রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-মত প্রকাশের জন্য শিক্ষককে শাস্তি কেন? by মীর মেহবুব আলম
আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের কয়েকজন (সংখ্যাগরিষ্ঠ) শিক্ষক। স্বাধীন মত প্রকাশের দায়ে অভিযুক্ত আমরা আজ আমাদের তিনজন সহকর্মীকে হারাতে বসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের তিনজন সুযোগ্য সহকর্মী মনোজ কুমার প্রামাণিক, সলোক হোসেন ও আবদুস সালাম জীবনকে স্বাধীন মত প্রকাশ ও বিভাগে
স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের দায়ে অভিযুক্ত করেছে। এই তিনজন শিক্ষক অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত।
উল্লেখ্য, বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কর্তৃক অ্যাডহক নিয়োগ হয়। এই নিয়োগের ছয় মাসের মধ্যে যদি বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে নিয়োগ না হয় ভিসি পুনরায় তাঁদের নিয়োগকে নবায়ন করে থাকেন। এভাবে যত দিন পর্যন্ত স্থায়ী পদে, বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান না করা হয়, তত দিন পর্যন্ত তাঁদের চাকরি নবায়ন করে বিভাগকে সচল রাখা হয়। এই বিভাগে এখনো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। অ্যাডহক নিয়োগের প্রার্থীদের একাডেমিক রেজাল্ট-সংক্রান্ত কোনো জটিলতা থাকে না অর্থাৎ একাডেমিক রেজাল্ট তাঁদের খুব ভালো থাকা বাঞ্ছনীয়। আমাদের তিনজন সহকর্মীর রেজাল্ট এই বিভাগের মাস্টার্স শেষ হয়ে যাওয়া শ্রেণীগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতর। আর গত এক বছরে (তাঁদের অ্যাডহক নিয়োগ হয় ২৪ এপ্রিল ২০১১) তাঁদের শিক্ষকতাজীবনও ভীষণ ফলপ্রসূ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁদের নৈতিক অধঃপতনের দায়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে নৈরাজ্য সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করেছে এবং চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে (২৭ এপ্রিল ২০১১ যে খবর অনেক জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত)। প্রকৃত ঘটনা তাঁদের চাকরি নবায়ন করা হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ-সংক্রান্ত কোনো পদক্ষেপও হাতে নেয়নি। ভিসি জানিয়েছেন, (বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ কালে) তাঁরা ভিসিবিরোধী তথা সরকারবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন বলে তাঁদের নৈতিকতা অধঃপতিত হয়েছে। ভিসি যাকে ভিসি বা সরকারবিরোধী আন্দোলন বলছেন, তার স্বরূপটা একটু দেখার চেষ্টা করি—গত ৩১ মার্চ নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষক (১৬ জন) সভাপতির (তৎ কালীন) প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ভিসি, প্রো-ভিসি ও রেজিস্ট্রার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করি এবং তৎ পরবর্তী সময়ে আমরা সভাপতির কক্ষে তালা লাগিয়ে দিই ও সকল প্রকার কর্মবিরতি পালন করি। বিভাগের সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ আনয়নের লক্ষ্যে আমরা তাঁর অপসারণ দাবি করি। তৎ কালীন বিভাগীয় সভাপতির সবকিছুতে একক সিদ্ধান্তসহ বিভিন্ন একাডেমিক সিদ্ধান্ত টেম্পারিং, সহকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ মোট ১৩ দফা অভিযোগ আনি। আমরা দীর্ঘ ছয় দিন ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান করি, নাটক করি, গান করি। এ আমাদের প্রতিবাদের ভাষা, আমাদের আন্দোলনের ভাষা। (উল্লেখ্য, আমাদের ওই সহকর্মীত্রয় সভাপতির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন কিন্তু তালা লাগানোর সঙ্গে তাঁরা জড়িত ছিলেন না।) আমাদের আন্দোলনের মুখে সভাপতি শর্ত সাপেক্ষে পদত্যাগ করেন। প্রধানতম শর্ত হচ্ছে, তদন্ত কমিটি গঠন। আমরাও এমন একটা জায়গা চেয়েছিলাম যেখানে আমাদের সঙ্গে যে অনাচার করা হয়েছে তা প্রতিকারের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করতে পারি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনো প্রকাশিত হয়নি। সে ক্ষেত্রে প্রশাসন কিসের ভিত্তিতে শিক্ষকদের সঙ্গে এরূপ আচরণ করছে, ঠিক বুঝতে পারছি না। আমরা কিছু বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি—
প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্র। সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিভাগকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন করেছি।
দ্বিতীয়ত, সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখি। বিশ্ববিদ্যালয় তার অন্যতম। সেই রূপ শিক্ষায়তনে অন্যায়ের প্রতিবাদে এরূপ শাস্তি বাঞ্ছনীয় নয়।
তৃতীয়ত, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কমিউনিটির প্রশ্ন। অন্যায়ের প্রতিবাদে শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীদের প্রতি যদি বিশ্ববিদ্যালয় এরূপ সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা, প্রকারান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা হুমকির মধ্যে পড়বে।
চতুর্থত, অন্যায়ের প্রতিবাদে বা বিভাগকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন কর্তৃক শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা হলে তা একটি নিকৃষ্টতম উদাহরণ হয়ে থাকবে।
পঞ্চমত, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে যেসব শিক্ষককে কারাবন্দী করা হয়েছিল, তৎ কালীন রাষ্ট্রব্যবস্থা তাঁদের নৈরাজ্য সৃষ্টির দায়ে চাকরিচ্যুত করতে চেয়েছিল কিন্তু তা পারেনি বা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। আর এখন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্বাধীন মত প্রকাশ করার দায়ে চাকরিচ্যুত করা—তা কতখানি যুক্তিযুক্ত?
ষষ্ঠত, যেহেতু তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনো প্রকাশিত হয়নি, সেহেতু প্রশাসন কিসের ভিত্তিতে এরূপ সিদ্ধান্ত নিতে উদ্যত হয়, তা বোধগম্য নয়।
সপ্তমত, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই কেউ শাস্তি পেতে পারে না। তাই তিনজন সহকর্মী কোনোভাবেই চাকরিচ্যুত হতে পারেন না।
অষ্টমত, অনাস্থা প্রকাশ করেছি ১৬ জন। তালা লাগানোসংক্রান্ত বিষয়ে ওই তিনজন কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। যদি শাস্তি হয় প্রথমত বাকি ১৩ জন, দ্বিতীয়ত ১৬ জনেরই শাস্তি হওয়া উচিত, না হলে শুধু তিনজনের কোনোভাবেই নয়।
নবমত, আমরা শুধু সভাপতির অপসারণ দাবি করেছিলাম। কোনো ভিসিবিরোধী বা সরকারবিরোধী অথবা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন করিনি।
দশমত, আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। ভিসির বাসভবনের সামনে নাটক ও গান করেছি, কারণ আমরা নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। আমাদের প্রতিবাদের ভাষা এমনই।
উল্লিখিত ১০টি বিষয়ে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। করছি সব বিদ্যায়তনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ। অন্যায়ের প্রতিবাদে যদি আমাদের তিন সহকর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয় অর্থাৎ তাঁদের চাকরির নবায়ন না করা হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়ে যাবে। আসুন সবাই মিলে ব্যক্তির স্বাধীনতা, বিদ্যায়তনের স্বাধীনতা, স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা, দেশের স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্রকে রক্ষা করি।
লেখকেরা নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
উল্লেখ্য, বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কর্তৃক অ্যাডহক নিয়োগ হয়। এই নিয়োগের ছয় মাসের মধ্যে যদি বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে নিয়োগ না হয় ভিসি পুনরায় তাঁদের নিয়োগকে নবায়ন করে থাকেন। এভাবে যত দিন পর্যন্ত স্থায়ী পদে, বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান না করা হয়, তত দিন পর্যন্ত তাঁদের চাকরি নবায়ন করে বিভাগকে সচল রাখা হয়। এই বিভাগে এখনো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। অ্যাডহক নিয়োগের প্রার্থীদের একাডেমিক রেজাল্ট-সংক্রান্ত কোনো জটিলতা থাকে না অর্থাৎ একাডেমিক রেজাল্ট তাঁদের খুব ভালো থাকা বাঞ্ছনীয়। আমাদের তিনজন সহকর্মীর রেজাল্ট এই বিভাগের মাস্টার্স শেষ হয়ে যাওয়া শ্রেণীগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতর। আর গত এক বছরে (তাঁদের অ্যাডহক নিয়োগ হয় ২৪ এপ্রিল ২০১১) তাঁদের শিক্ষকতাজীবনও ভীষণ ফলপ্রসূ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁদের নৈতিক অধঃপতনের দায়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে নৈরাজ্য সৃষ্টির দায়ে অভিযুক্ত করেছে এবং চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে (২৭ এপ্রিল ২০১১ যে খবর অনেক জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত)। প্রকৃত ঘটনা তাঁদের চাকরি নবায়ন করা হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ-সংক্রান্ত কোনো পদক্ষেপও হাতে নেয়নি। ভিসি জানিয়েছেন, (বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ কালে) তাঁরা ভিসিবিরোধী তথা সরকারবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিলেন বলে তাঁদের নৈতিকতা অধঃপতিত হয়েছে। ভিসি যাকে ভিসি বা সরকারবিরোধী আন্দোলন বলছেন, তার স্বরূপটা একটু দেখার চেষ্টা করি—গত ৩১ মার্চ নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষক (১৬ জন) সভাপতির (তৎ কালীন) প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে ভিসি, প্রো-ভিসি ও রেজিস্ট্রার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করি এবং তৎ পরবর্তী সময়ে আমরা সভাপতির কক্ষে তালা লাগিয়ে দিই ও সকল প্রকার কর্মবিরতি পালন করি। বিভাগের সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ আনয়নের লক্ষ্যে আমরা তাঁর অপসারণ দাবি করি। তৎ কালীন বিভাগীয় সভাপতির সবকিছুতে একক সিদ্ধান্তসহ বিভিন্ন একাডেমিক সিদ্ধান্ত টেম্পারিং, সহকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ মোট ১৩ দফা অভিযোগ আনি। আমরা দীর্ঘ ছয় দিন ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান করি, নাটক করি, গান করি। এ আমাদের প্রতিবাদের ভাষা, আমাদের আন্দোলনের ভাষা। (উল্লেখ্য, আমাদের ওই সহকর্মীত্রয় সভাপতির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন কিন্তু তালা লাগানোর সঙ্গে তাঁরা জড়িত ছিলেন না।) আমাদের আন্দোলনের মুখে সভাপতি শর্ত সাপেক্ষে পদত্যাগ করেন। প্রধানতম শর্ত হচ্ছে, তদন্ত কমিটি গঠন। আমরাও এমন একটা জায়গা চেয়েছিলাম যেখানে আমাদের সঙ্গে যে অনাচার করা হয়েছে তা প্রতিকারের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করতে পারি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনো প্রকাশিত হয়নি। সে ক্ষেত্রে প্রশাসন কিসের ভিত্তিতে শিক্ষকদের সঙ্গে এরূপ আচরণ করছে, ঠিক বুঝতে পারছি না। আমরা কিছু বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি—
প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্র। সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিভাগকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন করেছি।
দ্বিতীয়ত, সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখি। বিশ্ববিদ্যালয় তার অন্যতম। সেই রূপ শিক্ষায়তনে অন্যায়ের প্রতিবাদে এরূপ শাস্তি বাঞ্ছনীয় নয়।
তৃতীয়ত, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কমিউনিটির প্রশ্ন। অন্যায়ের প্রতিবাদে শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীদের প্রতি যদি বিশ্ববিদ্যালয় এরূপ সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা, প্রকারান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা হুমকির মধ্যে পড়বে।
চতুর্থত, অন্যায়ের প্রতিবাদে বা বিভাগকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন কর্তৃক শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা হলে তা একটি নিকৃষ্টতম উদাহরণ হয়ে থাকবে।
পঞ্চমত, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে যেসব শিক্ষককে কারাবন্দী করা হয়েছিল, তৎ কালীন রাষ্ট্রব্যবস্থা তাঁদের নৈরাজ্য সৃষ্টির দায়ে চাকরিচ্যুত করতে চেয়েছিল কিন্তু তা পারেনি বা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। আর এখন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্বাধীন মত প্রকাশ করার দায়ে চাকরিচ্যুত করা—তা কতখানি যুক্তিযুক্ত?
ষষ্ঠত, যেহেতু তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনো প্রকাশিত হয়নি, সেহেতু প্রশাসন কিসের ভিত্তিতে এরূপ সিদ্ধান্ত নিতে উদ্যত হয়, তা বোধগম্য নয়।
সপ্তমত, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই কেউ শাস্তি পেতে পারে না। তাই তিনজন সহকর্মী কোনোভাবেই চাকরিচ্যুত হতে পারেন না।
অষ্টমত, অনাস্থা প্রকাশ করেছি ১৬ জন। তালা লাগানোসংক্রান্ত বিষয়ে ওই তিনজন কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। যদি শাস্তি হয় প্রথমত বাকি ১৩ জন, দ্বিতীয়ত ১৬ জনেরই শাস্তি হওয়া উচিত, না হলে শুধু তিনজনের কোনোভাবেই নয়।
নবমত, আমরা শুধু সভাপতির অপসারণ দাবি করেছিলাম। কোনো ভিসিবিরোধী বা সরকারবিরোধী অথবা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন করিনি।
দশমত, আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। ভিসির বাসভবনের সামনে নাটক ও গান করেছি, কারণ আমরা নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। আমাদের প্রতিবাদের ভাষা এমনই।
উল্লিখিত ১০টি বিষয়ে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। করছি সব বিদ্যায়তনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ। অন্যায়ের প্রতিবাদে যদি আমাদের তিন সহকর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয় অর্থাৎ তাঁদের চাকরির নবায়ন না করা হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়ে যাবে। আসুন সবাই মিলে ব্যক্তির স্বাধীনতা, বিদ্যায়তনের স্বাধীনতা, স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা, দেশের স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্রকে রক্ষা করি।
লেখকেরা নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
No comments