‘অক্ত, অক্ত বলে কান্না শুরু করে ইয়ামিন’

খালাতো-মামাতো ভাইদের সঙ্গে খেলায় ব্যস্ত ইয়ামিন (২)। খেলনা সাইকেলে উঠতে না দেওয়ায় ঘরের এক কোনায় দাঁড়িয়ে ছিল নীরবে। খেলার সাথিদের সঙ্গে কী নিয়ে যেন ঝগড়া হয়। কান্না শুরু করলে আশ্রয় মেলে নানির কোলে। কিন্তু সপ্তাহ খানেক আগে খুনিরা কেড়ে নিয়েছে ইয়ামিনের আসল আশ্রয় মায়ের কোল। ১৭ ফেব্রুয়ারি ইয়ামিনের উপস্থিতিতেই খুন হন মা খাতিজা বেগম (৪৪)।


নগরের বাকলিয়া থানার ডিসি রোড রসুলবাগ আবাসিক এলাকার নিজ বাসভবনে এই গৃহবধূ খুন হওয়ার পর আট দিন পেরিয়ে গেলেও ধরা পড়েনি খুনিরা। শিশু ইয়ামিনের দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন মেজো খালা ফরিদা ইয়াসমিন। গত বৃহস্পতিবার রাতে কথা হয় ইয়ামিনের মামা মো. ইউনূসের সঙ্গে।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে দিনের বেশির ভাগ সময় ছেলেটা কাঁদে। শুধু যতক্ষণ খেলায় ব্যস্ত থাকে ততক্ষণ ভালো থাকে। আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে তাকে ওই বাড়িতে নিয়ে যাই। ওই কক্ষের কাছাকাছি যেতেই সে ভীত হয়ে পড়ে। অক্ত, অক্ত (রক্ত, রক্ত) বলে কান্না শুরু করে ইয়ামিন।’
পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, খাতিজা বেগমের স্বামী আবুল কালাম কাতার-প্রবাসী। নিঃসন্তান এ দম্পতি দুই বছর আগে এক মাস বয়সী ইয়ামিনকে দত্তক নেন। রসুলবাগ আবাসিক এলাকায় খাতিজাদের দুটি নিজস্ব ভবন রয়েছে। এর মধ্যে তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ইয়ামিনকে নিয়ে থাকতেন খাতিজা। অন্য চারতলা ভবনসহ বাকি সব কটি ফ্ল্যাটই ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নিজের কক্ষেই ছুরিকাঘাতে খুন হন খাতিজা। ওই দিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রক্তমাখা শরীরে ইয়ামিন সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে। ইয়ামিনকে দেখতে পেয়ে এক ভাড়াটে ওই কক্ষে গেলে দেখতে পান, দরজা খোলা। রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরে পড়ে আছেন খাতিজা। পরে রাতে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
ঘটনার দিন বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক আনসারুল করিম জানিয়েছিলেন, বাসার আলমারি ও জিনিসপত্র তছনছ অবস্থায় পাওয়া যায়। লাশের গায়ে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল।
এ ঘটনায় বাকলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাই মো. ইউনূস। তিনি বলেন, ভাইবোনদের মধ্যে আপা ছিলেন সবার বড়, আমাদের পরিবারের অভিভাবক ছিলেন তিনি। যে কোন বিপদে আপদে তিনি ছুটে আসতেন।
ইয়ামিনের দায়িত্ব নেয়া ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘ছেলেটা সবসময় মা, মা বলে কাঁদে। খেলে খুব কম।’
খুনের ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে ইউনূস বলেন, এতদিনেও জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হলো না। মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হলে দ্রুত আসামি ধরা পড়ত। পরিবারের পক্ষ থেকে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের এ দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি অঞ্চলের সহকারি কমিশনার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, এ হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উদঘাটনে সম্ভাব্য সব উপায়ে চেষ্টা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.