ধর্ম-ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় রোজা by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
‘রোজা’ ফারসি শব্দ; আরবিতে একে ‘সাওম’ বলা হয়। এর আভিধানিক অর্থ অবিরাম চেষ্টা, আত্মসংযম, বিরত থাকা, সংযত রাখা প্রভৃতি। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদতের নিয়তে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনোরূপ পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা। প্রত্যেক বয়ঃপ্রাপ্ত, সক্ষম, সুস্থ, মুকিম
ও বুদ্ধিমান মুসলমান নর-নারীর ওপর রমজান মাসে রোজাব্রত পালন করা ফরজ বা অবশ্যকর্তব্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ১. “আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল” বলে সাক্ষ্য দেওয়া, ২. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, ৩. জাকাত প্রদান করা, ৪. রমজান মাসে রোজা পালন করা ও ৫. সামর্থ্যবান ব্যক্তির বায়তুল্লাহ জিয়ারত করা।’ (বুখারি ও মুসলিম)
ইসলামের দৃষ্টিতে রোজা হলো এমন এক সবর্জনীন ইবাদত, যা রোজাদারকে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধন, ধর্মীয় মূল্যবোধ, নীতিনৈতিকতা, অন্তরের সজীবতা, হূদয়ের পবিত্রতা ও চিন্তাধারার বিশুদ্ধতা প্রদান করে। এ রোজা পালনের মাধ্যমে তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করা যায়। মানুষের ইহকালীন জীবনে সব ধরনের গুনাহ বা অকল্যাণকর কাজ বর্জন করা এবং সব ধরনের সওয়াবের কাজ বা কল্যাণকর কাজ পালন করার নাম হলো তাকওয়া বা পরহেজগারি। রোজাদার যখন রমজান মাসে রোজা রাখেন তখন তিনি আত্মশুদ্ধি লাভ করে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করেন। রোজা পালনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রোজার ধর্মীয় গুরুত্ব সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের (নবীগণের উম্মত) ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া বা পরহেজগারি অর্জন করতে পারো।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৩)
মানুষকে আত্মিক, নৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধ ও চারিত্রিক কল্যাণের ধারক বানানোর জন্য আল্লাহ তাআলা রোজাকে ফরজ করেছেন। মাহে রমজানে রোজাদার ব্যক্তিকে রোজা যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করে এবং সব ধরনের খারাপ কাজ থেকে বিরত বা সংযত রাখে। ঢাল যেমন শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে, তেমনি রোজাও শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য ঢালস্বরূপ। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘রোজা হচ্ছে একটি ঢালের ন্যায়।’ (বুখারি)
রমজান মাসে ধর্মভীরু মানুষ লোক দেখানোর জন্য পানাহার পরিত্যাগ করেন না, ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্টও সহ্য করেন না। রোজাদার ব্যক্তি একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোজাব্রত পালন করে থাকেন। এ জন্য আল্লাহ তাআলা রোজাদার ব্যক্তিকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। রোজা একমাত্র মহান আল্লাহর ভালোবাসারই পরিচায়ক। তাই আল্লাহ তাআলা রোজাদার ব্যক্তিকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে যে আল্লাহ তাআলা বলেছেন: ‘রোজা শুধু আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’ (বুখারি ও মুসলিম)
রমজান মাসের রোজাকে কেবল ইবাদত ও তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণরূপেই সুনির্দিষ্ট করা হয়নি, বরং মহাগ্রন্থ আল কোরআনরূপে মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে যে বিরাট ও মহান ঐশী নিয়ামত আল্লাহ তাআলা দান করেছেন, রোজাকে এর শুকরিয়া আদায় করার উপায় বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। এ জন্য মাহে রমজানে রোজাদার ব্যক্তি বেশি বেশি পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন। রোজা ও কোরআন শরিফ কিয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে এবং আল্লাহ তাআলা তাদের সুপারিশ কবুল করবেন। এ মর্মে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজাসমূহ এবং আল কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজাসমূহ বলবে, হে প্রতিপালক! আমি এই ব্যক্তিকে দিনে খাবার ও অন্যান্য কামনা-বাসনা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আল কোরআন বলবে, আমি এই ব্যক্তিকে রাতের নিদ্রা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ কবুল করুন। আল্লাহ তাআলা তাদের সুপারিশ কবুল করবেন।’ (বায়হাকি, মুসনাদে আহমাদ)
মাহে রমজানে রোজার মাধ্যমে মুমিন বান্দা এক রুহানি তৃপ্তি, আত্মিক উন্নয়ন, নতুন উদ্যম ও অনুপ্রেরণা লাভ করে। কোনো মানুষ যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে, স্বভাবতই সে তার পূর্ণ প্রতিদান বা ফল পেতে চায়, অনুরূপভাবে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের ক্ষেত্রেও ইবাদতের বেলায় এ ধারাটি বিদ্যমান। একজন মুসলমান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে সারা দিন রোজা রাখেন। এই অবস্থায় দিনান্তে তাঁর মধ্যে প্রতিদান লাভের একটি প্রেরণা জেগে ওঠে। তাই রমজান মাসে রোজাদার ব্যক্তির পূর্বের গুনাহ পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অত্যন্ত দয়াপরবশ হয়ে মার্জনা করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে রোজা আদায় করল, সে পূর্বে কৃত গুনাহ মার্জনা করিয়ে নিল।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মাহে রমজানে রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্যধারণপূর্বক সকল প্রকার পাপকাজ, পানাহার, ইন্দ্রিয় তৃপ্তি, ভোগ বিলাসিতা ও লোভ-লালসা থেকে বিরত থাকেন। সে জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে প্রতিদানস্বরূপ জান্নাত প্রদান করবেন। নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘যারা রমজান মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রোজা পালন করেছে, তারা ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাদের মাতা তাদের নিষ্পাপরূপে প্রসব করেছিলেন।’
রোজার সঙ্গে ঈমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও উত্তম বিনিময় লাভের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালনের যথেষ্ট ধর্মীয় গুরুত্ব বা আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে। বস্তুত, প্রকৃত রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করেন এবং তাঁর জান্নাতের পথ সুগম হয়। মহানবী (সা.)-এর ফরমান, ‘আর এটি (রমজান) এমন একটি মাস, যার প্রথম ভাগে আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগে গুনাহর মাগফিরাত এবং শেষ ভাগে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত বা মুক্তি লাভ রয়েছে।’ (মিশকাত) রোজার প্রকৃত হাকিকত ও ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার বিশেষ তাৎপর্য হচ্ছে তাকওয়া ও হূদয়ের পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। তাই মাহে রমজানে মুসলমানদের রোজা পালন শুধু ইবাদত ও প্রশিক্ষণই নয়, সেই সঙ্গে পবিত্র কোরআনের মতো শ্রেষ্ঠ নিয়ামতের প্রতি যথার্থ ব্যবহার করতে হবে, আল কোরআনের অনুশাসন মেনে চলা উচিত। সুতরাং ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির জন্য তাকওয়া অর্জন এবং আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য মাহে রমজানে সিয়াম পালন করা অত্যাবশ্যক।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
ইসলামের দৃষ্টিতে রোজা হলো এমন এক সবর্জনীন ইবাদত, যা রোজাদারকে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধন, ধর্মীয় মূল্যবোধ, নীতিনৈতিকতা, অন্তরের সজীবতা, হূদয়ের পবিত্রতা ও চিন্তাধারার বিশুদ্ধতা প্রদান করে। এ রোজা পালনের মাধ্যমে তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করা যায়। মানুষের ইহকালীন জীবনে সব ধরনের গুনাহ বা অকল্যাণকর কাজ বর্জন করা এবং সব ধরনের সওয়াবের কাজ বা কল্যাণকর কাজ পালন করার নাম হলো তাকওয়া বা পরহেজগারি। রোজাদার যখন রমজান মাসে রোজা রাখেন তখন তিনি আত্মশুদ্ধি লাভ করে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করেন। রোজা পালনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রোজার ধর্মীয় গুরুত্ব সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের (নবীগণের উম্মত) ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া বা পরহেজগারি অর্জন করতে পারো।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৩)
মানুষকে আত্মিক, নৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধ ও চারিত্রিক কল্যাণের ধারক বানানোর জন্য আল্লাহ তাআলা রোজাকে ফরজ করেছেন। মাহে রমজানে রোজাদার ব্যক্তিকে রোজা যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করে এবং সব ধরনের খারাপ কাজ থেকে বিরত বা সংযত রাখে। ঢাল যেমন শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে, তেমনি রোজাও শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য ঢালস্বরূপ। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘রোজা হচ্ছে একটি ঢালের ন্যায়।’ (বুখারি)
রমজান মাসে ধর্মভীরু মানুষ লোক দেখানোর জন্য পানাহার পরিত্যাগ করেন না, ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্টও সহ্য করেন না। রোজাদার ব্যক্তি একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোজাব্রত পালন করে থাকেন। এ জন্য আল্লাহ তাআলা রোজাদার ব্যক্তিকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। রোজা একমাত্র মহান আল্লাহর ভালোবাসারই পরিচায়ক। তাই আল্লাহ তাআলা রোজাদার ব্যক্তিকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে যে আল্লাহ তাআলা বলেছেন: ‘রোজা শুধু আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’ (বুখারি ও মুসলিম)
রমজান মাসের রোজাকে কেবল ইবাদত ও তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণরূপেই সুনির্দিষ্ট করা হয়নি, বরং মহাগ্রন্থ আল কোরআনরূপে মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে যে বিরাট ও মহান ঐশী নিয়ামত আল্লাহ তাআলা দান করেছেন, রোজাকে এর শুকরিয়া আদায় করার উপায় বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। এ জন্য মাহে রমজানে রোজাদার ব্যক্তি বেশি বেশি পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন। রোজা ও কোরআন শরিফ কিয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে এবং আল্লাহ তাআলা তাদের সুপারিশ কবুল করবেন। এ মর্মে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজাসমূহ এবং আল কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজাসমূহ বলবে, হে প্রতিপালক! আমি এই ব্যক্তিকে দিনে খাবার ও অন্যান্য কামনা-বাসনা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আল কোরআন বলবে, আমি এই ব্যক্তিকে রাতের নিদ্রা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ কবুল করুন। আল্লাহ তাআলা তাদের সুপারিশ কবুল করবেন।’ (বায়হাকি, মুসনাদে আহমাদ)
মাহে রমজানে রোজার মাধ্যমে মুমিন বান্দা এক রুহানি তৃপ্তি, আত্মিক উন্নয়ন, নতুন উদ্যম ও অনুপ্রেরণা লাভ করে। কোনো মানুষ যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে, স্বভাবতই সে তার পূর্ণ প্রতিদান বা ফল পেতে চায়, অনুরূপভাবে আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের ক্ষেত্রেও ইবাদতের বেলায় এ ধারাটি বিদ্যমান। একজন মুসলমান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের লক্ষ্যে সারা দিন রোজা রাখেন। এই অবস্থায় দিনান্তে তাঁর মধ্যে প্রতিদান লাভের একটি প্রেরণা জেগে ওঠে। তাই রমজান মাসে রোজাদার ব্যক্তির পূর্বের গুনাহ পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অত্যন্ত দয়াপরবশ হয়ে মার্জনা করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে রোজা আদায় করল, সে পূর্বে কৃত গুনাহ মার্জনা করিয়ে নিল।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মাহে রমজানে রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্যধারণপূর্বক সকল প্রকার পাপকাজ, পানাহার, ইন্দ্রিয় তৃপ্তি, ভোগ বিলাসিতা ও লোভ-লালসা থেকে বিরত থাকেন। সে জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে প্রতিদানস্বরূপ জান্নাত প্রদান করবেন। নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘যারা রমজান মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রোজা পালন করেছে, তারা ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাদের মাতা তাদের নিষ্পাপরূপে প্রসব করেছিলেন।’
রোজার সঙ্গে ঈমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও উত্তম বিনিময় লাভের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালনের যথেষ্ট ধর্মীয় গুরুত্ব বা আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে। বস্তুত, প্রকৃত রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করেন এবং তাঁর জান্নাতের পথ সুগম হয়। মহানবী (সা.)-এর ফরমান, ‘আর এটি (রমজান) এমন একটি মাস, যার প্রথম ভাগে আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগে গুনাহর মাগফিরাত এবং শেষ ভাগে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত বা মুক্তি লাভ রয়েছে।’ (মিশকাত) রোজার প্রকৃত হাকিকত ও ধর্মীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার বিশেষ তাৎপর্য হচ্ছে তাকওয়া ও হূদয়ের পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। তাই মাহে রমজানে মুসলমানদের রোজা পালন শুধু ইবাদত ও প্রশিক্ষণই নয়, সেই সঙ্গে পবিত্র কোরআনের মতো শ্রেষ্ঠ নিয়ামতের প্রতি যথার্থ ব্যবহার করতে হবে, আল কোরআনের অনুশাসন মেনে চলা উচিত। সুতরাং ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির জন্য তাকওয়া অর্জন এবং আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য মাহে রমজানে সিয়াম পালন করা অত্যাবশ্যক।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও কলাম লেখক।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments