রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়-স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতেই হবে

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও অনুযায়ী নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রতি বছর নির্বাচন কমিশনে নির্দিষ্ট সময়ে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। গত বছর এটা কার্যকর হয় এবং সন্তুষ্টির কথা যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তা মেনে চলছে।


তবে গত বছর প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সময়মতো নির্বাচন কমিশনের কাছে হিসাব জমা দিলেও আওয়ামী লীগ বাড়তি সময় নিয়েছিল। এবারে ঘটেছে তার উল্টো_ শাসক দল সময়মতো জমা দিয়েছে এবং বিএনপি বাড়তি দুই মাস সময় চেয়েছে। রোববার আওয়ামী লীগ যে হিসাব দেখিয়েছে তাতে গত এক বছরে আয় ছিল চার কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং ব্যয় দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আয়ের খাতের মধ্যে রয়েছে নেতাকর্মীদের চাঁদা ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অনুদান। ব্যয়ের খাতে রয়েছে অফিস ব্যবস্থাপনা, প্রচার এবং কর্মীদের বেতন। দলের কোষাধ্যক্ষের দাবি, নিয়ম মেনে ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে তারা এ হিসাব জমা দিয়েছেন। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সব দলের কাছেই স্বচ্ছতার প্রত্যাশা থাকে দেশবাসীর। এটা ঠিক যে, নির্বাচন কমিশনের কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রদানের নিয়মটি নতুন এবং অনেক দলই এতে অভ্যস্ত নয়। তবে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করতে হলে এর প্রয়োজন রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো কোন সূত্র থেকে অর্থ পাচ্ছে এবং কীভাবে ব্যয় করছে তাতে স্বচ্ছতা থাকা চাই। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা বেঁধে দিয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে অবশ্যপালনীয় আচরণবিধি, যার সঙ্গে নির্বাচনকালীন ব্যয় জড়িত। এ ক্ষেত্রে ফল ইতিবাচক। যেমন রঙিন পোস্টার, ব্যানার ও তোরণ নির্মাণের মতো খাতে ব্যয়ে প্রার্থীরা সতর্ক ও সংযমী। তবে ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য অর্থ বিলানোর মতো কিছু খাতে এখন পর্যন্ত কার্যকর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যায়নি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কঠোর নজরদারির পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিরও প্রয়োজন রয়েছে। নির্বাচনী হিসাবের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাবেও স্বচ্ছতা আসুক, এটাই প্রত্যাশিত। রাজনৈতিক দলগুলো যে হিসাব বিবরণী নির্বাচন কমিশনে জমা দিচ্ছে তা অডিট ফার্ম দ্বারা নিরীক্ষিত। তবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কাজে জনসাধারণের পূর্ণ আস্থা নেই এবং এর দায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোরই। তারা কর্তার ইচ্ছায় কর্মসম্পাদন করে বলে অভিযোগ ব্যাপক এবং তা একেবারে অমূলক নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাবের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটলে এর মূল উদ্দেশ্যই ভণ্ডুল হয়ে যাবে। তাছাড়া প্রধান দলগুলোকে এটাও মনে রাখতে হবে যে, তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.