তরুণ আইনজীবীর সুখ-দুঃখ
ইমন একজন আইনের ছাত্র। তিনি সরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ওপর অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন, বড় হয়ে একজন নামকরা আইনজীবী হবেন। সে জন্যই মূলত তাঁর আইন বিষয়ে পড়া। আইন পড়াশোনা শেষ করে তিনি দীর্ঘদিন ঘুরেছেন একজন ভালো সিনিয়রের খোঁজে।
কিন্তু ভালো সিনিয়রের সন্ধান পাওয়া তাঁর কাছে হয়ে উঠল একটি দুরূহ ব্যাপার। যা-ই হোক, অবশেষে তিনি একজন সিনিয়রের সঙ্গে কাজ শুরু করলেন। এবার শুরু হলো তাঁর জীবনের আরেক কঠিন পরীক্ষা। সিনিয়রের সঙ্গে মানিয়ে চলাটাই হয়ে উঠল তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ তিনি দেখতে পেলেন, আইন পেশায় সিনিয়র মানেই হচ্ছে এমন একজন, যিনি কোনো ভুল করতে পারেন না, তিনি যা বলবেন, তা-ই করতে হবে, তা যেভাবেই হোক। সিনিয়রের কাজ নিয়ে কখনো কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। সিনিয়র যদি কোনো ভুলও করেন, সেটাকেই সঠিক মনে করতে হবে। সিনিয়রের ভুল ধরাটা হবে এক মহা অন্যায়। কারণ ‘সিনিয়র ক্যান ডু নট রং’, ব্যাপারটা ছিল অনেকটা এ রকম।
অন্য দিকে যে মামলাটায় সিনিয়র যেতে চাইছেন না বা গেলে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতি হতে পারে, সেখানে তিনি ইমনকে (তাঁর জুনিয়র) পাঠাতেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি মামলায় আগে অনেকবার সময় নেওয়া হয়েছে, বিচারক আর সময় দিতে মোটেই ইচ্ছুক নন। এদিকে সিনিয়র এখনো সেই মামলার শুনানি করার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেননি, এমনই একটি পরিস্থিতিতে তিনি ইমনকে (তাঁর জুনিয়র) পাঠাতেন টাইম পিটিশন (সময় আবেদন) দিয়ে। আর কোনো কারণে যদি ইমন ব্যর্থ হতো, তাঁকে সহ্য করতে হতো সিনিয়রের চরম ভর্ৎসনা। এ ব্যাপারগুলো ইমন যতই উপলব্ধি করতে পারছেন, আর তাঁর মানসিক কষ্ট ততই বেড়ে যাচ্ছে।
অন্য দিকে তাঁর পারিশ্রমিক নিয়ে তাঁকে পড়তে হতো আরেক বিড়ম্বনায়, সিনিয়র সারা দিন তাঁকে অমানবিকভাবে খাটিয়ে দিন শেষে ধরিয়ে দিত খুব সামান্য কিছু টাকা। তখন ইমনের নিজেকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা একজন মেধাবী আইনের ছাত্র মনে হতো, নাকি অন্য কোনো পেশার লোক মনে হতো, তা সে জানে না। তা-ও আবার সেই টাকা পেতে তাঁকে সিনিয়রের প্রস্থান পর্যন্ত তীর্থের কাকের মতো বসে থাকতে হতো। জুনিয়র হওয়া মানেই যেন, তিনি যত মেধাবীই হোন না কেন, তিনি সিনিয়রের ইচ্ছার বাইরে যেতে পারবেন না। সিনিয়রের যেকোনো সিদ্ধান্তই তাঁকে অকপটে মেনে নিতে হবে। এমনি হাজারো ভোগান্তি আর বিড়ম্বনায় বারবার যেন থমকে যেতে লাগল তাঁর বড় আইনজীবী হওয়ার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। তিনি জানেন না, এই প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটিয়ে কবে তিনি একদিন নিজের মতো করে নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে তাঁর বুকভরা স্বপ্নের কুঁড়িগুলোকে বিকশিত পুষ্পের মতো প্রস্ফুটিত করবেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়াও যেন তাঁর স্বপ্নের পথে আরেক অন্তরায়। তবে তিনি আশায় বুক বাঁধেন, এমনি একদিন আসবে, যেদিন প্রতিবন্ধকতার সব অন্ধকার ভেদ করে স্বপ্নের আলোয় উদ্ভাসিত হবে তাঁর আপন ভুবন। তবে তিনি জানেন না, কবে আসবে সেই দিন।
জাহিদ আহমেদ, জজকোর্ট, ঢাকা।
অন্য দিকে যে মামলাটায় সিনিয়র যেতে চাইছেন না বা গেলে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতি হতে পারে, সেখানে তিনি ইমনকে (তাঁর জুনিয়র) পাঠাতেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি মামলায় আগে অনেকবার সময় নেওয়া হয়েছে, বিচারক আর সময় দিতে মোটেই ইচ্ছুক নন। এদিকে সিনিয়র এখনো সেই মামলার শুনানি করার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেননি, এমনই একটি পরিস্থিতিতে তিনি ইমনকে (তাঁর জুনিয়র) পাঠাতেন টাইম পিটিশন (সময় আবেদন) দিয়ে। আর কোনো কারণে যদি ইমন ব্যর্থ হতো, তাঁকে সহ্য করতে হতো সিনিয়রের চরম ভর্ৎসনা। এ ব্যাপারগুলো ইমন যতই উপলব্ধি করতে পারছেন, আর তাঁর মানসিক কষ্ট ততই বেড়ে যাচ্ছে।
অন্য দিকে তাঁর পারিশ্রমিক নিয়ে তাঁকে পড়তে হতো আরেক বিড়ম্বনায়, সিনিয়র সারা দিন তাঁকে অমানবিকভাবে খাটিয়ে দিন শেষে ধরিয়ে দিত খুব সামান্য কিছু টাকা। তখন ইমনের নিজেকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা একজন মেধাবী আইনের ছাত্র মনে হতো, নাকি অন্য কোনো পেশার লোক মনে হতো, তা সে জানে না। তা-ও আবার সেই টাকা পেতে তাঁকে সিনিয়রের প্রস্থান পর্যন্ত তীর্থের কাকের মতো বসে থাকতে হতো। জুনিয়র হওয়া মানেই যেন, তিনি যত মেধাবীই হোন না কেন, তিনি সিনিয়রের ইচ্ছার বাইরে যেতে পারবেন না। সিনিয়রের যেকোনো সিদ্ধান্তই তাঁকে অকপটে মেনে নিতে হবে। এমনি হাজারো ভোগান্তি আর বিড়ম্বনায় বারবার যেন থমকে যেতে লাগল তাঁর বড় আইনজীবী হওয়ার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। তিনি জানেন না, এই প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটিয়ে কবে তিনি একদিন নিজের মতো করে নিজেকে সাজিয়ে নিয়ে তাঁর বুকভরা স্বপ্নের কুঁড়িগুলোকে বিকশিত পুষ্পের মতো প্রস্ফুটিত করবেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়াও যেন তাঁর স্বপ্নের পথে আরেক অন্তরায়। তবে তিনি আশায় বুক বাঁধেন, এমনি একদিন আসবে, যেদিন প্রতিবন্ধকতার সব অন্ধকার ভেদ করে স্বপ্নের আলোয় উদ্ভাসিত হবে তাঁর আপন ভুবন। তবে তিনি জানেন না, কবে আসবে সেই দিন।
জাহিদ আহমেদ, জজকোর্ট, ঢাকা।
No comments