‘ফুটবল খেলার জন্যই আমার জন্ম’
পেলে সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। তিনি কী বলেন সেটাই শোনার বিষয়। ফিফাডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফুটবল কিংবদন্তি বলেছেন নিজের ক্যারিয়ার, ২০১৪ বিশ্বকাপে স্বাগতিক ব্রাজিলের সম্ভাবনা এবং বার্সেলোনার খেলার ধরন নিয়ে। সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ এখানে তুলে দেওয়া হলো
২০১৪ বিশ্বকাপ ফুটবল তো ঘনিয়ে আসছে। আপনার অনুভূতি?
পেলে: কোনো সন্দেহ নেই, এটা অন্য রকম একটা সময় এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপটা শেষ পর্যন্ত আমার দেশে আসছে। মাঠের বাইরে থেকে হলেও আমি টুর্নামেন্টের আয়োজন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকতে চাই।
বিশ্বকাপ নিয়ে ব্রাজিলে অনুভূতিটা কী রকম?
পেলে: ব্রাজিলে ফুটবলই সব। ফুটবলই জীবন! এখানে প্রত্যাশা ও উচ্চাশার মাত্রাটা এত বেশি যে এর সঙ্গে কোনো তুলনা চলে না। সবাই জানে, শুরুতে কিছু সমস্যা থাকলেও সেসব দূর হয়েছে। আয়োজন সফল করতে যাঁর যাঁর কাজ সবাই যাতে ঠিকমতো করেন সে জন্য রাষ্ট্রপতি দিলমা রুসেফ পর্যন্ত সক্রিয়।
এটা দারুণ একটা সুযোগ। শুধু ফুটবলের জন্যই নয়। বিশ্বকে দেখানোর সময় এসেছে ব্রাজিল তাদের কী দিতে পারে। অনেক পর্যটক আসবেন আর এই সুযোগ নিয়ে আমাদের দেশ হিসেবে এগিয়ে যেতে হবে। অর্থনীতিটা এখন বেশ ভালো অবস্থায় আছে। তবে এই সুযোগে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে।
এবার সেলেকাওদের নিয়ে কথা বলি। তরুণ বয়সেই দলের নির্ভরতা হয়ে উঠেছেন নেইমার, গানসো। এটা কি তাঁদের জন্য চাপ নয়?
পেলে: এটা নির্ভর করছে আপনি ‘তরুণ’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন সেটার ওপর। তাদের বয়স ২০, কিন্তু আমি তো ১৭ বছর বয়সেই প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছি। তারা এখন আর বাচ্চা নেই (হেসে)। তাদের ওপর প্রচুর চাপ, কারণ তারাই এই সময়ের তারকা। তবে এটা শুধু ব্যক্তিবিশেষের ওপরই বর্তায় না। দলকে একটা ইউনিট হিসেবেই খেলতে হয়। আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে এবং দেশের বাইরে সব সময়ই ব্রাজিলের বড় মাপের সব খেলোয়াড় খেলছে। তাদের একত্র করে একটা দল গড়তে হবে। যা করার সময় এখনো আমাদের হাতে আছে।
১৯৭০ সালে আমার শেষ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলে রিভেলিনো, টোস্টাও ও পেলের মতো বড় মাপের খেলোয়াড় ছিল। তবে আমরা বেশ সংগঠিতও ছিলাম এবং একটা দল হিসেবে কঠোর পরিশ্রম করতাম। একটা ইউনিট হিসেবে গড়ে উঠি আমরা। আমার কাছে এটাই সাফল্যের চাবিকাঠি।
ব্রাজিল দল কি সে পথেই এগোচ্ছে?
পেলে: সে রকমই আশা করছি! ভালো খবর হচ্ছে কোচ আমাদের সমর্থন পাচ্ছেন এবং আমরা তাঁকে তাঁর চিন্তাভাবনা বাস্তবায়নের জন্য সময় দিয়েছি। আপনি যদি কোচ বদলান তবে নতুন লোকটা এসেই খেলোয়াড় পাল্টাবেন, যেটা ভালো হয় না। আপনাকে মনে রাখতে হবে ব্রাজিল দলের ওপর বিশাল এক দায়িত্ব চেপেছে, কারণ, তারা দেশে খেলবে এবং সমর্থকেরা তাদের কাছ থেকে অনেক বেশিই চাইবে।
অভিজ্ঞতা বেশি এমন কোন খেলোয়াড় এই চ্যালেঞ্জে কাজে আসতে পারে বলে মনে করেন?
পেলে: আমাদের বেশ কিছু অভিজ্ঞ বড় মাপের খেলোয়াড় আছে। কিন্তু বিশ্বকাপটাও হবে দুই বছর পর। কাজটা লম্বা সময়ের আর আমাদের দরকার উপযুক্ত পরিকল্পনা করা এবং নিয়মানুবর্তী হওয়া। খেলোয়াড়দের একসঙ্গে খেলার অভ্যাস করতে হবে। গত কয়েক বছরে আমরা এটাই দেখে আসছি। হল্যান্ড, স্পেন ও বার্সেলোনা এই দলগুলো অনেক দিন ধরেই একই দল নিয়ে খেলছে।
বার্সেলোনার কথা যখন উঠলই, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা সান্তোসকে খুব সহজেই হারিয়ে দিল, অবাক হননি?
পেলে: না, সত্যিই হইনি। বার্সার এই দলটাকে আমি অনেক দিন থেকেই দেখছি। তারা যেন ঠিক আমার সেরা সময়ের সান্তোস অথবা বেনফিকা, আয়াক্স, এসি মিলান ও রিয়াল মাদ্রিদের সেরা সময়ের মতো। এরা সবাই নিজেদের সময়ে একটা মানদণ্ড দাঁড় করিয়েছিল। তাদের সাফল্যের মূলে ছিল বেশ লম্বা একটা সময়ের জন্য নির্দিষ্ট একটা লাইনআপ গড়ে তোলা। ভুলে যাবেন না স্পেন জাতীয় দলের মূল শক্তিটাই হচ্ছে বার্সেলোনার খেলোয়াড়েরা। একসময় আয়াক্স ও হল্যান্ড এবং সান্তোস ও ব্রাজিল জাতীয় দলের সম্পর্কটাও ছিল সে রকমই।
তাদের খেলার ধরনটাই কি ফুটবলের ভবিষ্যৎ?
পেলে: এই ফুটবলটাই মানুষ দেখতে চায় এবং আমি সত্যিই আশা করি, এটাই গড়ে দেবে ভবিষ্যত ফুটবলের নকশা। আমি সত্যিই চাই শক্তির বিপক্ষে দক্ষতা জিতুক। জার্মানিকে দেখুন, তারা আজকাল অনেক বেশি কৌশলী ফুটবল খেলছে, এই ফুটবলই তো আমরা দেখতে চাই। আমরা চাই বল দৌড়াবে, খেলোয়াড়েরা নয়। আর এটা আপনি সেই দলের কাছ থেকেই পাবেন যারা সুসংগঠিত। বার্সা আজকাল এভাবেই খেলছে আর একসময় এটা খেলত আমার সান্তোস। আমি ভাগ্যবান যে এই ক্লাবে খেলতে পেরেছি।
কিন্তু আপনার সাফল্যের পেছনে তো ভাগ্য নয়, আছে প্রতিভা...
পেলে: আমার বাবা আমাকে বলত, ‘তুমি জন্মেছ ফুটবল খেলার জন্য। তুমি কিছু সহজাত প্রতিভা পেয়েছ। কিন্তু তুমি যদি এটা নিয়ে কাজ না করো, অনুশীলন না করো তবে অন্যদের সঙ্গে তোমার কোনো পার্থক্য থাকবে না।’ তিনি পুরোপুরিই ঠিক বলেছেন। কিন্তু তার পরও বলব, আমি জন্মেছিই ফুটবল খেলতে, ঠিক যেমন বিথোফেনের জন্ম সংগীত রচনার জন্য, মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর ছবি আঁকার জন্য।
ভাষান্তর: সোলায়মান পলাশ
পেলে: কোনো সন্দেহ নেই, এটা অন্য রকম একটা সময় এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপটা শেষ পর্যন্ত আমার দেশে আসছে। মাঠের বাইরে থেকে হলেও আমি টুর্নামেন্টের আয়োজন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকতে চাই।
বিশ্বকাপ নিয়ে ব্রাজিলে অনুভূতিটা কী রকম?
পেলে: ব্রাজিলে ফুটবলই সব। ফুটবলই জীবন! এখানে প্রত্যাশা ও উচ্চাশার মাত্রাটা এত বেশি যে এর সঙ্গে কোনো তুলনা চলে না। সবাই জানে, শুরুতে কিছু সমস্যা থাকলেও সেসব দূর হয়েছে। আয়োজন সফল করতে যাঁর যাঁর কাজ সবাই যাতে ঠিকমতো করেন সে জন্য রাষ্ট্রপতি দিলমা রুসেফ পর্যন্ত সক্রিয়।
এটা দারুণ একটা সুযোগ। শুধু ফুটবলের জন্যই নয়। বিশ্বকে দেখানোর সময় এসেছে ব্রাজিল তাদের কী দিতে পারে। অনেক পর্যটক আসবেন আর এই সুযোগ নিয়ে আমাদের দেশ হিসেবে এগিয়ে যেতে হবে। অর্থনীতিটা এখন বেশ ভালো অবস্থায় আছে। তবে এই সুযোগে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে।
এবার সেলেকাওদের নিয়ে কথা বলি। তরুণ বয়সেই দলের নির্ভরতা হয়ে উঠেছেন নেইমার, গানসো। এটা কি তাঁদের জন্য চাপ নয়?
পেলে: এটা নির্ভর করছে আপনি ‘তরুণ’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন সেটার ওপর। তাদের বয়স ২০, কিন্তু আমি তো ১৭ বছর বয়সেই প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছি। তারা এখন আর বাচ্চা নেই (হেসে)। তাদের ওপর প্রচুর চাপ, কারণ তারাই এই সময়ের তারকা। তবে এটা শুধু ব্যক্তিবিশেষের ওপরই বর্তায় না। দলকে একটা ইউনিট হিসেবেই খেলতে হয়। আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে এবং দেশের বাইরে সব সময়ই ব্রাজিলের বড় মাপের সব খেলোয়াড় খেলছে। তাদের একত্র করে একটা দল গড়তে হবে। যা করার সময় এখনো আমাদের হাতে আছে।
১৯৭০ সালে আমার শেষ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলে রিভেলিনো, টোস্টাও ও পেলের মতো বড় মাপের খেলোয়াড় ছিল। তবে আমরা বেশ সংগঠিতও ছিলাম এবং একটা দল হিসেবে কঠোর পরিশ্রম করতাম। একটা ইউনিট হিসেবে গড়ে উঠি আমরা। আমার কাছে এটাই সাফল্যের চাবিকাঠি।
ব্রাজিল দল কি সে পথেই এগোচ্ছে?
পেলে: সে রকমই আশা করছি! ভালো খবর হচ্ছে কোচ আমাদের সমর্থন পাচ্ছেন এবং আমরা তাঁকে তাঁর চিন্তাভাবনা বাস্তবায়নের জন্য সময় দিয়েছি। আপনি যদি কোচ বদলান তবে নতুন লোকটা এসেই খেলোয়াড় পাল্টাবেন, যেটা ভালো হয় না। আপনাকে মনে রাখতে হবে ব্রাজিল দলের ওপর বিশাল এক দায়িত্ব চেপেছে, কারণ, তারা দেশে খেলবে এবং সমর্থকেরা তাদের কাছ থেকে অনেক বেশিই চাইবে।
অভিজ্ঞতা বেশি এমন কোন খেলোয়াড় এই চ্যালেঞ্জে কাজে আসতে পারে বলে মনে করেন?
পেলে: আমাদের বেশ কিছু অভিজ্ঞ বড় মাপের খেলোয়াড় আছে। কিন্তু বিশ্বকাপটাও হবে দুই বছর পর। কাজটা লম্বা সময়ের আর আমাদের দরকার উপযুক্ত পরিকল্পনা করা এবং নিয়মানুবর্তী হওয়া। খেলোয়াড়দের একসঙ্গে খেলার অভ্যাস করতে হবে। গত কয়েক বছরে আমরা এটাই দেখে আসছি। হল্যান্ড, স্পেন ও বার্সেলোনা এই দলগুলো অনেক দিন ধরেই একই দল নিয়ে খেলছে।
বার্সেলোনার কথা যখন উঠলই, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা সান্তোসকে খুব সহজেই হারিয়ে দিল, অবাক হননি?
পেলে: না, সত্যিই হইনি। বার্সার এই দলটাকে আমি অনেক দিন থেকেই দেখছি। তারা যেন ঠিক আমার সেরা সময়ের সান্তোস অথবা বেনফিকা, আয়াক্স, এসি মিলান ও রিয়াল মাদ্রিদের সেরা সময়ের মতো। এরা সবাই নিজেদের সময়ে একটা মানদণ্ড দাঁড় করিয়েছিল। তাদের সাফল্যের মূলে ছিল বেশ লম্বা একটা সময়ের জন্য নির্দিষ্ট একটা লাইনআপ গড়ে তোলা। ভুলে যাবেন না স্পেন জাতীয় দলের মূল শক্তিটাই হচ্ছে বার্সেলোনার খেলোয়াড়েরা। একসময় আয়াক্স ও হল্যান্ড এবং সান্তোস ও ব্রাজিল জাতীয় দলের সম্পর্কটাও ছিল সে রকমই।
তাদের খেলার ধরনটাই কি ফুটবলের ভবিষ্যৎ?
পেলে: এই ফুটবলটাই মানুষ দেখতে চায় এবং আমি সত্যিই আশা করি, এটাই গড়ে দেবে ভবিষ্যত ফুটবলের নকশা। আমি সত্যিই চাই শক্তির বিপক্ষে দক্ষতা জিতুক। জার্মানিকে দেখুন, তারা আজকাল অনেক বেশি কৌশলী ফুটবল খেলছে, এই ফুটবলই তো আমরা দেখতে চাই। আমরা চাই বল দৌড়াবে, খেলোয়াড়েরা নয়। আর এটা আপনি সেই দলের কাছ থেকেই পাবেন যারা সুসংগঠিত। বার্সা আজকাল এভাবেই খেলছে আর একসময় এটা খেলত আমার সান্তোস। আমি ভাগ্যবান যে এই ক্লাবে খেলতে পেরেছি।
কিন্তু আপনার সাফল্যের পেছনে তো ভাগ্য নয়, আছে প্রতিভা...
পেলে: আমার বাবা আমাকে বলত, ‘তুমি জন্মেছ ফুটবল খেলার জন্য। তুমি কিছু সহজাত প্রতিভা পেয়েছ। কিন্তু তুমি যদি এটা নিয়ে কাজ না করো, অনুশীলন না করো তবে অন্যদের সঙ্গে তোমার কোনো পার্থক্য থাকবে না।’ তিনি পুরোপুরিই ঠিক বলেছেন। কিন্তু তার পরও বলব, আমি জন্মেছিই ফুটবল খেলতে, ঠিক যেমন বিথোফেনের জন্ম সংগীত রচনার জন্য, মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর ছবি আঁকার জন্য।
ভাষান্তর: সোলায়মান পলাশ
No comments