দূরত্বেই লাভ by আরিফ হোসেন
নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে বিএনপি বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিল। বেগম খালেদা জিয়া দলের কর্ণধার। মন্ত্রিসভায় বেশিরভাগ সদস্য নতুন। অতীতে মন্ত্রিত্ব করেননি। তবে অভিজ্ঞতা না থাকলেও মন্ত্রিত্ব করতে বাংলাদেশে অসুবিধে হয় না। বিএনপি নেতাদেরও হয়নি। দলে যারা মন্ত্রিত্ব পাননি তাদের সংখ্যা আরও বেশি। তারা স্বভাবতই মন্ত্রীদের ওপর ক্ষুব্ধ।
কর্মীদের অনেকেই 'ত্যাগী-কর্মীদের মূল্যায়ন হয় না' বলে নানাভাবে ক্ষোভ-রোষ-হতাশা প্রকাশ করে চলেছেন। একবার ঢাকায় দলের কর্মীদের নিয়ে বড় ধরনের একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ে অনেক মন্ত্রী কর্মীদের বাক্যবাণে জর্জরিত হন। প্রধান অভিযোগ ছিল, তারা ত্যাগের মূল্যায়ন করেন না, এমনকি দলের কর্মীদের সালামও নেন না। কাছে গেলেও চিনতে পারেন না। সমাবেশে এক তরুণ নেতা বক্তব্য দেওয়ার সময় মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বলে খুব বাহবা-তালি কুড়াচ্ছিলেন। তাকে বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয়ে গেলে সভাপতি ঘণ্টা বাজান। প্রথমে বক্তা তা না শোনার ভান করেন। এরপর ঘনঘন ঘণ্টা বাজানো হতে থাকলে বলেন, ঘণ্টা বাজাইয়েন না। যেভাবে দেশ চলছে তাতে বিএনপির ঘণ্টা জনগণ বাজিয়ে দেবে। বাস্তবে সেটাই ঘটেছিল।
সমকালে সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে 'সাংগঠনিক কাজে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আগ্রহ নেই' শিরোনামে। শেখ হাসিনার বর্তমান মন্ত্রিসভাকে চমকের মন্ত্রিসভা আখ্যায়িত করা হয়েছিল। এর কারণ তিনি প্রবীণ নেতাদের বাদ দিয়ে আগে কখনও মন্ত্রী হননি, এমন নারী ও পুরুষদের মন্ত্রী করেছেন। এমন কেউ কেউ মন্ত্রী হয়েছেন যাদের দেশব্যাপী পরিচয় তো দূরের কথা, নিজের জেলাতেও কর্মীরা তেমন চিনত না। রাজপথের আন্দোলনেও তারা সক্রিয় ছিলেন না। আশা করা হয়েছিল যে তারা মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সংগঠনের কাজেও মনোনিবেশ করবেন। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি। এর দুটি কারণ হতে পারে। এক. যারা যেসব জেলা বা উপজেলায় দলের ভেতরে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন তারা এসব 'নবাগতকে' স্থান করে দিতে প্রস্তুত নন। আবার এটাও হতে পারে যে মন্ত্রিত্ব তাদের কাছে এতই উপভোগ্য হয়ে পড়েছে যে এ কাজে ছেদ পড়ূক সেটা আদৌ চান না। তারা জানেন, কেন মন্ত্রী পদে আসীন হতে পেরেছেন। যিনি এ সম্মান তাদের জন্য এনে দিয়েছেন সেই প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ চাইবেন, তাদের কেউ সরাতে পারবে না। কর্মীদের কাছে ঘনিষ্ঠ হতে গেলে ঝামেলা কম নয়। তারা চেনা-পরিচয় হতে না হতেই দাবি করবে_ ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। আসবে তদবির-সুপারিশ নিয়ে। তার চেয়ে দূরত্ব বজায় রেখে চলাই ভালো।
শুধু কি মন্ত্রীদের সাংগঠনিক কাজে অনীহা? একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে, জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের অনেকেই এখন সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে বেজায় ব্যস্ত। দলীয় অফিসে নয়, তারা ওঠবস করেন বিভিন্ন সরকারি অফিসে। যেখানে গেলে রোজগারের পথ প্রশস্ত হবে, সেখানেই তারা হাজির। এ জন্য সংগঠন গোছানোর কোনো দরকার নেই। বরং কর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেশি হলে ভাগ চাওয়ার মুখ বাড়বে।
এমনটিই চলে আসছে দশকের পর দশক ধরে। যখন যে দল ক্ষমতায়, তাদের একদল নেতাকর্মী মনে করেন, দলের চেয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়াটাই আসল কাজ। সময় যে বড় মূল্যবান। যেদিন চলে যায়, সেদিন আর ফিরে আসে না।
এ ধারার পরিবর্তন কবে হবে, কেউ জানে না। চমকের মন্ত্রিসভার সদস্যরাও কেন যে দলের কাজে আদৌ কোনো পরিবর্তন আনতে পারলেন না, সেটা আড়াই বছরেও অজানা থেকে গেল। বাকি আড়াই বছরে নিজেদের বদলাবেন কি?
সমকালে সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে 'সাংগঠনিক কাজে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আগ্রহ নেই' শিরোনামে। শেখ হাসিনার বর্তমান মন্ত্রিসভাকে চমকের মন্ত্রিসভা আখ্যায়িত করা হয়েছিল। এর কারণ তিনি প্রবীণ নেতাদের বাদ দিয়ে আগে কখনও মন্ত্রী হননি, এমন নারী ও পুরুষদের মন্ত্রী করেছেন। এমন কেউ কেউ মন্ত্রী হয়েছেন যাদের দেশব্যাপী পরিচয় তো দূরের কথা, নিজের জেলাতেও কর্মীরা তেমন চিনত না। রাজপথের আন্দোলনেও তারা সক্রিয় ছিলেন না। আশা করা হয়েছিল যে তারা মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সংগঠনের কাজেও মনোনিবেশ করবেন। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি। এর দুটি কারণ হতে পারে। এক. যারা যেসব জেলা বা উপজেলায় দলের ভেতরে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন তারা এসব 'নবাগতকে' স্থান করে দিতে প্রস্তুত নন। আবার এটাও হতে পারে যে মন্ত্রিত্ব তাদের কাছে এতই উপভোগ্য হয়ে পড়েছে যে এ কাজে ছেদ পড়ূক সেটা আদৌ চান না। তারা জানেন, কেন মন্ত্রী পদে আসীন হতে পেরেছেন। যিনি এ সম্মান তাদের জন্য এনে দিয়েছেন সেই প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ চাইবেন, তাদের কেউ সরাতে পারবে না। কর্মীদের কাছে ঘনিষ্ঠ হতে গেলে ঝামেলা কম নয়। তারা চেনা-পরিচয় হতে না হতেই দাবি করবে_ ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। আসবে তদবির-সুপারিশ নিয়ে। তার চেয়ে দূরত্ব বজায় রেখে চলাই ভালো।
শুধু কি মন্ত্রীদের সাংগঠনিক কাজে অনীহা? একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে, জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের অনেকেই এখন সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে বেজায় ব্যস্ত। দলীয় অফিসে নয়, তারা ওঠবস করেন বিভিন্ন সরকারি অফিসে। যেখানে গেলে রোজগারের পথ প্রশস্ত হবে, সেখানেই তারা হাজির। এ জন্য সংগঠন গোছানোর কোনো দরকার নেই। বরং কর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেশি হলে ভাগ চাওয়ার মুখ বাড়বে।
এমনটিই চলে আসছে দশকের পর দশক ধরে। যখন যে দল ক্ষমতায়, তাদের একদল নেতাকর্মী মনে করেন, দলের চেয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়াটাই আসল কাজ। সময় যে বড় মূল্যবান। যেদিন চলে যায়, সেদিন আর ফিরে আসে না।
এ ধারার পরিবর্তন কবে হবে, কেউ জানে না। চমকের মন্ত্রিসভার সদস্যরাও কেন যে দলের কাজে আদৌ কোনো পরিবর্তন আনতে পারলেন না, সেটা আড়াই বছরেও অজানা থেকে গেল। বাকি আড়াই বছরে নিজেদের বদলাবেন কি?
No comments