ডিএসইকে পেশাদারি আচরণ করতে হবে-শেয়ারবাজারে অস্বচ্ছতা-অনিয়ম

যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাজে অস্বচ্ছতার আশ্রয় গ্রহণ কিংবা নিয়মভঙ্গের চর্চার মানে হলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। আর এই বিশৃঙ্খলা প্রকারান্তরে দুর্নীতিকেই উৎসাহিত করে। জনগণের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই ধরনের চর্চা জনমানুষের জন্য বিরাট ঝুঁকি ডেকে আনে।


শেয়ারবাজারের মূল প্রতিষ্ঠান স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে কথাটি আরও বেশি সত্যি। আর তাই যখন জানা যায় যে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নানা ধরনের অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে, অস্বচ্ছতার আশ্রয় নিচ্ছে, তখন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না।
প্রথম আলোর একাধিক প্রতিবেদন থেকেই জানা গেছে যে প্রতিষ্ঠানটি কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গোপনে মূল্যসূচকের হিসাব পদ্ধতিতে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এর ফলে বাজারের গতি-প্রকৃতির সঠিক চিত্র সূচকের ওঠানামায় প্রতিফলিত হচ্ছে না। এতে করে বিনিয়োগকারীরা কার্যত বিভ্রান্ত হচ্ছেন। বাজার বিশ্লেষকেরাও সঠিক পর্যালোচনা করতে পারছেন না। মূল্যসূচক নিয়ে এহেন লুকোচুরি নিঃসন্দেহে একটি গর্হিত অপরাধ। এর আগেও দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ সূচক গণনার ক্ষেত্রে কিছু অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছিল। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে তা প্রকাশিত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) টনক নড়ে। কমিশন দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে সূচক গণনার ত্রুটি সংশোধনের নির্দেশ দেয়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ডিএসই বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশের কোনো তোয়াক্কা করে না। আইনের ধার ধারে না। বিনিয়োগকারীদের প্রতি তাদের কোনো সংবেদনশীলতা নেই। আর তাই মূল্যসূচক নিয়ে গোপনে যা ইচ্ছে তাই করছে।
আবার প্রথম আলোর আরেক প্রতিবেদনেই জানা গেছে, নিজেদের জন্য একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট বানাতে ডিএসই কর্তৃপক্ষ গাজীপুরে ৩৭ বিঘা জমি কিনেছে। এ জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। জমি কেনা ও রিসোর্ট নির্মাণের জন্য ডিএসইর এহেন তৎপরতা যৌক্তিক কারণেই প্রশ্নবিদ্ধ। প্রথমত, এই ধরনের কাজ প্রতিষ্ঠানটির মূলনীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। দ্বিতীয়ত, স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক অবকাঠামোকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করে তুলতে বিনিয়োগের প্রয়োজন থাকলেও সেদিকে কোনো মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না। রিসোর্ট নির্মাণের চেয়ে এদিকে অর্থ ব্যয় করা অধিক জরুরি। তৃতীয়ত, এর মাধ্যমে জনমনে এ বিভ্রান্তিকর ধারণাই দেওয়া হচ্ছে যে ডিএসই ফাটকা কারবারে অর্থ উপার্জন করে তা যথেচ্ছ খরচ করতে পারে, এতে কোনো বাধা নেই।
বস্তুত নিয়মনীতি না মেনে যা ইচ্ছে তা করার এহেন অসুস্থ প্রবণতা বাজারের সুষ্ঠু বিকাশের পথে অন্তরায়। এই অসুস্থ চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে, শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে ডিএসই কর্তৃপক্ষকে পেশাদারি আচরণ করতে হবে। আর এ জন্য পর্যায়ক্রমে ডিমিউচালাইজেশনের দিকে যেতে হবে স্টক এক্সচেঞ্জকে, যেখানে মালিকানা, ব্যবস্থাপনা ও কারবার একটি অন্যটির থেকে পুরোপুরি পৃথক থাকবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে এসইসি কীভাবে এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন দেয়, সেটিও দেখার বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.