জনসংখ্যা ও দারিদ্র্য-নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি

সীমিত সম্পদ ও সামর্থ্যের এই দেশের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৪৪ লাখ। এর চেয়ে বড় দুঃসংবাদ আর কী হতে পারে। খাদ্যমন্ত্রী একে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে পাহাড়সম সমস্যাটিকে ছোট করে দেখিয়েছেন। দেশের এমন কোনো সমস্যা কি আছে, যার জন্য এই অকল্পনীয় জনসংখ্যাকে দায়ী করা চলে না?


আবাসনসংকট থেকে শুরু করে প্রকৃতি দূষণ, সুশাসনের অভাব থেকে শুরু করে অভাব-বঞ্চনা—সবকিছুর মূলে এই জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপ। তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সবকিছু ভেঙে পড়তে পারে।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ চেষ্টার পাশাপাশি দারিদ্র্য দূর করার ব্যাপারেও ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা সাধারণত দারিদ্র্য বিমোচনের কথাই বলি। কিন্তু দরিদ্রদের মধ্যেও যারা দরিদ্র, যাদের বলা যায় অতিদরিদ্র, তাদের ব্যাপারে আরও সক্রিয় ও সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, এই অতিদরিদ্ররা এতই হতভাগা যে তাদের জন্য এমনকি ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির দরজাও অবারিত নয়। সুতরাং তাদের পক্ষে দারিদ্র্যের বেড়াজাল ছিন্ন করে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।
দরিদ্র বা অতিদরিদ্র নির্ধারণের জন্য সাধারণত খাদ্যের ক্যালরি হিসাব করা হয়। যেমন যারা দৈনিক ১৮০০ ক্যালরির কম খাবার গ্রহণ করে, তাদের হতদরিদ্র বলে ধরা হয়। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, এদের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় তিন কোটি ১০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। আর যাদের আরও কম খেয়ে বাঁচতে হয়, ১৬০০ ক্যালরির কম খাবার গ্রহণ করে, তাদের বলা যায় চরম বা অতিদরিদ্র। এদের সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ। জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ। এই অতিদরিদ্রদের এমনভাবে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা প্রয়োজন, যেন তারা নিজেরা উপার্জনক্ষম হয়ে উঠতে পারে। তখন তারা ক্ষুদ্রঋণের সুবিধা গ্রহণ করে মোটামুটি খেয়েপরে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করতে পারবে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, তাদের অনেকে এতটাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে যে ক্ষুদ্রঋণের দরকার আর হয়নি। অতিদরিদ্রদের মধ্যে কাজের গুরুত্ব যে কত বেশি, তা এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়।
কিন্তু আসল সমস্যা অন্যখানে। যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে দারিদ্র্যচক্র থেকে তাদের বের করে আনা কঠিন। হয়তো শতাংশের হিসাবে দারিদ্র্যের হার কমছে, কিন্তু প্রতিবছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মোট গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বর্তমানে বছরে ২২-২৩ লাখ লোক জনসংখ্যায় যোগ হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার লোক যোগ হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে আনতে না পারলে দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্যোগ সহজে সফল হবে না। এ জন্য দরকার শিক্ষার প্রসার।
আবার এটাও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও দারিদ্র্য বিমোচন কিছু বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রম অবশ্যই সুফল দিচ্ছে। ছোট-বড় এনজিওগুলোর কার্যক্রম নিঃসন্দেহে অপরিহার্য। কিন্তু নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের উদ্যোগও জোরেশোরে চালানো দরকার। ভিজিডি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও অন্যান্য কর্মসূচি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হলে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। তবে সমস্যা হলো স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি। দরিদ্রদের ব্যাপারে এসব বন্ধ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.