ইভ টিজিং-আরেক যুদ্ধ by মালেকা বেগম
এ কথা তো বলা উচিত নয় যে সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! এ কথা তো বলা সংগত নয় যে রাষ্ট্রের সদিচ্ছা, রাষ্ট্রের ক্ষমতার চেয়ে সমাজের গুটিকয় বখাটে বেশি শক্তিধর হয়ে উঠেছে। সংগত না হলেও, উচিত না হলেও সেই কথাই বলতে বাধ্য হচ্ছি। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ধরে বখাটে সন্ত্রাসীরা আইনের শাসনকে চ্যালেঞ্জ করে বহাল তবিয়তে লুকিয়ে থাকছে, ধরা পড়লেও ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে।
স্কুল-কলেজে যাওয়ার পথে মেয়েদের পিছু নেওয়া, হয়রানি করা, অপহরণ করা ও উত্ত্যক্ত করার অপসাহস দেখায় বখাটে ছেলেরা; তাদের যারা রুখে দাঁড়ায়, তাদের খুন করছে মোটরসাইকেল চাপিয়ে। পুলিশের নাকি কিছুই করার থাকে না এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। সরকারের সবুজসংকেত দেওয়া কঠোর হুঁশিয়ারির পরই কেবল থানা-পুলিশ নড়েচড়ে ওঠে আর খুনি বখাটেদের ধরতে তৎপর হয়। এ ধরনের পুলিশ প্রশাসন ন্যায়বিচারে কতটা সহায়ক ভূমিকা রাখবে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে।
প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান সত্ত্বেও বখাটে সন্ত্রাসীরা ভয় পায় না, নিবৃত্ত হয় না। তারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে। এই প্রভাবশালীদের মধ্যে সমাজের অশুভ শক্তির প্রতিভূরা যেমন আছে, তেমনই আছে রাজনৈতিক নানা ক্ষমতাধর ব্যক্তি। গ্রাম-বাংলাজুড়ে, শহর-রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় বহু বছর ধরেই বখাটেদের উৎপাত চলেছে—এখন তা বিস্ফোরণের দাবানল ছড়িয়ে দিচ্ছে। সেসব বিস্ফোরণ চ্যালেঞ্জ করার মতো প্রগতিশীল নারী-পুরুষের সামাজিক শক্তি সংগঠন-আন্দোলন থাকলেও তা শুধু খুন-হত্যা ঘটনার পর সোচ্চার হচ্ছে। খুন-হত্যা-অপহরণ-উত্ত্যক্ত করার মতো অঘটনগুলো চিরতরে নির্মূল করার জন্য প্রয়োজন প্রতিটি গ্রাম ও শহরের এলাকায় এলাকায় বখাটে নির্মূল করার জন্য প্রতিরোধ কমিটি। এই কমিটির মধ্যে থাকা প্রয়োজন নারী-পুরুষ-কিশোর-কিশোরী-তরুণ-তরুণী ও অভিভাবক-প্রশাসকদের।
এই কমিটি গঠনের জন্য প্রতিনিধিস্থানীয় প্রগতিশীল নারী আন্দোলন সংগঠনের প্রতিনিধিরা, শিশু-কিশোর প্রতিনিধিরা, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা, প্রগতিশীল ছাত্র-যুব প্রতিনিধিরা, শিক্ষাবিদ ও সব পেশার নারী-পুরুষ; শ্রমিক-কৃষক-আদিবাসী জনগণ দল-মতনির্বিশেষে সংগঠিত হয়ে অতি দ্রুত প্রচার-আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে না পড়লে বখাটে রাজাকারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ সফল হবে না। সেই মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছে—এখন সংগঠিত হতে হবে মুক্তিযোদ্ধাদের।
শুভ পদক্ষেপ নিচ্ছেন সাংবাদিকতা পেশার ভাইবোনেরা। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খবর সংগ্রহ করছেন তাঁরা। শুধু খবর সংগ্রহই নয়, তাঁরা আন্দোলন-সংগঠকের ভূমিকাও রাখছেন। মানিকগঞ্জের সাংবাদিক অরূপ রায় যেভাবে সাহিরা শাওলিন শৈলীর ভেঙে যাওয়া বিয়ে সম্পাদনের জন্য সংগঠকের মতো ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন (প্রথম আলো, ৩০-১০-১০) এবং একই সঙ্গে শাওলিন ও তাঁর হবু স্বামীকে যে সন্ত্রাসীরা হুমকি দিচ্ছিল, তা প্রতিহত করার জন্য স্থানীয় সাংসদ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সম্পৃক্ত করেছেন, তা সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে সহায়ক হবে। এমন ভূমিকা রাখা সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই।
মধুখালী (ফরিদপুর) থেকে সাংবাদিক আশীষ-উর-রহমান ও পান্না বালার খবরে (প্রথম আলো, ৩০-১০-১০) বিশদভাবে জানা গেল বখাটেদের দৌরাত্ম্যের একাধিক ঘটনার কথা। তাঁদের ধন্যবাদ। চাঁপা রানীকে হত্যার ঘটনায় সরকারের আইনি শাসনের পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত আশার আলো দেখাবে কি না, তাতেও সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। এসব সংশয় চিরতরে দূর করতে হবে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সংবাদ সংগ্রহের জন্য দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকেরাই পারেন বখাটে-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নির্ভীক ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে। সাংবাদিকদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আপনারা স্থানীয়ভাবে এলাকায় এলাকায় সন্ত্রাসী ও বখাটের বিরুদ্ধে সামাজিক নেতৃত্বের ভূমিকা রাখুন। সমাজে নিশ্চয়ই তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
পুলিশের ভূমিকার ক্ষেত্রে সমস্যা প্রকট। প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, মহিলা-শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জোর দিয়ে বলছেন, বখাটে ও সন্ত্রাসী দমনে ভ্রাম্যমাণ পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হবে; বলছেন কঠোর আইন হবে। থানা-পুলিশ বলছে, আইন দিয়ে কিছু হবে না, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার সমস্যাটি সামাজিক। অতএব, সামাজিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। সবাই নানা ‘পদক্ষেপের ব্যবস্থা করা হচ্ছে’ কথা পর্যন্তই থেমে থাকছেন। বখাটে-সন্ত্রাসীদের উৎপাত বন্ধে সরকারকে এখনই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
কলেজশিক্ষক মিজানুর রহমান আর চাঁপা রানীর মতো আরও অনেকে বখাটে ও সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। এঁদের যুদ্ধ ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, বখাটেদের বিরুদ্ধে—সেই যুদ্ধে আমাদেরও ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
মালেকা বেগম: গবেষক, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান সত্ত্বেও বখাটে সন্ত্রাসীরা ভয় পায় না, নিবৃত্ত হয় না। তারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে। এই প্রভাবশালীদের মধ্যে সমাজের অশুভ শক্তির প্রতিভূরা যেমন আছে, তেমনই আছে রাজনৈতিক নানা ক্ষমতাধর ব্যক্তি। গ্রাম-বাংলাজুড়ে, শহর-রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় বহু বছর ধরেই বখাটেদের উৎপাত চলেছে—এখন তা বিস্ফোরণের দাবানল ছড়িয়ে দিচ্ছে। সেসব বিস্ফোরণ চ্যালেঞ্জ করার মতো প্রগতিশীল নারী-পুরুষের সামাজিক শক্তি সংগঠন-আন্দোলন থাকলেও তা শুধু খুন-হত্যা ঘটনার পর সোচ্চার হচ্ছে। খুন-হত্যা-অপহরণ-উত্ত্যক্ত করার মতো অঘটনগুলো চিরতরে নির্মূল করার জন্য প্রয়োজন প্রতিটি গ্রাম ও শহরের এলাকায় এলাকায় বখাটে নির্মূল করার জন্য প্রতিরোধ কমিটি। এই কমিটির মধ্যে থাকা প্রয়োজন নারী-পুরুষ-কিশোর-কিশোরী-তরুণ-তরুণী ও অভিভাবক-প্রশাসকদের।
এই কমিটি গঠনের জন্য প্রতিনিধিস্থানীয় প্রগতিশীল নারী আন্দোলন সংগঠনের প্রতিনিধিরা, শিশু-কিশোর প্রতিনিধিরা, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা, প্রগতিশীল ছাত্র-যুব প্রতিনিধিরা, শিক্ষাবিদ ও সব পেশার নারী-পুরুষ; শ্রমিক-কৃষক-আদিবাসী জনগণ দল-মতনির্বিশেষে সংগঠিত হয়ে অতি দ্রুত প্রচার-আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে না পড়লে বখাটে রাজাকারদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ সফল হবে না। সেই মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছে—এখন সংগঠিত হতে হবে মুক্তিযোদ্ধাদের।
শুভ পদক্ষেপ নিচ্ছেন সাংবাদিকতা পেশার ভাইবোনেরা। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খবর সংগ্রহ করছেন তাঁরা। শুধু খবর সংগ্রহই নয়, তাঁরা আন্দোলন-সংগঠকের ভূমিকাও রাখছেন। মানিকগঞ্জের সাংবাদিক অরূপ রায় যেভাবে সাহিরা শাওলিন শৈলীর ভেঙে যাওয়া বিয়ে সম্পাদনের জন্য সংগঠকের মতো ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন (প্রথম আলো, ৩০-১০-১০) এবং একই সঙ্গে শাওলিন ও তাঁর হবু স্বামীকে যে সন্ত্রাসীরা হুমকি দিচ্ছিল, তা প্রতিহত করার জন্য স্থানীয় সাংসদ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সম্পৃক্ত করেছেন, তা সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে সহায়ক হবে। এমন ভূমিকা রাখা সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই।
মধুখালী (ফরিদপুর) থেকে সাংবাদিক আশীষ-উর-রহমান ও পান্না বালার খবরে (প্রথম আলো, ৩০-১০-১০) বিশদভাবে জানা গেল বখাটেদের দৌরাত্ম্যের একাধিক ঘটনার কথা। তাঁদের ধন্যবাদ। চাঁপা রানীকে হত্যার ঘটনায় সরকারের আইনি শাসনের পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত আশার আলো দেখাবে কি না, তাতেও সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। এসব সংশয় চিরতরে দূর করতে হবে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সংবাদ সংগ্রহের জন্য দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকেরাই পারেন বখাটে-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নির্ভীক ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে। সাংবাদিকদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আপনারা স্থানীয়ভাবে এলাকায় এলাকায় সন্ত্রাসী ও বখাটের বিরুদ্ধে সামাজিক নেতৃত্বের ভূমিকা রাখুন। সমাজে নিশ্চয়ই তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
পুলিশের ভূমিকার ক্ষেত্রে সমস্যা প্রকট। প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, মহিলা-শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জোর দিয়ে বলছেন, বখাটে ও সন্ত্রাসী দমনে ভ্রাম্যমাণ পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হবে; বলছেন কঠোর আইন হবে। থানা-পুলিশ বলছে, আইন দিয়ে কিছু হবে না, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার সমস্যাটি সামাজিক। অতএব, সামাজিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। সবাই নানা ‘পদক্ষেপের ব্যবস্থা করা হচ্ছে’ কথা পর্যন্তই থেমে থাকছেন। বখাটে-সন্ত্রাসীদের উৎপাত বন্ধে সরকারকে এখনই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
কলেজশিক্ষক মিজানুর রহমান আর চাঁপা রানীর মতো আরও অনেকে বখাটে ও সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছেন। এঁদের যুদ্ধ ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, বখাটেদের বিরুদ্ধে—সেই যুদ্ধে আমাদেরও ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
মালেকা বেগম: গবেষক, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments