে প্রত্যর্পণ না করে আত্মসাৎ বা লোকসান করাই হচ্ছে খেয়ানত। যে ব্যক্তি লোভের বশবর্তী হয়ে অন্যের গচ্ছিত সম্পদ খেয়ানত করে, সে আত্মসাৎকারীরূপে বিবেচিত হয়। মানুষের অর্থলিপ্সা তাকে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য করে ফেলে এমনভাবে যে সে বৈধ-অবৈধ সব পন্থায় অর্থ-সম্পদ লাভে ব্রতী হয়। তাই ইসলামে আমানত সুরক্ষার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের কাছে পেশ কোরো না।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৮)
আমানত রক্ষা করা মানবচরিত্রের একটি বিশেষ গুণ। ইসলামের সুমহান আদর্শ বাস্তবায়নে এবং সুখী-সমৃদ্ধ সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণে আমানত রক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারও কাছে কোনো লোক যদি কিছু মালপত্র বা ধন-সম্পদ বা টাকা-পয়সা বা অন্য কোনো বিষয় ও দায়িত্ব আমানত রাখে, তা যত্নসহকারে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। আর যখন মালিক তা ফেরত পেতে চায়, সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হয়—এটাই ইসলামের বিধান। তাই সমাজজীবনে আমানত রক্ষা করা এবং তা যথাযথভাবে ফেরত দেওয়া অপরিহার্য কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা মানুষকে আমানত রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে তোমরা আমানত তার মালিককে প্রত্যর্পণ করবে বা ফেরত দেবে।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত-৫৮)
পার্থিব জগতে প্রতিটি নর-নারীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তথা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র পর্যন্ত কিছু দায়-দায়িত্ব রয়েছে। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেকের ওপর অনেক দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো আমানতের অন্তর্ভুক্ত। ব্যাংকের ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে মানুষের টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত, স্বর্ণালংকার প্রভৃতি মূল্যবান বস্তু গচ্ছিত রাখা হয়—এসবই আমানত। দোকানের কর্মচারীর কাছে দোকানটি ও শ্রমিকের কাছে কাঁচামাল বা তার উপাদান নিজের মালিকের আমানতস্বরূপ। রাষ্ট্রের শাসক ও তত্ত্বাবধায়কের কাছে সরকারি অর্থ-সম্পদ, গোপনীয় দলিলপত্র, নীতিনির্ধারণী কৌশল এবং জনগণের স্বার্থ ও অধিকার আমানতস্বরূপ। ব্যাপক অর্থে একের কাছে অন্যের জান-মাল, মান-সম্মান—সবই আল্লাহর আমানত। প্রত্যেকে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবগত হয়ে তা যথাযথভাবে পালন করা দরকার। সব আমানতের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করাই একজন প্রকৃত মুসলমান আমানতদারের কর্তব্য। এই দায়িত্বগুলো পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে।
কোনো ব্যক্তি যদি কারও কাছে গোপন কথা বলে, সে কথাও একটি আমানতস্বরূপ। বিনা অনুমতিতে তা প্রকাশ করা হলে আমানতের খেয়ানত করা হয়। এ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘যখন কোনো কথা হয়, সে কথাও আমানতস্বরূপ।’ আমানত রক্ষা করা একজন প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আর (তারাই প্রকৃত মুমিন) যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।’ (সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত-৮)
আমানতদারি ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ। যাদের ঈমান ঠিক আছে, তারা আমানতের খেয়ানত করতে পারে না। আর যারা অন্যের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ বা খেয়ানত করে, তারা প্রকৃত মুমিন নয়, তারা প্রতারক, ভণ্ড ও মুনাফিক। তাই প্রত্যেক মুসলমানের আমানত রক্ষা করে ঈমানদার হওয়া উচিত। আমানত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করে এবং আমানতদারকে সবাই ভালোবাসে।
আমানত রক্ষা করলে মানুষের উত্তম চরিত্র গঠিত হয়। আমানত রক্ষা তাকওয়া অর্জনে সহায়তা করে। কোনো কিছু গচ্ছিত রাখলে মানুষের কুপ্রবৃত্তি তা ভোগ বা জবরদখল বা আত্মসাৎ করার প্ররোচনা জাগায়। কিন্তু আমানতদার ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি প্রকৃত মালিককে যথাযথ প্রত্যর্পণের মাধ্যমে তাকওয়া বা খোদাভীতির দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। এভাবে আমানত রক্ষার মাধ্যমে পরকালের সুখের স্থান জান্নাতের পথ সুগম হয়। পবিত্র কোরআনে আমানতদারির পুরস্কার ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘(যারা আমানত রক্ষা করে) তারা ফেরদাউস নামক উদ্যানের অধিকারী হবে, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।’ (সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত-১১)
ইসলামের দৃষ্টিতে আমানত একটি মহৎ মানবিক গুণ, যা আল্লাহর সব নবী-রাসুলের জীবনচরিতে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন আমানতদারির মূর্ত প্রতীক। নবীজির আমানতদারির ও বিশ্বস্ততার সুখ্যাতি উজ্জ্বল দৃষ্টান্তস্বরূপ লোকের মুখে মুখে উচ্চারিত ছিল। ইসলামবিরোধী চরম শত্রুরাও মহানবী (সা.)-এর কাছে সম্পদ আমানত রাখতেন। তাই তদানীন্তন ঘোর তমসাচ্ছন্ন নীতিহীন বিশ্বে তিনিই জগৎশ্রেষ্ঠ ‘আল-আমিন’ উপাধি লাভ করেছিলেন।
সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে যদি আমানতের মহৎ গুণটি বিকশিত হয়, তাহলে সমাজজীবনে পরিবেশ সুন্দর ও নির্মল হতে পারে। মানুষের পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বস্ততা ফিরে আসে এবং কাজ-কর্মে, লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নিরাপত্তা বিরাজ করে। তখন সমাজে সুখ-শান্তি, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণতা লাভ করে। এভাবে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজ পরিমণ্ডলে তাদের আমানত যথাযথভাবে পালন করার মাধ্যমেই একটি সুখী, সমৃদ্ধ সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। তাই ইহকালীন জীবনে ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও আত্মসাতের প্রবণতা প্রতিরোধে শান্তি-শৃঙ্খলাপূর্ণ সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমানতদারের বিকল্প নেই।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments