অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আলোচনা-১৪ দলে শরিকদের মধ্যে দুই মত

নির্বাচনকালীন সরকারপদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সাম্যবাদী দল এ বিষয়ে সংসদের বাইরে আলোচনার পক্ষে নয়। তারা মনে করে, সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাস তিনেক আগে এ ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে।


তবে ১৪ দলের অপর দুই শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ এ বিষয়ে এখনই আলোচনা চায়।
গতকাল বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ অন্য নেতারা সংসদের বাইরে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আলোচনার বিপক্ষে কথা বলেন। তাঁরা নির্বাচনের দু-তিন মাস আগে এ বিষয়ে কথা হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন।
আর দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে এখনই আলোচনার বিপক্ষে মত দেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া।
আওয়ামী লীগ ও সাম্যবাদী দলের এ অবস্থান সম্পর্কে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাংসদ রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, সময় আছে। কিন্তু সবকিছু সুরাহা হয়ে যাওয়া ভালো। কারণ, এর সুযোগ নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত।
গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ ও সাম্যবাদী দলকে বাদ রেখে ১৪ দলের শরিক কয়েকটি দল জাসদ কার্যালয়ে আলাদা বৈঠক করে। এ ঘটনার পর সাম্যবাদী দল প্রকাশ্যেই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তবে প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ সরাসরি কিছু না বললেও বিষয়টি তারা হালকাভাবে নেয়নি। দলের অনেকেই মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ভাঙন ধরাতে এটা নতুন ষড়যন্ত্র। তবে রাজনৈতিক অবস্থানগত কারণেই দলীয় নেতারা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না।
জানা যায়, গতকাল সকালে একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। হঠাৎ আলাদা বৈঠক করা এবং অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে সত্যিই এখন আলোচনা করতে চান কি না, তিনি তা জানতে চান। মেনন বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। ওই মন্ত্রী এ বিষয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে, তা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর পক্ষে রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুসহ তাঁদের দলের নেতারা ভোটও দিয়েছেন। তার পরও কেন তাঁরা নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনার কথা বলছেন, তা বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাসদ কার্যালয়ের বৈঠকে অংশ নেওয়া ১৪ দলের এক নেতা বলেন, ‘আমাদের দেশে এখনো নির্বাচন নিয়ে তেমন আস্থা ও বিশ্বাস গড়ে ওঠেনি। তাই পঞ্চদশ সংশোধনীর পরও নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা স্পষ্ট করা দরকার।’
১৪ দলে মতপার্থক্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দিলীপ বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, অনেকেই ১৪ দলের ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করবে। এ প্রক্রিয়া যে চলছে না বা ভবিষ্যতে হবে না, তা বলা যায় না। তিনি বলেন, জাসদ কার্যালয়ে চা-চক্রের দাওয়াতের কথা বলা হয়েছিল। যেটাই হোক, ১৪ দলের ঐক্যের ধারা সুসংহত করতে হবে। তবে ওই বৈঠকের কারণে জোটে ভাঙন ধরবে না বলে মনে করেন তিনি।
প্রশ্নের জবাবে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, দেশে বাম বিকল্প ধারা গড়ে তোলার বাস্তব পরিবেশ নেই। এখন বরং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি আর মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তির মাঝামাঝি কোনো রাজনৈতিক অবস্থান এখন নেই।
এ প্রসঙ্গে রাশেদ খান মেনন বলেন, বাম বিকল্প শক্তির ভিত গড়ে তুলতে হবে। বামেরা শক্তিশালী হলে দক্ষিণপন্থীরা দুর্বল হবে।

No comments

Powered by Blogger.