পাট রপ্তানি-নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে

একসময় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের সোনালি আঁশ বলে পরিচিত পাট ও পাটজাত পণ্যের কদর ছিল ব্যাপক; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সেই পাট রপ্তানি কমছে উদ্বেগজনক হারে এবং এ জন্য কৃষক পাটচাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশিত এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদনে যে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপিত হয়েছে তাতে প্রতীয়মান হয়,


বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দেশের অন্যতম এই পণ্যটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যথেষ্ট উদাসীনতা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানই পাটজাত পণ্য ব্যবহার করছে না। একদিকে রপ্তানি আয় কমছে, অন্যদিকে কৃষক পাটচাষে সংগতই আগ্রহ হারাচ্ছে এবং এর ফলে পাটের অস্তিত্ব পড়েছে হুমকির মুখে।
পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পাট কমিশন কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রস্তাব পেশ করেছিল বেশ কিছুদিন আগে; কিন্তু আজ পর্যন্ত সেসব বাস্তবায়িত হয়নি। রপ্তানিকারকরা গুদাম ভর্তি পাট ও পাটজাত পণ্য নিয়ে বসে আছেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হালনাগাদ মাসিক রপ্তানি পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে কাঁচা পাটের রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। একই সঙ্গে পাট ও পাটজাত পণ্যের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৫ শতাংশ। নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে না পারার কারণে এই বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এই খাতে ধস নামবে। বিজেএমসির বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে পাট উৎপাদিত হয় ৭৮ লাখ বেল। সেই সঙ্গে আগের বছরের উদ্বৃত্ত সাড়ে চার লাখ বেল মিলে দাঁড়ায় সাড়ে ৮২ লাখ বেল। এর মধ্যে রপ্তানি হয় ২১ লাখ বেল। বাকি ৬১ লাখ বেলের মধ্যে ৪৪ লাখ বেল পাট মিলে ব্যবহৃত হয়। বাকি থাকে ১৭ লাখ বেল। এর মধ্যে তিন লাখ বেল রশি, সুতলিসহ বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে। ২০১০-১১ অর্থবছরে বেশি জমিতে কৃষক পাটচাষ করে; কিন্তু সেই উৎপাদিত পাটের বিনিময়ে আশানুরূপ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। পাটের এই দুরবস্থার কারণে একদিকে কৃষকের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন পুঁজির সংকটে। মহাজোট সরকার কয়েকটি বন্ধ পাটকল চালু করে এই খাতকে পুনর্বার চাঙ্গা করার পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার যদি না বাড়ে এবং রপ্তানিচিত্র যদি উজ্জ্বল করা না যায় তাহলে এর ইতিবাচক প্রভাব কিভাবে আশা করা যায়?
দেশে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান সেই আইন মানছে না! প্রণীত আইনটি কার্যকর হলে অভ্যন্তরীণ বাজারেই পাটের ব্যবহার ও চাহিদা অনেক বেড়ে যেত। এ ব্যাপারে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রয়োজন রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে দূরদর্শী পদক্ষেপ নেওয়া। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পাট কিনতে হবে। কৃষক যাতে উৎপাদিত পাটের ন্যায্য মূল্য পায় তাও নিশ্চিত করা দরকার। পাট কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। পাটের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথটি মসৃণ করতে হবে জাতীয় স্বার্থেই।

No comments

Powered by Blogger.