ডায়ালিসিস মেশিন নষ্ট-স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা কাটবে কবে

সরকারি হাসপাতালগুলোর দুরবস্থা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। চিকিৎসাসেবার মানের অধোগতি নিয়ে বহু লেখালেখি হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার যেন সময়ই নেই। চিকিৎসকদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি যুগের পরিবর্তন হওয়ার পরও। রোগীদের প্রতি দুর্ব্যবহারের অভিযোগও পাওয়া যায় মাঝেমধ্যে।


প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসকদের যেতে না চাওয়ার বিষয়টি এখন আর লুকিয়ে রাখার মতো নয়। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সবাই এটা বলেছেন এবং এর প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি কড়াকড়িও আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি সরকারি হাসপাতালগুলোর চেহারায়। আবার সব কিছুকেই ছাড়িয়ে যায় দুর্নীতি ও অবহেলার বিষয়টি। তেমনি একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সহযোগী একটি দৈনিকে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজধানীতে অবস্থিত কিডনি ইনস্টিটিউটের ৪০টি ডায়ালিসিস মেশিনের মধ্যে ২০টিই অচল হয়ে আছে দীর্ঘদিন। একই সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় ২০০৫ সালে ১০টি এঙ্-রে মেশিন দিয়েছে সরকার, সেই এঙ্-রে মেশিনগুলো আজ পর্যন্ত ব্যবহারই করা সম্ভব হয়নি। কিডনি হাসপাতালের এ মেশিনগুলো কেনা হয়েছে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে। সেই হিসাবে হয়তো কিছু মেশিন অকেজো থাকার বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি তেমন স্বাভাবিক নয়। কারণ ওই মেশিনগুলো কেনার সময়ই দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়েছে। সন্দেহ করা হয়েছে যে ওই সব মেশিন তখনই ছিল পুরনো এবং রিকন্ডিশন্ড।
কেনার সময় এই দুর্নীতির কারণে সরকারের কোষাগার থেকে অর্থের অপচয় হওয়াটাই বড় কথা নয়; এই মেশিনগুলো কাজ না করায় প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সাধারণত সরকারি হাসপাতালে গরিব মানুষই চিকিৎসা গ্রহণ করতে যায়। আর ডায়ালিসিস করার বিষয়টি সাধারণ মানুষের পক্ষে অত্যন্ত ব্যয়বহুলও বটে। সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সুবিধা না পাওয়ার কারণে রোগীদের হয়তো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়, নতুবা বাধ্য হয়ে তিন-চার হাজার টাকা প্রতিবার ব্যয় করে প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে ডায়ালিসিস করাতে হয়।
প্রকাশিত সংবাদে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, সেসব মেশিন ক্রয়কালে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন এখানে, ছয় বছর গত হয়ে যাওয়ার পরও এই দুর্নীতির বিষয়গুলো বের করা হয়নি কেন? তদন্ত কমিটি গঠনের মতো পুরনো কৌশল অবলম্বন করে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। আমাদের এখানে কোনো ঘটনা ঘটার পর কথিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
চিকিৎসাসেবার বেহাল অবস্থার প্রমাণ যে শুধু কিডনি হাসপাতালের মধ্যে সীমাবদ্ধ তা-ই নয়, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের অবস্থাও তথৈবচ। সেখানেও ভেন্টিলেটর মেশিন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অথচ মুমূর্ষু রোগীর জন্য এই ভেন্টিলেটর মেশিন অত্যন্ত জরুরি। এ মেশিনের প্রয়োজন হলে সাধারণ মানুষ এর ব্যয় বহন করতে পারে না। ফলে সাধারণ ও গরিব রোগীদের মৃত্যুই হয়ে ওঠে অনিবার্য। এমন পরিস্থিতির অবসান হওয়া উচিত। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে সততা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে সেবাকে সাধারণ মানুষের কাছে পেঁৗছে দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.