মাহে রমজান-ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হোক
বছর ঘুরে আবার এলো পবিত্র মাহে রমজান। মুসলিমদের জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এ মাসটি ত্যাগ ও ইবাদতের মহিমায় ভাস্বর। এ মাস প্রত্যেক মুসলিমের জীবনে এক অপূর্ব আনন্দের বারতা নিয়ে আসে। মাসব্যাপী ইবাদতের প্রস্তুতি চলতে থাকে রমজান শুরু হওয়ার অনেক আগে। প্রতিদিন রোজা রেখে ধর্মপ্রাণ মানুষরা আল্লাহকে স্মরণ করেন।
তারাবি নামাজসহ বিশেষ ইবাদতের মাধ্যমে স্রষ্টার প্রতি নিজেদের আনুগত্য প্রকাশ করেন। মাসব্যাপী রোজার মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষরা অভুক্ত মানুষের বেদনা অনুভব করেন। জগতের লাঞ্ছিত-বঞ্চিতদের সঙ্গে নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার শিক্ষা লাভ করেন। রমজান মুসলিমদের কৃচ্ছ্রসাধনের শিক্ষা দেয়। রমজান শেখায় বিত্তবৈভবের গরিমার বদলে স্রষ্টার দরবারে আনুগত্য প্রকাশের মহিমা। দেখায় আহারসহ সকল উপভোগের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ইবাদতের মধ্যে মগ্ন থাকার সৌন্দর্য। দুুঃখজনক হলেও সত্য, রমজানের এই শিক্ষা আমাদের দেশে অনেকের জীবনে সঠিকভাবে প্রতিভাত হয় না। ত্যাগের বদলে ভোগ, কৃচ্ছ্রতার বদলে অপচয়, অল্প আহারের বদলে ভূরিভোজ রমজানের সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহনশীলতা ও সৌহার্দ্যের বদলে নেতিবাচক প্রবণতাও দেখা যায়। আমরা লক্ষ্য করি, এ মাস এলেই প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যায়। লোকে অনেক পরিমাণে কিনবে নিশ্চিত হয়ে অতি মুনাফালোভীরা রমজানকেই বেছে নেয়। যারা সচ্ছল তারা হয়তো বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে সক্ষম, কিন্তু যারা অল্প আয়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের জন্য ভোগান্তি তৈরি হয়। অথচ এর উল্টো ঘটনা ঘটলে সেটিই অধিক গ্রহণযোগ্য হতো। আমরা আশা করব, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়বে না। এ বিষয়ে সরকার বিশেষ নজর দেবে। পাশাপাশি, রমজানে রোজাদারদের পথচলার কষ্ট লাঘব করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হলে সেটি প্রশংসনীয় হবে। রাস্তায় যদি সহনীয় যানজট থাকে তবে রোজাদার মানুষরা সহজে কর্মস্থলে যেতে এবং ইফতারের আগে কর্মস্থল থেকে ফিরতে পারবেন। আশার কথা, ইতিমধ্যে অফিস, স্কুল-কলেজের সময়সূচি পুনর্নির্ধারিত হয়েছে। যানজট কমাতে এ নতুন সময়সূচি ভূমিকা রাখবে বলেই আমরা আশা করি। রমজানের সিয়াম সাধনার মধ্যেই বিপণি বিতানগুলোতে শুরু হবে ঈদের প্রস্তুতিমূলক কেনাকাটা। মানুষ যাতে সুষ্ঠুভাবে কেনাকাটা করতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা এখনই ভাবতে হবে। তবে বাহ্যিক এই আয়োজনগুলোর বাইরে প্রত্যেক মুসলিমের মনে যদি রমজান নতুন আলো জ্বালাতে পারে, নতুন মানুষ হিসেবে সকলকে উজ্জীবিত করতে পারে তবে সেটি হবে প্রকৃত চাওয়া। ইসলাম শান্তির ধর্ম। রমজান যে ত্যাগ-তিতিক্ষা, সহনশীলতা, পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা নিয়ে আসে, তার চর্চাই সর্বাগ্রে হওয়া উচিত। মহান স্রষ্টার কাছে, বিনম্র প্রার্থনার মধ্য দিয়ে রমজান প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে শান্তি, স্থিতি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসুক_ এটিই আজকের চাওয়া।
No comments