সময়ের প্রতিবিম্ব-রাষ্ট্রপতির ‘বৈপ্লবিক’ মার্জনা by এবিএম মূসা
কতিপয় প্রিয় পাঠক টেলিফোনে, চিঠি লিখে অনুযোগ করেছেন, ‘লক্ষ্মীপুরের বাপ-ব্যাটাকে নিয়ে লিখছেন না কেন?’ তাঁদের বলি, লিখে কী হবে? এই তো কয়েক মাস আগে লিখলাম লিমনকে নিয়ে। সেই লিমন এখনো উল্টো ‘সন্ত্রাসের’ মামলার আসামি হয়ে আদালত প্রাঙ্গণে। তারপর ছয় কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো।
আমিনবাজারে খুনিরা নির্বিবাদে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কখনো কখনো পুলিশ লোক দেখানো অভিযান করে। বিপ্লবের সসম্মানে খালাস নিয়ে যে মহাবিপ্লব ঘটে গেল, তা নিয়ে লিখতে বলায় একজন পাঠককে পরিহাসের সুরে বললাম, ‘ফাঁসি থেকে রক্ষা পেয়েছে, কিছু লেখার পর বাকি মামলাগুলো “রাজনৈতিক বিবেচনায়” প্রত্যাহার করে নেবে।’
তার পরও লক্ষ্মীপুরে তাহের-বিপ্লবের দাপট নিয়ে লিখতে বসেছি। ইতিমধ্যে হাতে পেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাদেরকে নিয়ে বড় অক্ষরের শিরোনাম। সেই কাদেরকে নির্যাতনের দায়ে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করতে আদালতকে নির্দেশ দিতে হলো। সাম্প্রতিক কালে এমনি কয়েকটি ঘটনায় আদালতকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর জানিয়ে দিলেন, শাসকের বিবেক যখন স্থবির হয়, বিচারককেই বিবেকের ভূমিকা নিতে হয়।
মূল আলোচনা শুরু করি, অনেক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বহু কীর্তিকাহিনির হোতা পরিচয়ে পরিচিত বিপ্লবের পিতা তাহের, তাঁরই তো ছেলে বিপ্লব। ইংরেজিতে বলব ‘লাইক ফাদার লাইক সান।’ তাঁর সম্বন্ধে ইরাক যুদ্ধের সময় সারা দেশে ছড়ানো স্লোগান ‘বাপের ব্যাটা সাদ্দাম’ প্রয়োগ করে বলব, ‘বাপের ব্যাটা বিপ্লব।’ পার্শ্ববর্তী কুমিল্লার মানুষ হলে বলতাম, ‘বেডাই একখান।’ সেই ব্যাটা বা বেডার ফাঁসি হয়নি কেন, তা নিয়ে হুলস্থুল বেধেছে। কেন হয়নি তার অনেক সাংবিধানিক ও বিচিত্র ব্যাখ্যা রয়েছে। আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশ্লেষক সবাই রাষ্ট্রপতি ও তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতা বিশ্লেষণ করছেন। অপরদিকে ভিন্নতর ভাবনা ভাবছেন সাম্প্রতিক কালে (কতখানি সাম্প্রতিক তা পাঠক বলবেন) সারা দেশে সন্ত্রাসের মহামারির বিস্তারে আতঙ্কিত নিরীহ জনসাধারণই।
রাষ্ট্রপতি যে সাংবিধানিক ক্ষমতাটি প্রয়োগ করেছেন, সেটি নিয়ে প্রথমে তাত্ত্বিক আলোচনা করি।
বস্তুত রাষ্ট্রপতির দণ্ড মওকুফ-সম্পর্কিত সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদটি বোঝার চেষ্টায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছি। বিপ্লবকে ক্ষমা প্রদান অবশ্যই প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য। প্রাথমিকভাবে প্রশ্ন করা যেতে পারে, ক্ষমাটি কে করেছেন? প্রতিবেদনের সর্বশেষে আলোচনা করব কেন করা হয়েছে মনে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অযোগ্য-অসমর্থনীয় হওয়া সত্ত্বেও যুক্তিপূর্ণ কাজটি করলেন বাহ্যত স্বয়ং রাষ্ট্রপতি। তা তিনি একক ইচ্ছায় করেছেন কি না, তা নিয়ে নিশ্চয়ই বিতর্ক হতে পারে। অনুচ্ছেদ ৪৯ বলছে, ‘কোন অপরাধীর দণ্ড মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম, মওকুফ, স্থগিত করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’ অন্যদিকে ৪৮(৩) বলছে, ‘কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য্য করিবেন।’ পুরো অনুচ্ছেদ পড়ে জটিল ভাবনায় পড়েছি। সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ বলছে, প্রধানমন্ত্রী বিপ্লবকে ফাঁসি থেকে বাঁচানোর জন্য রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কি না কোনো আদালত এ সম্পর্কে কোনো ‘প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না।’ পুরো বিষয়টি খোলাসা করার জন্য আমি রাষ্ট্রপতি তথা আমার ‘জিল্লুর ভাইয়ের’ সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি। তিনি সাক্ষাতের সম্মতিও দিয়েছিলেন, দুর্ভাগ্যবশত সেই সাক্ষাতের আগেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আল্লাহ তাঁকে সুস্থ রাখুন।
যা হোক, প্রধানমন্ত্রী আদৌ পরামর্শ দিয়েছেন কি না আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না, কিন্তু দেশের অগণিত জনগণ, বিবেকবান ব্যক্তি লক্ষ্মীপুরের নিহত নুরুল ইসলামের নৃশংস হত্যার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মার্জনা নিয়ে ফিসফিসানি গুঞ্জনের মাধ্যমে নানা প্রশ্ন করছেন। নুরুল ইসলামের স্ত্রী হূদয়কাড়া মোক্ষম প্রশ্নটি রাষ্ট্রপতিকে করেছেন, ‘আপনার স্ত্রী আইভি রহমানের প্রকৃত হত্যাকারীর ফাঁসির আদেশ হলে তা-ও কি আপনি ক্ষমা করবেন?’ বর্তমান অবস্থার বিপাকে প্রশ্নটি কেউ করছেন না, করলেও উত্তর পাবেন না। ভবিষ্যতে কোনো এক সরকারের আমলে হয়তো প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে, অর্থাৎ তখন কে প্রধানমন্ত্রী হবেন আর কে রাষ্ট্রপতি থাকবেন, সেই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে হয়তো প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া গেলেও যেতে পারে।
বক্তব্যটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করছি। সংসদে আইন করে, সংবিধানের সংশোধনীর মাধ্যমে দায়মুক্তি বিধান করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ক্ষমা তো নয়ই, গ্রেপ্তার বা বিচারও করা হয়নি। নিয়তির বিধান আজ নুরুল ইসলামের রাজনৈতিক সহকর্মীরা তাঁর হত্যাকারীর ফাঁসির দণ্ড মওকুফের প্রতিবাদে সভা করে বিপর্যস্ত হয়েছেন। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের হত্যার ক্ষতটি বুকের মধ্যে দীর্ঘদিন পোষণ করে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেই ‘দায়মুক্তি’ বাতিল করে সুষ্ঠু আইনানুগ বিচার সম্পন্ন করে অপরাধীদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুপ্রাণ বাংলার মানুষ আর আমাদের স্বজনহারা প্রধানমন্ত্রী এ জন্য অপেক্ষা করেছেন দীর্ঘ তিন দশক। নুরুল ইসলামের স্ত্রীকেও হয়তো এমনি প্রতীক্ষায় থাকতে হবে। সেই প্রতীক্ষা কয়েক দিন, কয়েক বছর, কয়েক দশক, নাকি শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত, তা কে বলতে পারে? দশকের হিসাবটি করি না কেন? বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করেছিলেন আমার কাছে খুবই শ্রদ্ধেয় আইনজীবী সিরাজুল হক। বিপ্লবের ফাঁসি মওকুফের খবর শুনে তাঁর অকালমৃত্যুর পর মামলা পরিচালনাকারী তাঁর সুযোগ্য পুত্র স্নেহভাজন আনিসুল হককে টেলিফোন করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আনিস, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কি দণ্ড মওকুফ চেয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চেয়েছিল?’ উত্তর পেলাম, ‘হ্যাঁ, চেয়েছিল, পায়নি।’ পেলে বিক্ষুব্ধ হতো দেশের মানুষ; ক্ষোভে উত্তাল হতো সমগ্র দেশ।
খুনির ফাঁসি আর দণ্ড মওকুফ নিয়ে আরও কিছু আলোচনা প্রয়োজন। কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়েছে সামরিক আদালতে গোপন প্রহসনের বিচারে। তাহের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি। জেনারেল জিয়ার আমলে শত শত সিপাইকে, বিমানবাহিনীর সদস্যদের কখন কীভাবে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল। জিয়ার হত্যা নয়, ‘বিদ্রোহ’ করেছে শুধু এই অজুহাতে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তাকে বিচার চলাকালে মধ্যরাতে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি জানি না কেন বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে তাঁর স্বামীর হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসিতে ঝোলাননি। বড় দুঃখ লাগে, যখন ভাবি কী অভাগা এই জাতি, মুক্তিযোদ্ধাদের রাতের আঁধারে অসম্পন্ন বিচারের জন্য দায়ী বলে যাকে পরোক্ষে দায়ী করা হয়, তার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যেতে জোট বাঁধে।
আওয়ামী লীগের এক নেতা অতীতের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, বিএনপি খুনি জিন্টুকে ক্ষমা করেছিল। বিজ্ঞ আইনজীবী জিয়া-এরশাদের মন্ত্রী মওদুদ বলেছেন, সেই দণ্ড ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ তথা প্রহসনের সামরিক আদালত দিয়েছিল, সুবিচার হয়নি। বক্তব্যটি মেনে নিয়ে জিন্টুর দণ্ড মওকুফ নিয়ে বর্তমান সরকারের যাঁরা খোঁচা মারা কথা বলেন, তাঁরা কি জিন্টুর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন না? কর্নেল তাহেরের পুনর্বিচারের দাবির মতো এমন দাবি উঠেছে, ১৩ মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিগত দুই সামরিক শাসকের ফাঁসি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিচার এই সরকার করবে কি? অবশ্য বিপ্লবের দণ্ড মওকুফ করার পর এই সরকার বর্ণিত সেই সব প্রহসনের ফাঁসি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।
আবেগবর্জিত হয়ে এবার রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাটির সাংবিধানিক বিশ্লেষণ করব। অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) ও ৪৯ অনুচ্ছেদ এই দুইয়ের সাংঘর্ষিক অবস্থান সংবিধান বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ করতে অনুরোধ করব। যেমন, রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা যাবে না তিনি আদৌ পরামর্শ দিয়েছেন কি না। কিন্তু পরামর্শদানের একটি পদ্ধতি নিশ্চয়ই আছে। পদ্ধতিটি হচ্ছে, প্রথমে ক্ষমা বা মওকুফের আবেদনটি জেলের কর্তার কাছে পেশ করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রী লিখবেন, ফাঁসি দেওয়া যাবে কি না, তা রাষ্ট্রপতি বিবেচনা করে দেখবেন। তারপর যখন যাবে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে, তখন তিনি কি শুধু চোখ বুজে সই করবেন? বিপ্লবের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হয়েছে কি না, এ নিয়েই প্রশ্ন করা অর্থহীন। কারণ, সংবিধানে রাষ্ট্রপতির একক ক্ষমতায় মওকুফ করার বিধান রয়েছে বলে আমার মনে হয়। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘জননিরাপত্তা আইনে’ অনুমোদন না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে একবার ফেরত পাঠিয়েছিলেন। একই নীতি অনুসরণে আমার শ্রদ্ধেয় জিল্লুর ভাই, রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বিপ্লবকে মওকুফ করার সুপারিশটি কি ফেরত দিতে পারতেন না? দেশের বর্তমানকালের সবচেয়ে অভিজ্ঞ আইনপ্রণেতাকে প্রশ্নটি করায় উত্তর পেয়েছি, ‘পারতেন শুধু নয়, অনুমোদন প্রদানে অস্বীকৃতি আনবার ক্ষমতা আছে।’ সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীনের সংসদে গৃহীত আইন অনুমোদন বিলম্বিত করতে পারতেন। কিন্তু সেটি শেষ পর্যন্ত করতে বাধ্য ছিলেন। মার্জনা প্রদানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিরই সর্বময় ক্ষমতা রয়েছে। অপরদিকে একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ বলেছেন, দলীয় রাষ্ট্রপতি পারেন না। অর্থাৎ বিপ্লবের ক্ষেত্রে মার্জনা দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক প্রাধান্য পেয়েছে?
ব্যাখ্যা হচ্ছে, ৪৯ অনুচ্ছেদে তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ একচ্ছত্র বা সরাসরি এমনটি মনে হতে পারে। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে কোন দণ্ড মওকুফ স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’ ৪৯ অনুচ্ছেদটির ইংরেজি অনুবাদ দ্ব্যর্থ ভাষায় মওকুফ করার ‘শ্যাল হ্যাভ পাওয়ার’, বাংলায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ‘থাকিবে’। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের বিষয়টি অনুল্লিখিত।
মত প্রদত্ত উপরিউক্ত ব্যাখ্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা যা-ই বলুক, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা যা-ই থাকুক, তাহের-পুত্র বিপ্লবের ক্ষেত্রে তিনি সাংবিধানিক ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেননি। ক্ষমতাসীনের দলীয় রাজনীতির মোকাবিলা করতে পারেননি। সত্য ও বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। তিনি কারও না কারও পরামর্শ নিয়েছেন। নীতি-নির্ধারকদের ইচ্ছা পূরণ করেছেন। তিনি সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে অবস্থিত একটি পদে থেকে রাষ্ট্রপতি ‘বৈপ্লবিক’ মার্জনা করে রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন, যা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ দিয়েছে।
শেষ কথা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ, আমজনতা একজন সন্ত্রাসীর শুধু নয়, আত্মস্বীকৃত খুনির মৃত্যুদণ্ড মওকুফ নিয়ে শুধু ক্ষুব্ধ নয়, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। তাঁরা এতে ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে, তার আলামত দেখতে পাচ্ছেন। তাঁরা ভাবছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী, ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ ঢালাও মামলা প্রত্যাহারের কার্যাবলি, সর্বত্র আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদেরের ভাষায় হাইব্রিড গডফাদারদের উত্থান ও পুরোনো কারও কারও পুনরাগমন, তাঁদের সন্তানকে ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচানো—এসব কি আগামী সাধারণ নির্বাচনটি কেমন হবে সেই আগাম বার্তা পাঠাচ্ছে?
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
তার পরও লক্ষ্মীপুরে তাহের-বিপ্লবের দাপট নিয়ে লিখতে বসেছি। ইতিমধ্যে হাতে পেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাদেরকে নিয়ে বড় অক্ষরের শিরোনাম। সেই কাদেরকে নির্যাতনের দায়ে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করতে আদালতকে নির্দেশ দিতে হলো। সাম্প্রতিক কালে এমনি কয়েকটি ঘটনায় আদালতকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর জানিয়ে দিলেন, শাসকের বিবেক যখন স্থবির হয়, বিচারককেই বিবেকের ভূমিকা নিতে হয়।
মূল আলোচনা শুরু করি, অনেক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বহু কীর্তিকাহিনির হোতা পরিচয়ে পরিচিত বিপ্লবের পিতা তাহের, তাঁরই তো ছেলে বিপ্লব। ইংরেজিতে বলব ‘লাইক ফাদার লাইক সান।’ তাঁর সম্বন্ধে ইরাক যুদ্ধের সময় সারা দেশে ছড়ানো স্লোগান ‘বাপের ব্যাটা সাদ্দাম’ প্রয়োগ করে বলব, ‘বাপের ব্যাটা বিপ্লব।’ পার্শ্ববর্তী কুমিল্লার মানুষ হলে বলতাম, ‘বেডাই একখান।’ সেই ব্যাটা বা বেডার ফাঁসি হয়নি কেন, তা নিয়ে হুলস্থুল বেধেছে। কেন হয়নি তার অনেক সাংবিধানিক ও বিচিত্র ব্যাখ্যা রয়েছে। আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশ্লেষক সবাই রাষ্ট্রপতি ও তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতা বিশ্লেষণ করছেন। অপরদিকে ভিন্নতর ভাবনা ভাবছেন সাম্প্রতিক কালে (কতখানি সাম্প্রতিক তা পাঠক বলবেন) সারা দেশে সন্ত্রাসের মহামারির বিস্তারে আতঙ্কিত নিরীহ জনসাধারণই।
রাষ্ট্রপতি যে সাংবিধানিক ক্ষমতাটি প্রয়োগ করেছেন, সেটি নিয়ে প্রথমে তাত্ত্বিক আলোচনা করি।
বস্তুত রাষ্ট্রপতির দণ্ড মওকুফ-সম্পর্কিত সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদটি বোঝার চেষ্টায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছি। বিপ্লবকে ক্ষমা প্রদান অবশ্যই প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য। প্রাথমিকভাবে প্রশ্ন করা যেতে পারে, ক্ষমাটি কে করেছেন? প্রতিবেদনের সর্বশেষে আলোচনা করব কেন করা হয়েছে মনে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অযোগ্য-অসমর্থনীয় হওয়া সত্ত্বেও যুক্তিপূর্ণ কাজটি করলেন বাহ্যত স্বয়ং রাষ্ট্রপতি। তা তিনি একক ইচ্ছায় করেছেন কি না, তা নিয়ে নিশ্চয়ই বিতর্ক হতে পারে। অনুচ্ছেদ ৪৯ বলছে, ‘কোন অপরাধীর দণ্ড মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম, মওকুফ, স্থগিত করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’ অন্যদিকে ৪৮(৩) বলছে, ‘কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য্য করিবেন।’ পুরো অনুচ্ছেদ পড়ে জটিল ভাবনায় পড়েছি। সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ বলছে, প্রধানমন্ত্রী বিপ্লবকে ফাঁসি থেকে বাঁচানোর জন্য রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কি না কোনো আদালত এ সম্পর্কে কোনো ‘প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না।’ পুরো বিষয়টি খোলাসা করার জন্য আমি রাষ্ট্রপতি তথা আমার ‘জিল্লুর ভাইয়ের’ সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি। তিনি সাক্ষাতের সম্মতিও দিয়েছিলেন, দুর্ভাগ্যবশত সেই সাক্ষাতের আগেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আল্লাহ তাঁকে সুস্থ রাখুন।
যা হোক, প্রধানমন্ত্রী আদৌ পরামর্শ দিয়েছেন কি না আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না, কিন্তু দেশের অগণিত জনগণ, বিবেকবান ব্যক্তি লক্ষ্মীপুরের নিহত নুরুল ইসলামের নৃশংস হত্যার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মার্জনা নিয়ে ফিসফিসানি গুঞ্জনের মাধ্যমে নানা প্রশ্ন করছেন। নুরুল ইসলামের স্ত্রী হূদয়কাড়া মোক্ষম প্রশ্নটি রাষ্ট্রপতিকে করেছেন, ‘আপনার স্ত্রী আইভি রহমানের প্রকৃত হত্যাকারীর ফাঁসির আদেশ হলে তা-ও কি আপনি ক্ষমা করবেন?’ বর্তমান অবস্থার বিপাকে প্রশ্নটি কেউ করছেন না, করলেও উত্তর পাবেন না। ভবিষ্যতে কোনো এক সরকারের আমলে হয়তো প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে, অর্থাৎ তখন কে প্রধানমন্ত্রী হবেন আর কে রাষ্ট্রপতি থাকবেন, সেই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে হয়তো প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া গেলেও যেতে পারে।
বক্তব্যটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করছি। সংসদে আইন করে, সংবিধানের সংশোধনীর মাধ্যমে দায়মুক্তি বিধান করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ক্ষমা তো নয়ই, গ্রেপ্তার বা বিচারও করা হয়নি। নিয়তির বিধান আজ নুরুল ইসলামের রাজনৈতিক সহকর্মীরা তাঁর হত্যাকারীর ফাঁসির দণ্ড মওকুফের প্রতিবাদে সভা করে বিপর্যস্ত হয়েছেন। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের হত্যার ক্ষতটি বুকের মধ্যে দীর্ঘদিন পোষণ করে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেই ‘দায়মুক্তি’ বাতিল করে সুষ্ঠু আইনানুগ বিচার সম্পন্ন করে অপরাধীদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুপ্রাণ বাংলার মানুষ আর আমাদের স্বজনহারা প্রধানমন্ত্রী এ জন্য অপেক্ষা করেছেন দীর্ঘ তিন দশক। নুরুল ইসলামের স্ত্রীকেও হয়তো এমনি প্রতীক্ষায় থাকতে হবে। সেই প্রতীক্ষা কয়েক দিন, কয়েক বছর, কয়েক দশক, নাকি শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত, তা কে বলতে পারে? দশকের হিসাবটি করি না কেন? বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করেছিলেন আমার কাছে খুবই শ্রদ্ধেয় আইনজীবী সিরাজুল হক। বিপ্লবের ফাঁসি মওকুফের খবর শুনে তাঁর অকালমৃত্যুর পর মামলা পরিচালনাকারী তাঁর সুযোগ্য পুত্র স্নেহভাজন আনিসুল হককে টেলিফোন করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আনিস, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কি দণ্ড মওকুফ চেয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চেয়েছিল?’ উত্তর পেলাম, ‘হ্যাঁ, চেয়েছিল, পায়নি।’ পেলে বিক্ষুব্ধ হতো দেশের মানুষ; ক্ষোভে উত্তাল হতো সমগ্র দেশ।
খুনির ফাঁসি আর দণ্ড মওকুফ নিয়ে আরও কিছু আলোচনা প্রয়োজন। কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়েছে সামরিক আদালতে গোপন প্রহসনের বিচারে। তাহের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি। জেনারেল জিয়ার আমলে শত শত সিপাইকে, বিমানবাহিনীর সদস্যদের কখন কীভাবে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল। জিয়ার হত্যা নয়, ‘বিদ্রোহ’ করেছে শুধু এই অজুহাতে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তাকে বিচার চলাকালে মধ্যরাতে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি জানি না কেন বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে তাঁর স্বামীর হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসিতে ঝোলাননি। বড় দুঃখ লাগে, যখন ভাবি কী অভাগা এই জাতি, মুক্তিযোদ্ধাদের রাতের আঁধারে অসম্পন্ন বিচারের জন্য দায়ী বলে যাকে পরোক্ষে দায়ী করা হয়, তার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যেতে জোট বাঁধে।
আওয়ামী লীগের এক নেতা অতীতের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, বিএনপি খুনি জিন্টুকে ক্ষমা করেছিল। বিজ্ঞ আইনজীবী জিয়া-এরশাদের মন্ত্রী মওদুদ বলেছেন, সেই দণ্ড ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ তথা প্রহসনের সামরিক আদালত দিয়েছিল, সুবিচার হয়নি। বক্তব্যটি মেনে নিয়ে জিন্টুর দণ্ড মওকুফ নিয়ে বর্তমান সরকারের যাঁরা খোঁচা মারা কথা বলেন, তাঁরা কি জিন্টুর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন না? কর্নেল তাহেরের পুনর্বিচারের দাবির মতো এমন দাবি উঠেছে, ১৩ মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিগত দুই সামরিক শাসকের ফাঁসি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিচার এই সরকার করবে কি? অবশ্য বিপ্লবের দণ্ড মওকুফ করার পর এই সরকার বর্ণিত সেই সব প্রহসনের ফাঁসি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।
আবেগবর্জিত হয়ে এবার রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতাটির সাংবিধানিক বিশ্লেষণ করব। অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) ও ৪৯ অনুচ্ছেদ এই দুইয়ের সাংঘর্ষিক অবস্থান সংবিধান বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ করতে অনুরোধ করব। যেমন, রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা যাবে না তিনি আদৌ পরামর্শ দিয়েছেন কি না। কিন্তু পরামর্শদানের একটি পদ্ধতি নিশ্চয়ই আছে। পদ্ধতিটি হচ্ছে, প্রথমে ক্ষমা বা মওকুফের আবেদনটি জেলের কর্তার কাছে পেশ করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রী লিখবেন, ফাঁসি দেওয়া যাবে কি না, তা রাষ্ট্রপতি বিবেচনা করে দেখবেন। তারপর যখন যাবে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে, তখন তিনি কি শুধু চোখ বুজে সই করবেন? বিপ্লবের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হয়েছে কি না, এ নিয়েই প্রশ্ন করা অর্থহীন। কারণ, সংবিধানে রাষ্ট্রপতির একক ক্ষমতায় মওকুফ করার বিধান রয়েছে বলে আমার মনে হয়। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘জননিরাপত্তা আইনে’ অনুমোদন না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে একবার ফেরত পাঠিয়েছিলেন। একই নীতি অনুসরণে আমার শ্রদ্ধেয় জিল্লুর ভাই, রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বিপ্লবকে মওকুফ করার সুপারিশটি কি ফেরত দিতে পারতেন না? দেশের বর্তমানকালের সবচেয়ে অভিজ্ঞ আইনপ্রণেতাকে প্রশ্নটি করায় উত্তর পেয়েছি, ‘পারতেন শুধু নয়, অনুমোদন প্রদানে অস্বীকৃতি আনবার ক্ষমতা আছে।’ সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীনের সংসদে গৃহীত আইন অনুমোদন বিলম্বিত করতে পারতেন। কিন্তু সেটি শেষ পর্যন্ত করতে বাধ্য ছিলেন। মার্জনা প্রদানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিরই সর্বময় ক্ষমতা রয়েছে। অপরদিকে একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ বলেছেন, দলীয় রাষ্ট্রপতি পারেন না। অর্থাৎ বিপ্লবের ক্ষেত্রে মার্জনা দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক প্রাধান্য পেয়েছে?
ব্যাখ্যা হচ্ছে, ৪৯ অনুচ্ছেদে তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ একচ্ছত্র বা সরাসরি এমনটি মনে হতে পারে। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে কোন দণ্ড মওকুফ স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’ ৪৯ অনুচ্ছেদটির ইংরেজি অনুবাদ দ্ব্যর্থ ভাষায় মওকুফ করার ‘শ্যাল হ্যাভ পাওয়ার’, বাংলায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ‘থাকিবে’। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের বিষয়টি অনুল্লিখিত।
মত প্রদত্ত উপরিউক্ত ব্যাখ্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা যা-ই বলুক, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা যা-ই থাকুক, তাহের-পুত্র বিপ্লবের ক্ষেত্রে তিনি সাংবিধানিক ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেননি। ক্ষমতাসীনের দলীয় রাজনীতির মোকাবিলা করতে পারেননি। সত্য ও বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। তিনি কারও না কারও পরামর্শ নিয়েছেন। নীতি-নির্ধারকদের ইচ্ছা পূরণ করেছেন। তিনি সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে অবস্থিত একটি পদে থেকে রাষ্ট্রপতি ‘বৈপ্লবিক’ মার্জনা করে রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন, যা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে দুঃখ দিয়েছে।
শেষ কথা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ, আমজনতা একজন সন্ত্রাসীর শুধু নয়, আত্মস্বীকৃত খুনির মৃত্যুদণ্ড মওকুফ নিয়ে শুধু ক্ষুব্ধ নয়, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। তাঁরা এতে ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে, তার আলামত দেখতে পাচ্ছেন। তাঁরা ভাবছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী, ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ ঢালাও মামলা প্রত্যাহারের কার্যাবলি, সর্বত্র আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদেরের ভাষায় হাইব্রিড গডফাদারদের উত্থান ও পুরোনো কারও কারও পুনরাগমন, তাঁদের সন্তানকে ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচানো—এসব কি আগামী সাধারণ নির্বাচনটি কেমন হবে সেই আগাম বার্তা পাঠাচ্ছে?
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
No comments