কারণ খতিয়ে দেখা হোক by ওয়ালিউল্লাহ
সেনা আবাসন প্রকল্প নিয়ে রূপগঞ্জে একটি অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক ঘটনা সম্প্রতি ঘটে গেছে। একটি নিরপেক্ষ অথচ স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে যখন গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে, তখন এলাকার জনপ্রতিনিধিদের চেষ্টা কেন ব্যর্থ হলো, তা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বিষয় উপস্থাপনের চেষ্টা করছি।
সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর সেনাসদস্যদের স্বপ্ন থাকে, কী করে একটি নিরাপদ আবাসন পাওয়া যায়। অতীতকালে ডিফেন্স অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি সেনানিবাসের পাশে গড়ে উঠলেও বর্তমানে জমিসংকটের ফলে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যকে একক প্লট দেওয়া সম্ভব হলো না যখন, তখন যৌথ প্লট দেওয়া হলো। এরপর জমিসংকটের কারণে ফ্ল্যাট দেওয়ার পরিকল্পনা করা হলো। সেনানিবাসের কাছে জমি অধিগ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হলে নানা ধরনের জটিলতার কারণে তাও বাস্তবায়ন করা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয়নি। সেনাসদস্যদের মনোবল যখন একেবারে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম, তখন নগদ মূল্যে প্রত্যেক অফিসার তাঁদের সঞ্চিত অথবা ঋণ করা টাকার একটি বড় অঙ্ক জমা দিয়ে ‘আর্মি হাউজিং’ নামের একটি প্রকল্পে তাঁদের আবেদনপত্র পাঠান, যাতে ভবিষ্যতে এ প্রকল্পে তাঁদের পরিবার আশ্রয় পায়। যেহেতু প্রকল্পটিতে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক নয় এবং যেহেতু সরকারি সহায়তা ছাড়াই প্রকল্পটি এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। পরিবেশবাদী ও সুশীল সমাজের প্রতিবাদ সত্ত্বেও এরই মধ্যে আবাসনসমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে জলাশয় ভরাট করে প্রচুর প্রতিষ্ঠান কাজ করে চলেছে।
বিভিন্ন সময় সেনাসদস্যরা জমি বা ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। ডিফেন্স অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি মিরপুরে একটি ডেভেলপার কোম্পানির কারণে ৪৯ জন অফিসার দীর্ঘদিন তাঁদের সমস্যার বেড়াজালে আবর্তিত হয়ে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শুধু মিরপুর নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগতভাবে জমি বা ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন অনেকে, যার সমাধান অনেক ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে সেনা কর্তৃপক্ষের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়নি। সেনাসদস্যদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পর তাঁদের কল্যাণমুখী কার্যক্রমে অংশ নেওয়া বা সেনাসদস্যরা সমস্যায় পড়লে এর সমাধান দেওয়ার নৈতিক দায়িত্ব প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তায়।
রূপগঞ্জের সেনা আবাসন প্রকল্পের আশপাশে অনেক প্রকল্প গড়ে উঠলেও কখনো কোনো বিক্ষোভ বা জনগণের অসন্তুষ্টির খবর প্রচারিত হয়নি। আবাসন প্রকল্পের ধরন আর সেনা আবাসন প্রকল্পের ধরন যে এক নয়, সেটি অনেকের পক্ষেই বোঝা সম্ভব হয়নি। আবাসন প্রকল্পগুলো বাণিজ্যিকভাবে বাস্তবায়িত হলেও সেনা আবাসন প্রকল্প একটি কল্যাণমুখী কার্যক্রম, যেখানে কর্মকর্তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেওয়া হয়েছে। এখানে সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে সেনা কর্মকর্তারা তাঁদের অবসরজীবনের দিনগুলো কাটাবেন বলেই তাঁরা প্রকল্পটিতে অংশ নিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ক্রয়-বিক্রয় করে এই জমিগুলোর মালিকেরা নির্বিঘ্নে তাঁদের জমি নির্ধারিত মূল্যে রেজিস্ট্রি করে দিলেও হঠাৎ কিছু লোক কী কারণে বিক্ষুব্ধ হলো, তাও খতিয়ে দেখার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার অবকাশ রয়েছে।
এলাকার জনপ্রতিনিধিরা যখন কিছুদিন ধরে একটি যথাযথ সমাধান দেওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন এ ধরনের সংঘটিত জনরোষ কখনোই গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ দেশেরই সন্তান। তাঁরা এ দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সংকটকালে সরকারের আদেশে কর্তব্যপরায়ণতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না করে, সেনাবাহিনীর সদস্যদের অপমানিত করে, তাঁদের স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে, সরকারি সম্পদ নষ্ট করে কাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়।
সংকটকালে সরকারকে বিব্রত করার জন্য কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা আকস্মিকভাবে সৃষ্টি করা হয়। এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলে অনুধাবন করা যায়, কিছু প্রভাবশালী মহল তাদের স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য নিরীহ জনগণকে উসকে দিয়েছে। এটি দৃঢ়ভাবে বলা যায়, যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে ওই এলাকার জনগণের কিছুটা অসুবিধা হতেই পারে এবং সে ক্ষেত্রে অসুবিধাগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাও সম্ভব। দেশে যখন একটি গণতান্ত্রিক সরকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত, সে মুহূর্তে সেনা আবাসন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জনগণকে ন্যায্যমূল্য দেবে না অথবা তাঁদের জমি জোর করে দখল করে ফেলবে, সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
সেনা আবাসন প্রকল্প সেনা কর্মকর্তাদের কল্যাণের লক্ষ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, অন্যান্য সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আবাসন প্রকল্পে অর্থের জোগান দেওয়া হয় স্বল্প সুদ অথবা বিনা সুদে; অথচ সেনা কর্মকর্তারা নিজেদের সঞ্চিত অর্থে অথবা ঋণ করে জমির মূল্য পরিশোধ করছেন। যেহেতু স্থানীয় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে, সে কারণে এর কারণগুলো নির্ণয় করে তাদের আস্থায় নিয়ে সমাধান দেওয়া সমীচীন হবে। রূপগঞ্জের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, যেন শান্তিপূর্ণ আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়, সে ব্যাপারেও সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। সেনাসদস্যদের আবাসন প্রকল্পসহ অন্যান্য বেসরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে কোনো অভিযোগ থাকলে সে এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তারা অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে তৎপর হবেন, সেটিই সবার কাম্য।
লে. কর্নেল ওয়ালিউল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা।
বিভিন্ন সময় সেনাসদস্যরা জমি বা ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। ডিফেন্স অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি মিরপুরে একটি ডেভেলপার কোম্পানির কারণে ৪৯ জন অফিসার দীর্ঘদিন তাঁদের সমস্যার বেড়াজালে আবর্তিত হয়ে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শুধু মিরপুর নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগতভাবে জমি বা ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন অনেকে, যার সমাধান অনেক ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে সেনা কর্তৃপক্ষের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়নি। সেনাসদস্যদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পর তাঁদের কল্যাণমুখী কার্যক্রমে অংশ নেওয়া বা সেনাসদস্যরা সমস্যায় পড়লে এর সমাধান দেওয়ার নৈতিক দায়িত্ব প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তায়।
রূপগঞ্জের সেনা আবাসন প্রকল্পের আশপাশে অনেক প্রকল্প গড়ে উঠলেও কখনো কোনো বিক্ষোভ বা জনগণের অসন্তুষ্টির খবর প্রচারিত হয়নি। আবাসন প্রকল্পের ধরন আর সেনা আবাসন প্রকল্পের ধরন যে এক নয়, সেটি অনেকের পক্ষেই বোঝা সম্ভব হয়নি। আবাসন প্রকল্পগুলো বাণিজ্যিকভাবে বাস্তবায়িত হলেও সেনা আবাসন প্রকল্প একটি কল্যাণমুখী কার্যক্রম, যেখানে কর্মকর্তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেওয়া হয়েছে। এখানে সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে সেনা কর্মকর্তারা তাঁদের অবসরজীবনের দিনগুলো কাটাবেন বলেই তাঁরা প্রকল্পটিতে অংশ নিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ক্রয়-বিক্রয় করে এই জমিগুলোর মালিকেরা নির্বিঘ্নে তাঁদের জমি নির্ধারিত মূল্যে রেজিস্ট্রি করে দিলেও হঠাৎ কিছু লোক কী কারণে বিক্ষুব্ধ হলো, তাও খতিয়ে দেখার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার অবকাশ রয়েছে।
এলাকার জনপ্রতিনিধিরা যখন কিছুদিন ধরে একটি যথাযথ সমাধান দেওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন এ ধরনের সংঘটিত জনরোষ কখনোই গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ দেশেরই সন্তান। তাঁরা এ দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সংকটকালে সরকারের আদেশে কর্তব্যপরায়ণতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না করে, সেনাবাহিনীর সদস্যদের অপমানিত করে, তাঁদের স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে, সরকারি সম্পদ নষ্ট করে কাদের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয়।
সংকটকালে সরকারকে বিব্রত করার জন্য কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা আকস্মিকভাবে সৃষ্টি করা হয়। এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলে অনুধাবন করা যায়, কিছু প্রভাবশালী মহল তাদের স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য নিরীহ জনগণকে উসকে দিয়েছে। এটি দৃঢ়ভাবে বলা যায়, যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে ওই এলাকার জনগণের কিছুটা অসুবিধা হতেই পারে এবং সে ক্ষেত্রে অসুবিধাগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাও সম্ভব। দেশে যখন একটি গণতান্ত্রিক সরকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত, সে মুহূর্তে সেনা আবাসন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জনগণকে ন্যায্যমূল্য দেবে না অথবা তাঁদের জমি জোর করে দখল করে ফেলবে, সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
সেনা আবাসন প্রকল্প সেনা কর্মকর্তাদের কল্যাণের লক্ষ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, অন্যান্য সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আবাসন প্রকল্পে অর্থের জোগান দেওয়া হয় স্বল্প সুদ অথবা বিনা সুদে; অথচ সেনা কর্মকর্তারা নিজেদের সঞ্চিত অর্থে অথবা ঋণ করে জমির মূল্য পরিশোধ করছেন। যেহেতু স্থানীয় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে, সে কারণে এর কারণগুলো নির্ণয় করে তাদের আস্থায় নিয়ে সমাধান দেওয়া সমীচীন হবে। রূপগঞ্জের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, যেন শান্তিপূর্ণ আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হয়, সে ব্যাপারেও সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। সেনাসদস্যদের আবাসন প্রকল্পসহ অন্যান্য বেসরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে কোনো অভিযোগ থাকলে সে এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি কর্মকর্তারা অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে তৎপর হবেন, সেটিই সবার কাম্য।
লে. কর্নেল ওয়ালিউল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা।
No comments