বৃক্ষপ্রেমী গ্রামীণ শিশু by আব্দুদ দাইন

অফুরন্ত সৌন্দর্যের এক মধুর নিকুঞ্জ আমাদের এ পৃথিবী। এ পৃথিবীকে সবুজে-শ্যামলে ভরে দিয়েছে প্রাণ প্রদায়ী বৃক্ষরাজি। এ বিশ্বকে সুশীতল ও বাসযোগ্য করে রাখার ক্ষেত্রে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। মানুষের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য যেসব মৌলিক চাহিদা রয়েছে তার অধিকাংশই পূরণ করে বৃক্ষ।


মানব জীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বৃক্ষ মানুষের পরম বন্ধু। আদিপ্রাণ বৃক্ষরাজি নিঃশেষ হচ্ছে মানুষের আত্মঘাতী কুঠারের আঘাতে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বৃক্ষ নিধনের কারণে সবুজে-শ্যামলে ভরা পৃথিবীতে নেমে এসেছে পরিবেশ বিপর্যয়।
টঘঊঝঈঙ'র মতে যে কোনো দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে সর্বনিম্ন ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশে সরকারি হিসাবেই বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৬ শতাংশ। আমাদের পরিবেশ ও অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে বনায়ন বাড়ানো উচিত। না হলে গ্রিনহাউস এফেক্টের করাল গ্রাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব না। বিজ্ঞানীদের মতে, গ্রিনহাউসের প্রভাবে বাংলাদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ২২ দশমিক ৮৮৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিপর্যয় থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতি বছর জুন-জুলাই বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের রাজধানী থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়। বৃক্ষমেলার এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় 'ফল বৃক্ষে ভরবে দেশ, বদলে যাবে বাংলাদেশ।' এ স্লোগানের অর্থ সচেতন মহল বুঝলেও গ্রামীণ শিশুরা এর সঙ্গে তেমন পরিচিত নয়। তাদের বেশিরভাগই প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। বৃক্ষমেলা তাদের অনেকের কাছেই উৎসবের মতো। কেউ নিজে নিজে পছন্দ করে মেলা থেকে গাছের চারা কিনে নিয়ে যায়। কেউ আবার অভিভাবক সঙ্গে করে নিয়ে আসে। তাদের মধ্যে অনেকেই শুধু একবার বা একদিন মেলায় আসে না, প্রতিদিন মেলায় এসে পছন্দমতো বিভিন্ন ধরনের চারা গাছ কিনে নিয়ে যায়। আলাপচারিতায় জানা যায়, মেলা থেকে কেনা ফুল বা ফলের চারা কেউ টবে, কেউবা বাড়ির আঙিনায় লাগিয়েছে। স্কুল ছুটির পরপরই সদর রাস্তা দিয়ে সারি সারি ছেলেমেয়ে মেলায় ঢুকে পড়ে প্রতিদিন। বের হওয়ার সময় দেখা যায় প্রায় সবার হাতে গাছের চারা। এ এক অভাবনীয় দৃশ্য। তারা বলাবলি করে আগামী বছর বৃক্ষমেলায় আরও বেশি গাছের চারা কিনবে। এটা দেশের জন্য শুভ ইঙ্গিত। তারা জাতির ভবিষ্যৎ নাগরিক। তারাই দেশ গড়বে। 'ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।'
বৃক্ষমেলার উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করার জন্য জাতীয়ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি করে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মেলা চলাকালে তথা বর্ষা মৌসুমে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে নাটক বা জারি গানের আয়োজন করা যেতে পারে। তাদের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে বনায়নের সামাজিক আন্দোলন। যার সূত্রপাত হবে মাটি ও মানুষের কাছে অবস্থানকারী গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের দ্বারা, গ্রামীণ শিশুদের দ্বারা। যারা বৃক্ষমেলাকে উৎসব মনে করে। যারা প্রকৃত বৃক্ষপ্রেমী।
dainsanthia@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.