ঢাকা-দিল্লি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক-বন্ধুত্ব দৃঢ় করতে চাই দুই পক্ষের সদিচ্ছা

বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয়ে গেল নয়াদিল্লিতে। বাংলাদেশ আবারও আশান্বিত হলো। বাংলাদেশের ইতিবাচক মানসিকতার বিষয়টি অনুধাবন করেছেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সীমান্তে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে ঘটে আসছিল, তা নিরসন করতে ভারত আন্তরিক হবে, সে বৈঠকে তা আবারও উচ্চারিত হলো।


স্পষ্টভাবেই ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেছেন, বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় গুলি ছোড়া শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য বলা হয়েছে। মন্ত্রী পর্যায়ের এই বৈঠক থেকে এমন একটি আশ্বাস পাওয়া যাবে বলে বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল। পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণেও এই বৈঠকের ফলপ্রাপ্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের তিন দিকে মিয়ানমারের কিছু অংশ ছাড়া পুরোটাই ভারতের সীমান্ত এলাকা। একসময় দেশ দুটির মাঝখানে কোনো সীমান্তও ছিল না। ফলে দুই দেশের অধিবাসীদের আত্মীয়স্বজন এখনো দুই দেশের অভ্যন্তরে রয়ে গেছে। তেমনি নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক দ্রব্যসামগ্রী সংগ্রহের জন্য সীমান্ত এলাকার মানুষজন দেশ দুটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। আবার কাজ শেষে তারা চলেও যায়। এখন বাংলাদেশ ও ভারত দুটি দেশ হওয়ার কারণে জনগণের অবাধ যাতায়াত সুবিধা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অন্যদিকে আইনের জটিলতা এবং ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরির কারণে মানুষ অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যরা তখন মাঝেমধ্যে কিছুটা বাড়াবাড়িও করে। স্বাভাবিক কারণেই বাংলাদেশের মানুষ তাকে গ্রহণ করতে পারে না। তারা নিজ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আবার ভারতীয় এলাকায় পারাপার ঠেকানোর জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাঁটাতারের বেড়াও দিয়ে রেখেছে। এটা চোরাচালান রোধ করতে সহায়ক হবে।
চোরাচালান রোধ করা সীমান্তরক্ষীদের অন্যতম দায়িত্ব। দেশপ্রেমিক জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে এ ধরনের অনৈতিক কাজ যাতে বন্ধ থাকে সেদিকে নজর দেওয়া। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তরক্ষীরা তীক্ষ্ন নজর দেবেন- এটা স্বাভাবিক। তবে সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের মানুষকে ধরে নিয়ে হোক কিংবা এ দেশের কিছু মানুষ অবৈধভাবে সে দেশে প্রবেশই করুক, সেই সব মানুষকে গুলি করে হত্যা কিংবা নির্যাতন করার এখতিয়ার কারো নেই। আমরা আশা করব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে, সেগুলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের কেউ কেউ ভারতে অবস্থান করছে, এমন খবর ইতিপূর্বে বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের ধরে এনে আদালতে উপস্থাপন করার জন্য বর্তমান সরকার চেষ্টা চালাবে- এমন প্রতিশ্রুতি বর্তমান সরকারি দল ক্ষমতায় আসার আগে দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য ভারত সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল ইতিপূর্বে। সরকারের এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিক বলে সে কথা জানা গেছে। একই সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি করার বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। সীমান্ত চিহ্নিতকরণে যে মতপার্থক্য রয়েছে, সেটিও মীমাংসিত হবে- এমন আশা উভয় পক্ষ থেকেই করা হয়। সুতরাং এটা প্রত্যাশিত যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এই বৈঠকটি দুটি দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার জন্য যথেষ্ট সহায়তা প্রদান করবে। নিকট-প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে উভয় পক্ষের মধ্যেই কিছু মতানৈক্য কিংবা মতভেদ দেখা যেতে পারে; কিন্তু দুই পক্ষ ইচ্ছা করলেই তাদের এ সম্পর্ক দৃঢ়তর করা সম্ভব হবে।

No comments

Powered by Blogger.