বাজার সহনীয় করতে হস্তক্ষেপ জরুরি-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লাগাতার ব্যর্থতা

বাজারে রাষ্ট্রের ভূমিকা যতই হ্রাস পাচ্ছে, ততই বাড়ছে ব্যবসায়ীদের আধিপত্য। বাজার প্রতিযোগিতামূলক না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। চিনি-তেল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ সামগ্রীর ব্যবসা পাঁচটি শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে বলে যে সংবাদ সোমবারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে, তা টনক নড়িয়ে


দেওয়ার মতো। কিন্তু সরকার বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টনকটি নড়ছে কি? তারা কি কেবল সাক্ষীগোপাল হয়ে থাকবে?
দায়িত্বপ্রাপ্তদের এই উদাসীনতায় খোদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ক্ষুব্ধ। তাদের মতে, চিনির দাম বাড়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায়ী। মন্ত্রণালয় সময়মতো তৎপর হলে ৬৫ টাকার চিনি ৮০ টাকায় উঠত না বলে কমিটির সদস্যরা মনে করেন। আমরাও দেখি, বাজার থেকে উধাও হওয়া চিনি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আগে আর ফিরে আসেনি। যে কারোরই বোঝার কথা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রবলভাবে সক্রিয়। এই সিন্ডিকেট কি মন্ত্রণালয় বা সরকারের চেয়ে ক্ষমতাবান?
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পণ্যের জোগান ঠিক থাকলে দাম স্থিতিশীল থাকার কথা। কিন্তু জোগানের দায়িত্ব যাদের, তারাই যদি কারসাজি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, তাহলে বাজারে স্থিতি আসবে কী করে? ইউরোপ-আমেরিকার ঋণসংকটের পর সবাই এখন স্বীকার করছে, ভোক্তাদের স্বার্থে, নাগরিকদের স্বার্থে বাজারে যথাসময়ে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। সেই হস্তক্ষেপের আইনি ক্ষমতা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের থাকা সত্ত্বেও গত দুই বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, তারা ব্যর্থ হয়েছে। এরই খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। এর জন্য সরকারের অবশ্যই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে এবং ব্যবসায়ীদের আনতে হবে জবাবদিহির আওতায়।
বাজারে যাতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা হয়, এর জন্য দেড় বছর আগে ‘ফেয়ার কম্পিটিশন অ্যাক্ট’ বা সুস্থ প্রতিযোগিতা আইন প্রণীত হয়েছিল, কিন্তু ব্যবসায়ীদের চাপে এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে, অযৌক্তিভাবে পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য দায়ী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও এর বাস্তবায়ন নেই। ফলে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
রমজানের শুরুতে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ধাক্কা সহ্য করা সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে কঠিন। যা করার এখনই করতে হবে। সরকারের সামনে দুটি পথ: টিসিবিকে সক্রিয় করার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া এবং অতি মুনাফার উদ্দেশ্যে যাঁরা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। বাজার অর্থনীতির নামে ব্যবসায়ীরা যা খুশি তা করতে পারেন না।

No comments

Powered by Blogger.