হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন-লামায় তিন হত্যা

বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে লামা উপজেলা সদর। সেখান থেকে আরও ১০ কিলোমিটার গভীরে রূপসীপাড়া ইউনিয়ন। জঙ্গলময় পাহাড়ি ওই এলাকায় যুগ যুগ ধরে যেসব মানুষের বাস, তারা জুম্ম জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। গত শনিবার সেখানে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে এক মারমা পরিবারের পাঁচ বছরের একটি শিশু, ৭০


বছর বয়সী এক বৃদ্ধ এবং ৩৬ বছর বয়সী এক নারী। হত্যাকারী হিসেবে লামার পুলিশ যে যুবককে গ্রেপ্তার করেছে, তার নাম আবু মুসা। একটি পাহাড়ি ছড়ার উৎ সস্থলের জুমঘরে বসবাসরত ওই মারমা পরিবারের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে বাধা পেয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে তাঁদের হত্যা করেছে ওই যুবক, দায়ের কোপে জখম করেছে কিশোরীটিকে।
আবু মুসার বাবা আশির দশকে প্রত্যন্ত পাহাড়ি ওই অঞ্চলে অভিবাসন করে বসতি গড়েছেন। লামায় এমন বসতি স্থাপনকারী অপাহাড়ির সংখ্যা অনেক; রূপসী বাজার মুসলিমপাড়া নামের একটি জনবসতিই গড়ে উঠেছে সেখানে। এ থেকে ধারণা পাওয়া যায়, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অপাহাড়িদের বসতি স্থাপন পার্বত্য অঞ্চলের কতটা গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে। এর ফলে সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতির, ভিন্ন জীবনধারার মানুষের সঙ্গে সেখানকার আদি বাসিন্দা পাহাড়ি জুম্ম জনগোষ্ঠীর মানুষের আন্তসম্পর্কের জটিলতাগুলোর বহিঃপ্রকাশ আমরা মাঝেমধ্যেই লক্ষ করি বিভিন্ন ধরনের সহিংস আচরণের মধ্য দিয়ে।
শনিবারের হত্যাকাণ্ডটির পেছনে শুধু ধর্ষণচেষ্টায় বাধা পাওয়াই কাজ করেছে, নাকি এর সঙ্গে জমিসংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে, সে বিষয়ে পুলিশ অনুসন্ধান চালাবে বলে বলা হয়েছে। এলাকার অনেক লোকের বক্তব্য, এর পেছনে জমিসংক্রান্ত বিরোধ থাকতে পারে। পাহাড়ি অঞ্চলের স্থায়ী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বসতি স্থাপনকারীদের যেসব সংঘাত-সংঘর্ষ মাঝেমধ্যেই ঘটে থাকে, সেগুলোর অধিকাংশই জায়গা-জমিসংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে। সাধারণ অপরাধবৃত্তির সঙ্গে এই বিষয়টির পার্থক্য বিবেচনায় নিয়ে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পাহাড়ি ও অপাহাড়িদের মধ্যকার সম্পর্ক যাতে শান্তিপূর্ণ থাকে, সে জন্য প্রথমত প্রয়োজন সবার নিজ নিজ অধিকার নিশ্চিত করা।
আশা করব, তিন ব্যক্তিকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার আবু মুসার বিরুদ্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে।

No comments

Powered by Blogger.