ভারতীয় মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি কার্যকর দেখতে চাই-সীমান্তে ‘কোনো অবস্থাতেই’ গুলি নয়

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বাংলাদেশ সফরে এসে সীমান্ত পার হওয়ার সময় কোনো অবস্থাতেই লোকজনের ওপর গুলি না ছুড়তে বিএসএফকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে গেছেন। এ ছাড়া ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা চুক্তিও সই হয়েছে।


এসব পদক্ষেপের ফলে পরিস্থিতির দৃশ্যমান কী উন্নতি হয়, সেটাই এখন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় বিবেচনা।
ভারতের সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের অহরহ মারা যাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের জন্য বড় উদ্বেগ ও ক্ষোভের বিষয়; দেশ দুটির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় বলেই মনে করি। ভারতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রতিকারের প্রতিশ্রুতিও মিলেছে। কিন্তু সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি। তবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কোন্নয়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে, সে বিবেচনায় ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এবারের বক্তব্য ও প্রতিশ্রুতিকে আমরা বাড়তি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চাই। তিনি বলেছেন, সীমান্ত পার হওয়ার সময় কোনো অবস্থাতেই যেন গুলি করা না হয় সে বার্তা বিএসএফের জওয়ানদের জানানো হয়েছে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কমে এসেছে বলেও তুলনামূলক তথ্য দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, বিষয়টি আসলে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমিয়ে আনার ব্যাপার নয়, হত্যাকাণ্ড পুরোপুরি বন্ধ করা। নিরস্ত্র নাগরিকদের এভাবে গুলি করে হত্যা করা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। সংখ্যার হিসাব দিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও মানবাধিকারের বিষয়টি বিবেচ্য হতে পারে না। সীমান্তে একটিও হত্যা নয়, এটাই আমাদের চাওয়া।
আমরা মনে করি, ‘কোনো অবস্থাতেই’ গুলি না ছোড়ার নির্দেশনা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী যদি মেনে চলে তবে সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব। সীমান্তে অবৈধ তৎ পরতা রোধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণই যথেষ্ট। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসে যে বক্তব্য দিয়ে গেলেন অবিলম্বে তার বাস্তবায়নই দেখতে চায় বাংলাদেশ।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিরোধের মূল কারণ ছিটমহল, অপদখলীয় জমি ও সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমান্ত অমীমাংসিত থাকা। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে এসব বিষয়েও অগ্রগতি হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের পরিকল্পিত বাংলাদেশ সফরের আগেই এগুলো নিষ্পত্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা যাবে বলে দুই পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে দুই দেশের মধ্যে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে তা জনগণকে জানানো উচিত। ইতিমধ্যে বিরোধী দলের পক্ষ থেকেও সেই রকম দাবি উঠেছে।
দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা সমস্যাগুলোর সমাধান হলে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কেবল গতিসঞ্চার করবে না, সহযোগিতার ক্ষেত্রও সম্প্রসারিত হবে। ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আলোকেই সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত একটি ভৌগোলিক বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির পথরেখা তৈরি করতে হবে; যার উদ্দেশ্য হবে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে উভয়ে লাভবান হওয়া।

No comments

Powered by Blogger.