সমুদ্রে ডুবে মৃত্যু-নিরাপত্তাই প্রথম—এই নীতি ওদের বাঁচাতে পারত by মুসা ইব্রাহীম
প্রথমেই নিরাপত্তা বা নিরাপত্তাই প্রথম (Safety First)। বিশ্বের প্রথম এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী তেনজিং নোরগের শ্যালক এবং ভারতের দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের কোর্স ডিরেক্টর নিমা নোরবুর প্রথম পাঠ ছিল এটি। যতক্ষণ পর্যন্ত না নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এক কদমও এগোনো যাবে না—হোক না সেটা প্রাকৃতিক দুর্গম বাধা
পেরিয়ে পর্বতারোহণে, কিংবা স্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতিতে ‘জলবৎ তরলং’ পর্বতারোহণে। বিশ্বের অন্যতম কঠিন এই অ্যাডভেঞ্চারে পর্বতারোহীদের জন্য এটাই ‘থাম্ব রুল’। ২০০৪ সালের মার্চ মাসে যখন পর্বতারোহণের প্রথম মৌলিক প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলাম, তার পর থেকেই সেই শিক্ষা বুকে লালন করে চলেছি। ফলে হোক না কোনো ট্র্যাকিং, কোনো ভ্রমণ, সমুদ্র অভিযান বা পর্বতারোহণ—সব কাজেই মাথায় সর্বপ্রথম কাজ করেছে নিরাপত্তার নীতিটি।
তাই বলে কি পর্বতারোহণ একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট হয়ে গেল? সেখানে কি কোনো বিপদ-আপদ ঘটে না? ঘটে এবং তা অনেক সময়ই ব্যক্তি যখন তার নিজের সামর্থ্যকে অতিমূল্যায়ন করে, তখনই ঘটে। তবে পর্বতারোহণের দুর্ঘটনাগুলো বেশির ভাগই প্রাকৃতিক কারণপুষ্ট।
কিন্তু গত ২৯ জুলাই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে কী ঘটে গেল? সেদিন আনুমানিক সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কণ্ঠশিল্পী আবিদ শাহরিয়ার এবং তাঁর বন্ধু ও সহকর্মী মুত্তাকিন, আশিক ও সোহেল কক্সবাজারের কলাতলী পয়েন্টের নির্জন সৈকতে নিজেদের মধ্যে প্রীতি ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে উচ্ছ্বাসভরা প্রাণে নেমেছিলেন সমুদ্র অবগাহনে। ঘটনাক্রমে সেদিন কক্সবাজারেই অবস্থান করছিলাম। সরেজমিনে জানতে পেরেছিলাম, আবিদ, মুত্তাকিন ও আশিক আর ফেরেননি। এ সময় সাগরে ভাটা থাকায় তাঁরা কলাতলী পয়েন্টে সৃষ্ট এক গুপ্তখাল পার হয়ে গিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু হঠাৎ করে বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় চারজনই সেই গুপ্তখালে পড়ে যান। আর সাঁতার না জানা আবিদ, মুত্তাকিন আর আশিক হারিয়ে গিয়েছিলেন সেই খালে। সাঁতার জানা সোহেল একজনকে টেনে পাড়ে নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। লাইফগার্ডের সদস্যরা মুত্তাকিনকে কিছুক্ষণের মধ্যেই উদ্ধার করে পাড়ে নিয়ে আসেন। তবে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা আবিদ আর মুত্তাকিনকে মৃত ঘোষণা করেন। আর আশিকের লাশ পাওয়া গেছে পরদিন ৩০ জুলাই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে।
এখন প্রশ্ন হলো, লাইফগার্ডের সদস্যরা সেই ভাটার সময় তাঁদের সমুদ্রে নামতে দিলেন কেন? তাঁদের দায়িত্বটা আসলে কী? আর তাঁদের কাজে কী কী সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়? এখানে ‘নিরাপত্তাই প্রথম’ নীতিটি মানা হলো না কেন?
প্রথমেই আসি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রসঙ্গে। সাঁতার শিখে তবেই পানিতে নামা উচিত। আবার পানিতে না নামলেও কিন্তু সাঁতার শেখা যায় না। সুতরাং সাঁতার না জেনে পানিতে নামা অপরাধ নয়, বরং কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাইফগার্ডের সদস্যদের ভাটার সময় সমুদ্রে নামা প্রত্যেক ছেলে-বুড়োকে অবশ্যই থামানো উচিত। আর কখনোই সাঁতার না জানা কাউকে এত গভীরে কখনোই যেতে দেওয়া উচিত নয়, কখনোই না। যেখানে প্রতিবছরই, এমনকি প্রায় প্রতি মাসেই দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে, সেখানে আমাদের লাইফগার্ডের সদস্যদের ‘নিরাপত্তাই প্রথম’ নীতির বাইরে এক পা ফেলার ফুরসত নেই।
যদি না-ই থাকে, তাহলে তাদের অটুট ও শতভাগ সেবাদানে কী কী সরঞ্জাম প্রয়োজন? বিশ্বের বা দেশের যেকোনো সমুদ্রসৈকতে লাইফগার্ড একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু মানুষের জীবনরক্ষার কাজে একেবারে সরাসরি জড়িত, তাই এসব প্রতিষ্ঠানে ‘থাম্ব রুল’-এর মতো দুরবিন বা বাইনোকুলার, জীবনরক্ষাকারী বাঁশি বা হুইসেল, লাইফজ্যাকেট, রাবারের স্পিডবোট, ওয়াকিটকি এবং ওয়াচ টাওয়ার ইত্যাদি সরঞ্জাম থাকতেই হয়। আর লাইফগার্ডের সদস্যদের হতে হয় চৌকস, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং শতভাগ নিবেদিতপ্রাণ। শুধু তাহলেই যদি কেউ সমুদ্রে গোসল করতে গিয়ে কোনো বিপদে পড়েন, তাহলে মিনিট খানেকের মধ্যেই তার কাছে জীবনরক্ষার সহায়তা নিয়ে হাজির হতে পারবেন লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা। সেই সঙ্গে তাঁদের জানা উচিত, পানিতে ডুবে যাওয়া বিপদগ্রস্তের জীবনরক্ষার জন্য কার্ডিওপালমোনারি রিসাসাইটেশন বা সিপিআর দেওয়ার প্রাথমিক চিকিৎসাজ্ঞান। সিপিআরের মাধ্যমে দেহে প্রাণ থাকা ব্যক্তির শ্বাসনালিতে আটকে যাওয়া কোনো তরল পদার্থ বের করে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করা এবং তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
কিন্তু কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা কি এসব সরঞ্জাম নিয়ে মানুষের সেবা দিচ্ছেন? যাঁরা এ পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরেছেন, তাঁরা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন—না, আমাদের লাইফগার্ডের এসব সুবিধা নেই। তাহলে তাঁরা নিজেরাই ‘নিরাপত্তাই প্রথম’ নীতিটি কীভাবে মেনে চলবেন এবং বিপদগ্রস্তকে উদ্ধার করবেন?
এক হিসাব অনুযায়ী গত আট বছরে এই সমুদ্রসৈকতে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৭৫ জন। আর মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে আরও শতাধিক মানুষকে। এখন লাইফগার্ড বাহিনীকে যদি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সাধারণ মানুষের জীবনরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেওয়া হয়, তাহলে হাসপাতালে নেওয়ার আগে প্রাথমিক সিপিআরের মাধ্যমেই অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। কক্সবাজারে সেদিন জানতে পেরেছিলাম, আশিক ও মুত্তাকিনকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে নিতেই সময় লেগে গিয়েছিল ৩০ মিনিটেরও বেশি। সে ক্ষেত্রে সমুদ্রসৈকতে সার্বক্ষণিক ভিত্তিতে থাকতে হবে একটি অ্যাম্বুলেন্স এবং একটি প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র, যাতে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হওয়া ব্যক্তি, যার প্রাণ সংশয় হলো, তাকে মুহূর্ত বিলম্ব না করে প্রাণরক্ষার সহায়তা দেওয়া যায়।
কক্সবাজারের স্বনামধন্য সার্ফার জাফর বলছিলেন, লাইফগার্ডে থাকাকালীন তিনি প্রায় ৭০ জনের জীবন বাঁচিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি মনে করেন, সমুদ্রসৈকতে গোসল করতে নামা এমন বহু পর্যটকের অকালে ঝরে যাওয়াটা, এমন সম্ভাবনার অকালমৃত্যু ঠেকানোটা প্রশাসন সক্রিয় হলেই করা সম্ভব। সরকারি কোষাগার থেকে যদি না-ও হয়, তাহলে কক্সবাজারের হোটেল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই চাঁদা তুলে লাইফগার্ডকে শক্তিশালী করা সম্ভব।
এই সমুদ্রসৈকতকে যদি নিজেদের চেষ্টায়ই নিরাপদ করে তুলতে পারি, তাহলে এই সুনামের ভাগীদার তো আমরাই হব, তাই নয় কি? আসুন, এ ধরনের অ্যাডভেঞ্চারে আজ থেকেই ‘নিরাপত্তাই প্রথম’ নীতির বাস্তবায়ন শুরু করে দিই। নিজেরা সচেতন ও দায়িত্বশীল হই। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাইফগার্ড বাহিনীকে শক্তিশালী করে তুলি। আর একটি প্রাণও যেন সমুদ্রসৈকতে ঝরে না যায়।
মুসা ইব্রাহীম: এভারেস্ট বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি।
তাই বলে কি পর্বতারোহণ একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট হয়ে গেল? সেখানে কি কোনো বিপদ-আপদ ঘটে না? ঘটে এবং তা অনেক সময়ই ব্যক্তি যখন তার নিজের সামর্থ্যকে অতিমূল্যায়ন করে, তখনই ঘটে। তবে পর্বতারোহণের দুর্ঘটনাগুলো বেশির ভাগই প্রাকৃতিক কারণপুষ্ট।
কিন্তু গত ২৯ জুলাই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে কী ঘটে গেল? সেদিন আনুমানিক সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কণ্ঠশিল্পী আবিদ শাহরিয়ার এবং তাঁর বন্ধু ও সহকর্মী মুত্তাকিন, আশিক ও সোহেল কক্সবাজারের কলাতলী পয়েন্টের নির্জন সৈকতে নিজেদের মধ্যে প্রীতি ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে উচ্ছ্বাসভরা প্রাণে নেমেছিলেন সমুদ্র অবগাহনে। ঘটনাক্রমে সেদিন কক্সবাজারেই অবস্থান করছিলাম। সরেজমিনে জানতে পেরেছিলাম, আবিদ, মুত্তাকিন ও আশিক আর ফেরেননি। এ সময় সাগরে ভাটা থাকায় তাঁরা কলাতলী পয়েন্টে সৃষ্ট এক গুপ্তখাল পার হয়ে গিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু হঠাৎ করে বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় চারজনই সেই গুপ্তখালে পড়ে যান। আর সাঁতার না জানা আবিদ, মুত্তাকিন আর আশিক হারিয়ে গিয়েছিলেন সেই খালে। সাঁতার জানা সোহেল একজনকে টেনে পাড়ে নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। লাইফগার্ডের সদস্যরা মুত্তাকিনকে কিছুক্ষণের মধ্যেই উদ্ধার করে পাড়ে নিয়ে আসেন। তবে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা আবিদ আর মুত্তাকিনকে মৃত ঘোষণা করেন। আর আশিকের লাশ পাওয়া গেছে পরদিন ৩০ জুলাই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে।
এখন প্রশ্ন হলো, লাইফগার্ডের সদস্যরা সেই ভাটার সময় তাঁদের সমুদ্রে নামতে দিলেন কেন? তাঁদের দায়িত্বটা আসলে কী? আর তাঁদের কাজে কী কী সরঞ্জাম প্রয়োজন হয়? এখানে ‘নিরাপত্তাই প্রথম’ নীতিটি মানা হলো না কেন?
প্রথমেই আসি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রসঙ্গে। সাঁতার শিখে তবেই পানিতে নামা উচিত। আবার পানিতে না নামলেও কিন্তু সাঁতার শেখা যায় না। সুতরাং সাঁতার না জেনে পানিতে নামা অপরাধ নয়, বরং কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাইফগার্ডের সদস্যদের ভাটার সময় সমুদ্রে নামা প্রত্যেক ছেলে-বুড়োকে অবশ্যই থামানো উচিত। আর কখনোই সাঁতার না জানা কাউকে এত গভীরে কখনোই যেতে দেওয়া উচিত নয়, কখনোই না। যেখানে প্রতিবছরই, এমনকি প্রায় প্রতি মাসেই দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে, সেখানে আমাদের লাইফগার্ডের সদস্যদের ‘নিরাপত্তাই প্রথম’ নীতির বাইরে এক পা ফেলার ফুরসত নেই।
যদি না-ই থাকে, তাহলে তাদের অটুট ও শতভাগ সেবাদানে কী কী সরঞ্জাম প্রয়োজন? বিশ্বের বা দেশের যেকোনো সমুদ্রসৈকতে লাইফগার্ড একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু মানুষের জীবনরক্ষার কাজে একেবারে সরাসরি জড়িত, তাই এসব প্রতিষ্ঠানে ‘থাম্ব রুল’-এর মতো দুরবিন বা বাইনোকুলার, জীবনরক্ষাকারী বাঁশি বা হুইসেল, লাইফজ্যাকেট, রাবারের স্পিডবোট, ওয়াকিটকি এবং ওয়াচ টাওয়ার ইত্যাদি সরঞ্জাম থাকতেই হয়। আর লাইফগার্ডের সদস্যদের হতে হয় চৌকস, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং শতভাগ নিবেদিতপ্রাণ। শুধু তাহলেই যদি কেউ সমুদ্রে গোসল করতে গিয়ে কোনো বিপদে পড়েন, তাহলে মিনিট খানেকের মধ্যেই তার কাছে জীবনরক্ষার সহায়তা নিয়ে হাজির হতে পারবেন লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা। সেই সঙ্গে তাঁদের জানা উচিত, পানিতে ডুবে যাওয়া বিপদগ্রস্তের জীবনরক্ষার জন্য কার্ডিওপালমোনারি রিসাসাইটেশন বা সিপিআর দেওয়ার প্রাথমিক চিকিৎসাজ্ঞান। সিপিআরের মাধ্যমে দেহে প্রাণ থাকা ব্যক্তির শ্বাসনালিতে আটকে যাওয়া কোনো তরল পদার্থ বের করে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করা এবং তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
কিন্তু কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা কি এসব সরঞ্জাম নিয়ে মানুষের সেবা দিচ্ছেন? যাঁরা এ পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরেছেন, তাঁরা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন—না, আমাদের লাইফগার্ডের এসব সুবিধা নেই। তাহলে তাঁরা নিজেরাই ‘নিরাপত্তাই প্রথম’ নীতিটি কীভাবে মেনে চলবেন এবং বিপদগ্রস্তকে উদ্ধার করবেন?
এক হিসাব অনুযায়ী গত আট বছরে এই সমুদ্রসৈকতে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৭৫ জন। আর মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে আরও শতাধিক মানুষকে। এখন লাইফগার্ড বাহিনীকে যদি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সাধারণ মানুষের জীবনরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেওয়া হয়, তাহলে হাসপাতালে নেওয়ার আগে প্রাথমিক সিপিআরের মাধ্যমেই অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। কক্সবাজারে সেদিন জানতে পেরেছিলাম, আশিক ও মুত্তাকিনকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে নিতেই সময় লেগে গিয়েছিল ৩০ মিনিটেরও বেশি। সে ক্ষেত্রে সমুদ্রসৈকতে সার্বক্ষণিক ভিত্তিতে থাকতে হবে একটি অ্যাম্বুলেন্স এবং একটি প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র, যাতে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হওয়া ব্যক্তি, যার প্রাণ সংশয় হলো, তাকে মুহূর্ত বিলম্ব না করে প্রাণরক্ষার সহায়তা দেওয়া যায়।
কক্সবাজারের স্বনামধন্য সার্ফার জাফর বলছিলেন, লাইফগার্ডে থাকাকালীন তিনি প্রায় ৭০ জনের জীবন বাঁচিয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি মনে করেন, সমুদ্রসৈকতে গোসল করতে নামা এমন বহু পর্যটকের অকালে ঝরে যাওয়াটা, এমন সম্ভাবনার অকালমৃত্যু ঠেকানোটা প্রশাসন সক্রিয় হলেই করা সম্ভব। সরকারি কোষাগার থেকে যদি না-ও হয়, তাহলে কক্সবাজারের হোটেল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই চাঁদা তুলে লাইফগার্ডকে শক্তিশালী করা সম্ভব।
এই সমুদ্রসৈকতকে যদি নিজেদের চেষ্টায়ই নিরাপদ করে তুলতে পারি, তাহলে এই সুনামের ভাগীদার তো আমরাই হব, তাই নয় কি? আসুন, এ ধরনের অ্যাডভেঞ্চারে আজ থেকেই ‘নিরাপত্তাই প্রথম’ নীতির বাস্তবায়ন শুরু করে দিই। নিজেরা সচেতন ও দায়িত্বশীল হই। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাইফগার্ড বাহিনীকে শক্তিশালী করে তুলি। আর একটি প্রাণও যেন সমুদ্রসৈকতে ঝরে না যায়।
মুসা ইব্রাহীম: এভারেস্ট বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি।
No comments