বাঘা তেঁতুল-পদক ও পুরস্কার প্রশস্তি by সৈয়দ আবুল মকসুদ
চীনের ভিন্নমতাবলম্বী লিউ সিয়াওবোর দুর্ভাগ্য যে তিনি কারাগারে বন্দী থাকায় নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবরটি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেও জানতে পারেননি। আমার বদনসিব, মুক্ত হাওয়ায় বিচরণ করা সত্ত্বেও ১৮ ঘণ্টা পরে কাগজ পড়ে জানতে পারলাম যে আমি একটি মূল্যবান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি।
চীনের লিউ পেয়েছেন একা। বাংলায় আমি ‘পেয়েছি’ এক ডজন কম অর্ধশত বড় বড় ব্যক্তির সঙ্গে। পদকপ্রাপকদের দীর্ঘ তালিকায় আমার রোল নম্বর অনেক নিচে। পদকদাতারা নিশ্চয়ই জানেন, ছাত্রজীবনেও আমার রোল নম্বর নিচের দিকেই থাকত।
এই পুরস্কার এমন একজন মানুষের নামে দেওয়া হয়েছে, যিনি আলফ্রেড নোবেলের চেয়ে মহান। সুতরাং এর মর্যাদা নোবেল পুরস্কারের চেয়ে কম নয়। তাই প্রাপকদের কেউ কেউ খবরের কাগজে ছবি ছাপিয়েছেন গলায় মেডেল ঝুলিয়ে। এবারই যে প্রথম ৩৫-৪০ জন গান্ধী পুরস্কার পেলেন তা নয়, গত তিন-চার বছরে বিভিন্ন গান্ধী রিসার্চ প্রতিষ্ঠান শ খানেকের বেশি মানুষকে পুরস্কৃত করেছে।
দুই দফায় কয়েক বছর বাংলাদেশে থাকায় সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী ছিলেন আমাদের বন্ধুপ্রতিম। একদিন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম। এক ফাঁকে তিনি আমাকে একটি আমন্ত্রণপত্র দেখিয়ে বললেন, ‘এরা কারা?’ দেখলাম, আন্তর্জাতিক গান্ধী ফাউন্ডেশন বা রিসার্চ কাউন্সিল গোছের কোনো সংগঠন। ঠিকানা বাসাবো বা তালতলা-মুগদাপাড়া কোথাও। তারা জনা দশেক ব্যক্তিকে ‘আন্তর্জাতিক গান্ধী পুরস্কার’ দিয়েছে। প্রাপকদের অধিকাংশই ব্যাংক ও বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক। আমি রাষ্ট্রদূত চক্রবর্তীকে বললাম, আমি কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা এমডি নই, আমি কী করে বলব, এই পুরস্কারদাতাকর্ণরা কারা? তিনি হো হো করে হাসলেন।
বছর তিনেক আগে আমার গান্ধীবিষয়ক দুটি বই বেরোনোর পর দেশে গান্ধীর জীবন নিয়ে রিসার্চ করতে ও লোকজনকে পুরস্কার দিতে প্রকাণ্ড সব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। গত দুই বছরে গান্ধী গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে হারে পদক-পুরস্কার বিতরিত হচ্ছে, রিলিফের ঢেউটিনের মতো, তাতে ২০১১ নাগাদ কোনো এসএসসি পাস মানুষ বাদ থাকবে না। এবং এসব প্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতাও যে হারে পাচ্ছে, তাতে আগামী পাঁচ বছরে গান্ধী গবেষণা কাউন্সিল বা ফাউন্ডেশনে সারা দেশ ভরে যাবে। গান্ধী ছিলেন বেনিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ, তাই তাঁকে নিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করলে বাঙালি মুসলমানের দোষ কী? আর কোনো ব্যবসা যদি নাও হয়, ভারতীয় ভিসার তদবিরটা করা সহজ হবে।
বাংলার মাটিতে যার যা খুশি, তা-ই করতে পারে। এখানে কেউ প্রশ্ন করে না। জানতে চায় না, কষ্ট করে প্যাড ছেপেছেন, তাই তো যথেষ্ট। তারপর এত কষ্ট করে রিসার্চই বা কেন করছেন? কত বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন? আপনাদের প্রতিষ্ঠানের পাঠাগারে গান্ধীবিষয়ক বইয়ের সংখ্যা কত হাজার? এ পর্যন্ত কতগুলো বই প্রকাশ করেছেন? এত কাজ করছেন, বার্ষিক বাজেট কত? টাকাটা কে দেয়? রিসার্চ করছেন, চুটিয়ে করুন, পদক-পুরস্কার প্রবর্তন করলেন কেন? মাত্র ৩০-৪০ জনকে কেন দিলেন, হাজার খানেক গুণী মানুষ পেলেন না? এসব প্রশ্ন না করে যাঁরা গলা বাড়িয়ে দিলেন, পদকের মেডেলের জন্য তাঁদের ব্যক্তিত্বের তারিফ করি।
বঙ্গীয় সমাজে পুরস্কার পাওয়ার আনন্দের চেয়ে পুরস্কার দেওয়ার আনন্দ আরও বেশি। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় আমলা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডি এবং মিডিয়ার মালিকদের পুরস্কৃত করার যে আনন্দ, তা থেকে বঞ্চিত হতে চায় না বাঙালি। যে পদক আমি ‘পেয়েছি’, সেটি যে শুধু গলায় ঝুলিয়ে সবাই বাড়ি ফিরে গেছেন তা নয়, মেডেলটি শোকেসে পড়ে থাকবে নিশ্চেতন। ওদিকে চাকরির জীবনবৃত্তান্তে তার উল্লেখ থাকবে। তারপর একদিন অবিচুয়ারিতে লেখা হবে: দেশের জন্য তাঁর ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি আন্তর্জাতিক গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত হন।
মহাত্মা গান্ধীর প্রসঙ্গে ৩২-৩৩ বছর আগের একটি কথা মনে পড়ে। দেশে এত লোক থাকতে নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ১৯৭৮ সালে একদিন আমাকে ফোন করেন। তিনি বেশি বাক্যব্যয় করার মানুষ নন। বললেন, ‘আপনার কাছে একজনকে পাঠাচ্ছি। তিনি আমার শিক্ষক।’ ১০ মিনিটের মধ্যে যিনি আমার কাছে এলেন তাঁর নাম তাফাজ্জল হোসেইন, চৌমুহনী কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি গান্ধীজির নোয়াখালী শান্তি মিশনে কয়েক মাস কাজ করেন। গান্ধীজির হাতে লেখা একটি চিঠি তিনি আমাকে দেখান। ঘণ্টা দুই আমি অধ্যক্ষ টি হোসেইনের সঙ্গে কথা বলি।
তিনি চলে গেলে আমি সিদ্ধান্ত নিই যে গান্ধীজিকে নিয়ে কিছু লিখব। আমার বাবাও গান্ধীজির ভক্ত ছিলেন। প্রথম অসহযোগ আন্দোলনে লাখ লাখ তরুণের মতো তিনিও অংশ নিয়েছিলেন। গত ৩০ বছরে নোয়াখালীর বিভিন্ন থানা থেকে অমানুষিক কষ্টে আমি ১৯৪৬-৪৭ সালের কাগজপত্র জোগাড় করি। বাংলাদেশ ও ভারতের গান্ধীর সংস্পর্শে এসেছিলেন এমন সাড়ে তিন শ মানুষের সাক্ষাৎকার নিই। তাঁদের ও তাঁদের বংশধরদের কাছ থেকে সেকালের চিঠিপত্র সংগ্রহ করি, যার সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজার। সেগুলো কয়েক খণ্ডে প্রকাশিত হবে।
আমি যদি আগে জানতাম যে বাংলাদেশে এত গান্ধী গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আছে, তাহলে ভারতের গান্ধীবাদীদের পেছনে ঘুরে সময় নষ্ট করতাম না। তাদের তক্তার চৌকিতে খদ্দরের চাদর বিছিয়ে শুতাম না। এখন দেখছি গান্ধীর নামে বাংলাদেশে টাকা উড়ছে। আমি ভিক্ষাপাত্র হাতে নিয়ে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত বহু মানুষের দরোজায় মাথা ঠুকেছি (তাঁদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।) গান্ধী-সম্পর্কে গবেষণার কথা শুনে তাঁদের চওড়া কপালে রেখা দেখা গেছে, ভ্রু কেঁপে উঠেছে এবং চোখে দেখেছি সন্দেহের গভীর ছায়া। তাঁরা ভেবেছেন, গান্ধীর বই লেখায় তোমাকে টাকা দেব, এত বোকা আমরা, তুমি তা দিয়ে রুই, চিতল আর গুজি আইড় কিনবে। তাঁদের অনুমান যে অমূলক—তা-ই বা বলি কী করে।
ভারত থেকে এ মাসেই গান্ধীবিষয়ক আমার একটি বাংলা ও দুটি ইংরেজি বই বেরোচ্ছে। জানুয়ারিতে বেরোবে ঢাকা থেকে একটি বড় বই। যার উপকরণ সংগ্রহ করতে হয়েছে ৩০ বছর ধরে। ধারণা করি, এরপর বাংলাদেশ থেকে প্রতি বইমেলায় ২০-৩০টি করে বই বেরোবে। যার কোনোটির শিরোনাম হবে ‘মুক্তিযুদ্ধে গান্ধী’, কোনোটির ‘ঠাটারীবাজারে গান্ধী’ কোনোটির ‘ইভ টিজিং প্রতিরোধে গান্ধীর দর্শন’।
টিআইবি যা-ই বলুক, দুর্নীতি শুধু সরকারি কর্মকর্তারা করেন না, শান্তিবাদীরাও করেন, ভিসাপ্রত্যাশীরাও করেন। গান্ধীর অতিভক্তরা কী করেন তা শুধু মহাত্মার আত্মার পক্ষেই নজরদারি করা সম্ভব।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
এই পুরস্কার এমন একজন মানুষের নামে দেওয়া হয়েছে, যিনি আলফ্রেড নোবেলের চেয়ে মহান। সুতরাং এর মর্যাদা নোবেল পুরস্কারের চেয়ে কম নয়। তাই প্রাপকদের কেউ কেউ খবরের কাগজে ছবি ছাপিয়েছেন গলায় মেডেল ঝুলিয়ে। এবারই যে প্রথম ৩৫-৪০ জন গান্ধী পুরস্কার পেলেন তা নয়, গত তিন-চার বছরে বিভিন্ন গান্ধী রিসার্চ প্রতিষ্ঠান শ খানেকের বেশি মানুষকে পুরস্কৃত করেছে।
দুই দফায় কয়েক বছর বাংলাদেশে থাকায় সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী ছিলেন আমাদের বন্ধুপ্রতিম। একদিন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম। এক ফাঁকে তিনি আমাকে একটি আমন্ত্রণপত্র দেখিয়ে বললেন, ‘এরা কারা?’ দেখলাম, আন্তর্জাতিক গান্ধী ফাউন্ডেশন বা রিসার্চ কাউন্সিল গোছের কোনো সংগঠন। ঠিকানা বাসাবো বা তালতলা-মুগদাপাড়া কোথাও। তারা জনা দশেক ব্যক্তিকে ‘আন্তর্জাতিক গান্ধী পুরস্কার’ দিয়েছে। প্রাপকদের অধিকাংশই ব্যাংক ও বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক। আমি রাষ্ট্রদূত চক্রবর্তীকে বললাম, আমি কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা এমডি নই, আমি কী করে বলব, এই পুরস্কারদাতাকর্ণরা কারা? তিনি হো হো করে হাসলেন।
বছর তিনেক আগে আমার গান্ধীবিষয়ক দুটি বই বেরোনোর পর দেশে গান্ধীর জীবন নিয়ে রিসার্চ করতে ও লোকজনকে পুরস্কার দিতে প্রকাণ্ড সব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। গত দুই বছরে গান্ধী গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে হারে পদক-পুরস্কার বিতরিত হচ্ছে, রিলিফের ঢেউটিনের মতো, তাতে ২০১১ নাগাদ কোনো এসএসসি পাস মানুষ বাদ থাকবে না। এবং এসব প্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতাও যে হারে পাচ্ছে, তাতে আগামী পাঁচ বছরে গান্ধী গবেষণা কাউন্সিল বা ফাউন্ডেশনে সারা দেশ ভরে যাবে। গান্ধী ছিলেন বেনিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ, তাই তাঁকে নিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করলে বাঙালি মুসলমানের দোষ কী? আর কোনো ব্যবসা যদি নাও হয়, ভারতীয় ভিসার তদবিরটা করা সহজ হবে।
বাংলার মাটিতে যার যা খুশি, তা-ই করতে পারে। এখানে কেউ প্রশ্ন করে না। জানতে চায় না, কষ্ট করে প্যাড ছেপেছেন, তাই তো যথেষ্ট। তারপর এত কষ্ট করে রিসার্চই বা কেন করছেন? কত বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন? আপনাদের প্রতিষ্ঠানের পাঠাগারে গান্ধীবিষয়ক বইয়ের সংখ্যা কত হাজার? এ পর্যন্ত কতগুলো বই প্রকাশ করেছেন? এত কাজ করছেন, বার্ষিক বাজেট কত? টাকাটা কে দেয়? রিসার্চ করছেন, চুটিয়ে করুন, পদক-পুরস্কার প্রবর্তন করলেন কেন? মাত্র ৩০-৪০ জনকে কেন দিলেন, হাজার খানেক গুণী মানুষ পেলেন না? এসব প্রশ্ন না করে যাঁরা গলা বাড়িয়ে দিলেন, পদকের মেডেলের জন্য তাঁদের ব্যক্তিত্বের তারিফ করি।
বঙ্গীয় সমাজে পুরস্কার পাওয়ার আনন্দের চেয়ে পুরস্কার দেওয়ার আনন্দ আরও বেশি। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় আমলা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডি এবং মিডিয়ার মালিকদের পুরস্কৃত করার যে আনন্দ, তা থেকে বঞ্চিত হতে চায় না বাঙালি। যে পদক আমি ‘পেয়েছি’, সেটি যে শুধু গলায় ঝুলিয়ে সবাই বাড়ি ফিরে গেছেন তা নয়, মেডেলটি শোকেসে পড়ে থাকবে নিশ্চেতন। ওদিকে চাকরির জীবনবৃত্তান্তে তার উল্লেখ থাকবে। তারপর একদিন অবিচুয়ারিতে লেখা হবে: দেশের জন্য তাঁর ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি আন্তর্জাতিক গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত হন।
মহাত্মা গান্ধীর প্রসঙ্গে ৩২-৩৩ বছর আগের একটি কথা মনে পড়ে। দেশে এত লোক থাকতে নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ১৯৭৮ সালে একদিন আমাকে ফোন করেন। তিনি বেশি বাক্যব্যয় করার মানুষ নন। বললেন, ‘আপনার কাছে একজনকে পাঠাচ্ছি। তিনি আমার শিক্ষক।’ ১০ মিনিটের মধ্যে যিনি আমার কাছে এলেন তাঁর নাম তাফাজ্জল হোসেইন, চৌমুহনী কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি গান্ধীজির নোয়াখালী শান্তি মিশনে কয়েক মাস কাজ করেন। গান্ধীজির হাতে লেখা একটি চিঠি তিনি আমাকে দেখান। ঘণ্টা দুই আমি অধ্যক্ষ টি হোসেইনের সঙ্গে কথা বলি।
তিনি চলে গেলে আমি সিদ্ধান্ত নিই যে গান্ধীজিকে নিয়ে কিছু লিখব। আমার বাবাও গান্ধীজির ভক্ত ছিলেন। প্রথম অসহযোগ আন্দোলনে লাখ লাখ তরুণের মতো তিনিও অংশ নিয়েছিলেন। গত ৩০ বছরে নোয়াখালীর বিভিন্ন থানা থেকে অমানুষিক কষ্টে আমি ১৯৪৬-৪৭ সালের কাগজপত্র জোগাড় করি। বাংলাদেশ ও ভারতের গান্ধীর সংস্পর্শে এসেছিলেন এমন সাড়ে তিন শ মানুষের সাক্ষাৎকার নিই। তাঁদের ও তাঁদের বংশধরদের কাছ থেকে সেকালের চিঠিপত্র সংগ্রহ করি, যার সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজার। সেগুলো কয়েক খণ্ডে প্রকাশিত হবে।
আমি যদি আগে জানতাম যে বাংলাদেশে এত গান্ধী গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আছে, তাহলে ভারতের গান্ধীবাদীদের পেছনে ঘুরে সময় নষ্ট করতাম না। তাদের তক্তার চৌকিতে খদ্দরের চাদর বিছিয়ে শুতাম না। এখন দেখছি গান্ধীর নামে বাংলাদেশে টাকা উড়ছে। আমি ভিক্ষাপাত্র হাতে নিয়ে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত বহু মানুষের দরোজায় মাথা ঠুকেছি (তাঁদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।) গান্ধী-সম্পর্কে গবেষণার কথা শুনে তাঁদের চওড়া কপালে রেখা দেখা গেছে, ভ্রু কেঁপে উঠেছে এবং চোখে দেখেছি সন্দেহের গভীর ছায়া। তাঁরা ভেবেছেন, গান্ধীর বই লেখায় তোমাকে টাকা দেব, এত বোকা আমরা, তুমি তা দিয়ে রুই, চিতল আর গুজি আইড় কিনবে। তাঁদের অনুমান যে অমূলক—তা-ই বা বলি কী করে।
ভারত থেকে এ মাসেই গান্ধীবিষয়ক আমার একটি বাংলা ও দুটি ইংরেজি বই বেরোচ্ছে। জানুয়ারিতে বেরোবে ঢাকা থেকে একটি বড় বই। যার উপকরণ সংগ্রহ করতে হয়েছে ৩০ বছর ধরে। ধারণা করি, এরপর বাংলাদেশ থেকে প্রতি বইমেলায় ২০-৩০টি করে বই বেরোবে। যার কোনোটির শিরোনাম হবে ‘মুক্তিযুদ্ধে গান্ধী’, কোনোটির ‘ঠাটারীবাজারে গান্ধী’ কোনোটির ‘ইভ টিজিং প্রতিরোধে গান্ধীর দর্শন’।
টিআইবি যা-ই বলুক, দুর্নীতি শুধু সরকারি কর্মকর্তারা করেন না, শান্তিবাদীরাও করেন, ভিসাপ্রত্যাশীরাও করেন। গান্ধীর অতিভক্তরা কী করেন তা শুধু মহাত্মার আত্মার পক্ষেই নজরদারি করা সম্ভব।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
No comments