বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩২৫ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। নজরুল ইসলাম, বীর প্রতীক অকুতোভয় এক বীর যোদ্ধা মুহুর্মুহু গুলির শব্দে চারদিকের নিস্তব্ধতা খান খান হয়ে গেল। প্রচণ্ড গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। নজরুল ইসলাম ও তাঁর সহযোদ্ধারা অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়েছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে।
পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা বসে থাকল না। তারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। তুমুল যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা অবস্থান ছেড়ে পিছু হটতে থাকল। এ ঘটনা ভূরুঙ্গামারীর। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে।
ভূরুঙ্গামারী কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্গত। জেলা সদরের সর্ব উত্তরে। ভারতের আসাম রাজ্যের সীমানায়। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভূরুঙ্গামারীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিরক্ষা অবস্থান গড়ে তোলে। থানায় ছিল একটি অবস্থান। পুলিশের পাশাপাশি সেখানে ছিল কিছু পাকিস্তানি সেনা। এ ছাড়া সহযোগী হিসেবে ছিল একদল ইপিসিএএফ (ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স) ও রাজাকার।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে এই আক্রমণে অংশ নেন। দুটি দল আক্রমণকারী ও একটি কাট অফ পার্টি হিসেবে। তাঁরা ছিলেন ৪০ জন। নজরুল ইসলাম ছিলেন আক্রমণকারী দলে।
নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন সাহসিকতার সঙ্গে গুলি করতে করতে থানার মধ্যে ঢুকে পড়েন। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে নজরুল ইসলামদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাঁরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যান। তাঁদের সাহস ও বীরত্বে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা দিশাহারা হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা অবস্থান ছেড়ে পিছু হটতে শুরু করে।
মুক্তিযোদ্ধারা সাময়িকের জন্য থানা দখল করেন। তাঁদের হস্তগত হয় বিপুলসংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। একটি বাংকার থেকে তাঁরা উদ্ধার করেন ১১ জন নির্যাতিত নারীকে।
সেদিন যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে একজন আহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা থানা দখল করতে সক্ষম হলেও তা ধরে রাখার ক্ষমতা তাদের ছিল না। কারণ, আশপাশেই ছিল পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান। পুনঃ সংগঠিত হয়ে তারা আক্রমণ চালাবে। সে জন্য মুক্তিযোদ্ধারা সকাল হওয়ার আগেই নদী অতিক্রম করে ভারতে চলে যান।
নজরুল ইসলাম চাকরি করতেন ইপিআরে (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পরে বিডিআর, এখন বিজিবি)। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন লালমনিরহাট জেলার মোগলহাট বিওপিতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরের সাহেবগঞ্জ সাবসেক্টরে। ফুলবাড়ী, অনন্তপুর, গঙ্গারহাট, শিমুলবাড়িসহ আরও কয়েক স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য নজরুল ইসলামকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২১৮।
নজরুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বাংগরা গ্রামে। বর্তমানে বাস করেন কুমিল্লা জেলা শহরের কোটবাড়ীর গন্ধমতী এলাকায়। তাঁর বাবার নাম মুন্সি ওয়ালী মিয়া। মা রোকেয়া বেগম। স্ত্রী রেনু আরা বেগম। তাঁদের দুই ছেলে দুই মেয়ে।
নজরুল ইসলাম বললেন, ‘আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি, তা বাস্তবায়িত হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আগেই হওয়া দরকার ছিল। আগে বিচার হলে দেশটা এ রকম হতো না। দেশ থাকত হানাহানিমুক্ত।’
সূত্র: প্রথম আলোর কুমিল্লার নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীউল হক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৬।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
ভূরুঙ্গামারী কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্গত। জেলা সদরের সর্ব উত্তরে। ভারতের আসাম রাজ্যের সীমানায়। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভূরুঙ্গামারীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিরক্ষা অবস্থান গড়ে তোলে। থানায় ছিল একটি অবস্থান। পুলিশের পাশাপাশি সেখানে ছিল কিছু পাকিস্তানি সেনা। এ ছাড়া সহযোগী হিসেবে ছিল একদল ইপিসিএএফ (ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স) ও রাজাকার।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে এই আক্রমণে অংশ নেন। দুটি দল আক্রমণকারী ও একটি কাট অফ পার্টি হিসেবে। তাঁরা ছিলেন ৪০ জন। নজরুল ইসলাম ছিলেন আক্রমণকারী দলে।
নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন সাহসিকতার সঙ্গে গুলি করতে করতে থানার মধ্যে ঢুকে পড়েন। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে নজরুল ইসলামদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাঁরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যান। তাঁদের সাহস ও বীরত্বে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা দিশাহারা হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা অবস্থান ছেড়ে পিছু হটতে শুরু করে।
মুক্তিযোদ্ধারা সাময়িকের জন্য থানা দখল করেন। তাঁদের হস্তগত হয় বিপুলসংখ্যক অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। একটি বাংকার থেকে তাঁরা উদ্ধার করেন ১১ জন নির্যাতিত নারীকে।
সেদিন যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে একজন আহত হন। মুক্তিযোদ্ধারা থানা দখল করতে সক্ষম হলেও তা ধরে রাখার ক্ষমতা তাদের ছিল না। কারণ, আশপাশেই ছিল পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান। পুনঃ সংগঠিত হয়ে তারা আক্রমণ চালাবে। সে জন্য মুক্তিযোদ্ধারা সকাল হওয়ার আগেই নদী অতিক্রম করে ভারতে চলে যান।
নজরুল ইসলাম চাকরি করতেন ইপিআরে (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পরে বিডিআর, এখন বিজিবি)। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন লালমনিরহাট জেলার মোগলহাট বিওপিতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরের সাহেবগঞ্জ সাবসেক্টরে। ফুলবাড়ী, অনন্তপুর, গঙ্গারহাট, শিমুলবাড়িসহ আরও কয়েক স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য নজরুল ইসলামকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২১৮।
নজরুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বাংগরা গ্রামে। বর্তমানে বাস করেন কুমিল্লা জেলা শহরের কোটবাড়ীর গন্ধমতী এলাকায়। তাঁর বাবার নাম মুন্সি ওয়ালী মিয়া। মা রোকেয়া বেগম। স্ত্রী রেনু আরা বেগম। তাঁদের দুই ছেলে দুই মেয়ে।
নজরুল ইসলাম বললেন, ‘আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি, তা বাস্তবায়িত হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আগেই হওয়া দরকার ছিল। আগে বিচার হলে দেশটা এ রকম হতো না। দেশ থাকত হানাহানিমুক্ত।’
সূত্র: প্রথম আলোর কুমিল্লার নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীউল হক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৬।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments