সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড-শুধু আশ্বাসে আস্থা নেই
সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। শুক্রবার দিলি্লতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের আলোচনায় এ আশ্বাস মিলেছে। বৈঠকে মনমোহন সিং বলেছেন, তিস্তার পানি চুক্তি চূড়ান্ত করা এবং গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় স্বাক্ষরিত সীমানা
চিহ্নিতকরণ ও ছিটমহল বিনিময় চুক্তি অনুমোদনের জন্য পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হবে। প্রতিবেশী দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকের পর এসব সিদ্ধান্ত আপাত উৎসাহব্যঞ্জক মনে হলেও সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে গত সেপ্টেম্বরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় থেকে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যাকে বন্ধুসুলভ বলা যায় না। শেষ পর্যন্ত এই প্রত্যাশা 'ধন্য আশা কুহকিনী'ই হয়েছে। গত কয়েকটি মাস সীমান্ত পরিস্থিতিও বন্ধুত্বের থাকেনি। এ জন্য বাংলাদেশের তরফে আন্তরিকতায় ঘাটতি ছিল, সেটা বলা যাবে না। তবে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্ত প্রশ্নসহ জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যু বলিষ্ঠতার সঙ্গে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা অমূলক বলা যাবে না। সীমান্তে বাংলাদেশি নিরীহ-নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ ঘটলেও তার প্রতিবাদ করা হয় অনুচ্চ কণ্ঠে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা দায়সারা। এর ফলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নীতি অবস্থান নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। বিএসএফ প্রধান বনশাল যখন বলেন, 'ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গুলিবর্ষণ পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়', তখন 'বন্ধুপ্রতিম দুই দেশ' এই বাক্যটি পরিহাসের মতো মনে হয়। মনমোহনের ঢাকা সফরকালে তিস্তার পানি বণ্টনে বহুল প্রতীক্ষিত চুক্তি হচ্ছে_ এ বিষয়ে নিশ্চিত বার্তা দিলি্ল থেকেই এসেছিল। শেষ মুহূর্তে সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটকীয় অবস্থান গ্রহণে। তিনি 'রাজ্য স্বার্থকে অগ্রাধিকার' প্রদানের কথা বলছেন; কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমেই 'প্রতিবেশীর উষ্ণ পথে ঠাণ্ডা জল ঢেলে দেওয়ার' দায়ে তাকে অভিযুক্ত করে বলা হচ্ছে, প্রকারান্তরে তিনি ভারতের জাতীয় স্বার্থই ক্ষুণ্ন করছেন। দুই দেশের বাণিজ্যে বিপুল ঘাটতি রয়েছে এবং তা ভারতের একতরফা অনুকূলে। এটা কমিয়ে আনার জন্য ভারতীয়দেরই প্রস্তাব_ বাংলাদেশের সব ধরনের পণ্যের জন্য শুল্ক-অশুল্ক কোনো বাধা থাকা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রেও কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশিত; কিন্তু এখন পর্যন্ত লক্ষণ নেই। আশা করব, দিলি্ল শুধু ঢাকার নয়, স্বদেশের গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের বার্তাও উপলব্ধি করবে এবং সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের বন্ধনে আবদ্ধ দেশটির ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণে যত্নবান হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের সহায়তা-সহমর্মিতা বিস্মৃত হওয়ার নয়। কিন্তু দিলি্লর স্বীকার করা উচিত যে, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সদিচ্ছার যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ার কারণেই দুই দেশের সম্পর্কে বারবার টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
এ কথা সরকারকে মনে রাখতে হবে যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি সংবেদনশীল ইস্যু। মহল বিশেষ সময় ও সুযোগ পেলেই এই ইস্যুকে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়। শক্ত অবস্থানে থেকে দরকষাকষি করে বাংলাদেশের স্বার্থ আদায়ের জন্য সরকারকে আরও সচেষ্ট হতে হবে। শুক্রবার ভারতের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর বন্ধুত্বের সম্পর্ক জোরদারে যেসব আশ্বাস মিলেছে তা যেন নিছক আশ্বাসেই শেষ হয়ে না যায়।
এ কথা সরকারকে মনে রাখতে হবে যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি সংবেদনশীল ইস্যু। মহল বিশেষ সময় ও সুযোগ পেলেই এই ইস্যুকে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়। শক্ত অবস্থানে থেকে দরকষাকষি করে বাংলাদেশের স্বার্থ আদায়ের জন্য সরকারকে আরও সচেষ্ট হতে হবে। শুক্রবার ভারতের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর বন্ধুত্বের সম্পর্ক জোরদারে যেসব আশ্বাস মিলেছে তা যেন নিছক আশ্বাসেই শেষ হয়ে না যায়।
No comments