খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ-পাহাড়ে শিক্ষা by মান কুমারী

জেলা শহর খাগড়াছড়ির প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করার পরপরই বাম পাশে তাকালে চোখে পড়ে ঐতিহ্যবাহী খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজটি। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ জাতীয়করণ করা হয় ১৯৮০ সালে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে অনেক বছর পার করে দিয়েছে এই কলেজ।


এই বছর ১৩ জানুয়ারি হয়ে গেল কলেজের প্রথম পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর এই ক্যাম্পাসের ভেতর প্রবেশ করলেই বোঝা যায়, কতটা প্রাণোচ্ছল এই কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিশাল মাঠের দিকে তাকালে চোখে পড়ে শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট দলের মাঠে বসে আড্ডা দেওয়ার দৃশ্য। সেসব আড্ডা থেকে ভেসে আসে পড়াশোনা, রাজনীতির তুমুল তর্কবির্তক থেকে শুরু করে গিটারের টুং-টাং আওয়াজ।
এতসব কলেজ থাকতে এই কলেজেই কেন পড়াশোনা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কংজরী মারমা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে এই কলেজের নাম শুনে বড় হয়েছি। তা ছাড়া খাগড়াছড়ির বুকে নামকরা কলেজ এটি। যেখান থেকে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা শেষ করে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে আজ প্রতিষ্ঠিত।’ পাশে বসে থাকা এ কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলে, এ কলেজের পরিবেশ ভালো। এ ছাড়া ছাত্ররাজনীতি পড়ালেখায় তেমন প্রভাব খাটাতে পারে না। শিক্ষকদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন জানতে চাইলে, উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুক্তা সাহা বলে, ‘শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুসুলভ। যেকোনো বিষয়ে আমরা শিক্ষকদের পরামর্শ পাই।’
উচ্চমাধ্যমিক থেকে স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত পড়ানো হয় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মংশিপ্রু মারমা অভিযোগের সুরে বলেন, স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়ানোর ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। আর সে সঙ্গে বিষয়ের সংখ্যা যদি বাড়ানো যায়, তাহলে অনেক শিক্ষার্থী উপকৃত হতো। কলেজ সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাহার বলেন, পড়াশোনার মান ভালো হওয়া সত্ত্বেও অবকাঠামোগত বিভিন্ন অসুবিধা রয়েছে।
জানতে পারলাম, শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য আবাসিক হোস্টেল নেই। শহরের বাইরে থেকে অনেক শিক্ষার্থী আসে এই কলেজে পড়তে, যাদের যাতায়াত করতে অনেক অসুবিধা হয়। শিক্ষার্থীদের অনেকের অভিযোগ লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বই নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘কথা সত্যি। কিন্তু আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি কীভাবে বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো যায়।’ এ ছাড়া তিনি বলেন মার্কেটিং এবং অ্যাকাউন্টিং এই দুটি বিষয় শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ হবে বলে তিনি মনে করেন। কলেজের সার্বিক ফলাফল ভালো। তবে কিছু সংকট এখনো রয়েছে এ কলেজে।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ ঘিরে এখানকার শিক্ষার্থীদের অনেক স্বপ্ন। জান্নাতুল নাহার বলেন, ‘পড়াশোনার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি কলেজের ক্যানটিন-ব্যবস্থা, হোস্টেল ও পরিবহন-ব্যবস্থা যদি শিগগিরই চালু হয়, তবে আমাদের স্বপ্ন পূরণ অনেকটা সহজ হবে।’

No comments

Powered by Blogger.