টেনিসের খলনায়ক বাবারা
বেচারি আরাঞ্চা সানচেজ ভিকারিও শেষ পর্যন্ত কেঁদেই ফেললেন। গাল বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পড়তে লাগল অশ্রু। তাও আবার ভরা সংবাদ সম্মেলনে! গত ১৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনা। কীভাবে বাবা-মা তাঁকে বঞ্চিত করেছেন সেটিই বলছিলেন সানচেজ ভিকারিও। খেলোয়াড়ি জীবনে যা আয় করেছেন, সরল বিশ্বাসে তুলে দিয়েছেন অভিভাবকদের হতে।
প্রায় পুরোটাই ‘মেরে’ দিয়েছেন তাঁরা। তাঁর ভবিষ্যতের দিকে তাকাননি তাঁরা। শুধু অর্থকড়ি নিয়েই নয়, অন্যান্য দিক দিয়েও অনেক ভোগান্তির কারণ হয়েছেন তাঁর অভিভাবকেরা। এমনকি তাঁর দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রেও বাবা বিরোধিতা করেছিলেন!
টেনিসের বাবারা কি এমনই হন! গত বছর বাবার বিপক্ষে হয়রানি, নির্যাতন এবং হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেছিলেন ইরানি বংশোদ্ভূত ফ্রান্সের টেনিস খেলোয়াড় আরাভানে রেজাই। বাবা আরসালান আরাভানের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের ইতিহাসটা পুরোনো। জুনিয়র সার্কিটে রেজাইর খেলার সময় একবার কোর্টে প্রায় দাঙ্গাই বাধিয়ে বসেছিলেন। পরে প্রতিযোগীদের সুরক্ষার জন্য দেহরক্ষী নিয়োগ দিতে হয়েছিল আয়োজকদের। গত বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চলার সময় রেজাইর ছেলেবন্ধুর সঙ্গে পরিস্থিতি প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে গিয়েছিল। কিছুদিন আগেও আরসালানের বিরুদ্ধে তাঁর হাজার হাজার ইউরো আত্মসাতের অভিযোগ আনেন রেজাই।
তবু নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে পারেন রেজাই। বাবার হাতে পিটুনি তো তাঁকে খেতে হয়নি। যেমনটা ঘটেছিল মিরজানা লুচিচের ক্ষেত্রে। বাবার হাতে মার খাওয়ার ভয় নিয়েই বেড়ে উঠতে হয়েছে ক্রোয়েশিয়ান এই খেলোয়াড়কে। কোর্টে কিংবা কোর্টের বাইরে একটু এদিক-ওদিক হলেই বাবা মারিনকো চড়-থাপড় মারতেন মেয়েকে। মারের কথা বরাবরই স্বীকার করেছেন মারিনকো। তবে এই অজুহাতও তাঁর ছিল, ‘যা করেছি, সন্তানের ভালোর জন্যই।’ সেই সন্তান মিরজানা এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে মা এবং ভাইবোনদের নিয়ে পাড়ি জমান আমেরিকায়। বাবাকে ছেড়ে তাঁরা শান্তির নীড় গড়ে তুলেছেন ফ্লোরিডায়।
বাবার বাড়াবাড়ির শিকার জেনিফার ক্যাপ্রিয়াতিও। আমেরিকার সাবেক এই তারকার পায়ে শাসনের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখতেন বাবা স্টেফানো ক্যাপ্রিয়াতি। একসময় অতিষ্ঠ হয়ে ক্যাপ্রিয়াতি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘আমার জীবনটাকে নষ্ট করে দিও না। আমাকে একা থাকতে দাও।’ ক্যারিয়ারের মাঝপথে মাদকাসক্ত হয়ে পড়া এবং বিপণিবিতান থেকে গয়না চুরির যে ঘটনা ঘটিয়েছেন ক্যাপ্রিয়াতি, এর পেছনে বাবার অতিশাসনেরও প্রভাব দেখেন অনেকে।
ফ্রান্সের সাবেক তারকা মেরি পিয়ার্সও আছেন এই তালিকায়। মেরি খেললে গ্যালারিতে হাজির থাকতেন বাবা জিম পিয়ার্স। পূর্বাপর পরিস্থিতি বিবেচনা না করে উঁচুস্বরে ছুঁড়ে দিতেন মন্তব্য। তাঁর এক মন্তব্য তো ‘ইতিহাস’ই হয়ে গেছে। একবার কোর্টে খেলার সময় চিৎকার করে পিয়ার্সের উদ্দেশে জিম বলেছিলেন, ‘গো অন মেরি, কিল দ্য বিচ!’ বাবার ব্যবহারে দিনে দিনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন পিয়ার্স। হত্যার হুমকির অভিযোগ আনেন বাবার বিরুদ্ধে। এক পর্যায়ে মহিলা টেনিস অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লুটিএ) পিয়ার্সের ম্যাচ চলাকালীন কোর্টে নিষিদ্ধ করেন জিমকে।
ডব্লুটিএ নিষিদ্ধ করেনি মারিয়ন বার্তোলির বাবা ওয়াল্টারকে। তবে তাঁর বাবার বিরূপ আচরণের কথা ভেবেই ফ্রান্সের ফেড কাপে দলের বাইরে রাখা হয়েছে বার্তোলিকে। যে কারণে এবারের অলিম্পিকগামী দলেও তাঁর থাকাটা সংশয়ের মধ্যে। গত উইম্বলডনের দর্শকেরা তো এক ম্যাচে দেখেছেন বার্তোলি তাঁর বাবাকে প্রকাশ্যেই কোর্ট ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।
বাবার প্রসঙ্গ যখন উঠলই তখন দামির ডকিচ বাদ যান কী করে! বিব্রত হওয়ার মতো একাধিক ঘটনা ঘটার পর বাবার সঙ্গে সম্পর্কই চুকিয়ে ফেলেছিলেন ইয়েলেনা ডকিচ। বাসায় অস্ত্র রাখার অপরাধে এবং বেলগ্রেডের অস্ট্রেলীয় হাইকমিশন উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বছর খানেক জেলও খেটেছেন দামির। পরে তাঁর আচরণে পরিবর্তন দেখে গত বছর শেষের দিকে প্রায় এক দশক পর সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেন ডকিচ।
ক্যারোলিন ওজনিয়াকির বাবার প্রসঙ্গটাও এই লেখায় অপ্রাসঙ্গিক হবে না। এক নম্বর তারকা হয়েও শিরোপা জিততে পারছিলেন না বলে মাত্র মাস দুয়েক আগে বাবা ও কোচ পিয়তরের বলয় থেকে বেরিয়ে ওজনিয়াকি নিয়োগ দেন স্প্যানিশ কোচ রিকার্ডো সানচেজকে। কিন্তু থিতু হওয়ার আগেই বরখাস্ত করা হলো তাঁকে। কারণ আর কিছু নয়, বাবা পিওতরের হস্তক্ষেপ!
শাহরিয়ার ফিরোজ
টেনিসের বাবারা কি এমনই হন! গত বছর বাবার বিপক্ষে হয়রানি, নির্যাতন এবং হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেছিলেন ইরানি বংশোদ্ভূত ফ্রান্সের টেনিস খেলোয়াড় আরাভানে রেজাই। বাবা আরসালান আরাভানের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের ইতিহাসটা পুরোনো। জুনিয়র সার্কিটে রেজাইর খেলার সময় একবার কোর্টে প্রায় দাঙ্গাই বাধিয়ে বসেছিলেন। পরে প্রতিযোগীদের সুরক্ষার জন্য দেহরক্ষী নিয়োগ দিতে হয়েছিল আয়োজকদের। গত বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চলার সময় রেজাইর ছেলেবন্ধুর সঙ্গে পরিস্থিতি প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে গিয়েছিল। কিছুদিন আগেও আরসালানের বিরুদ্ধে তাঁর হাজার হাজার ইউরো আত্মসাতের অভিযোগ আনেন রেজাই।
তবু নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে পারেন রেজাই। বাবার হাতে পিটুনি তো তাঁকে খেতে হয়নি। যেমনটা ঘটেছিল মিরজানা লুচিচের ক্ষেত্রে। বাবার হাতে মার খাওয়ার ভয় নিয়েই বেড়ে উঠতে হয়েছে ক্রোয়েশিয়ান এই খেলোয়াড়কে। কোর্টে কিংবা কোর্টের বাইরে একটু এদিক-ওদিক হলেই বাবা মারিনকো চড়-থাপড় মারতেন মেয়েকে। মারের কথা বরাবরই স্বীকার করেছেন মারিনকো। তবে এই অজুহাতও তাঁর ছিল, ‘যা করেছি, সন্তানের ভালোর জন্যই।’ সেই সন্তান মিরজানা এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে মা এবং ভাইবোনদের নিয়ে পাড়ি জমান আমেরিকায়। বাবাকে ছেড়ে তাঁরা শান্তির নীড় গড়ে তুলেছেন ফ্লোরিডায়।
বাবার বাড়াবাড়ির শিকার জেনিফার ক্যাপ্রিয়াতিও। আমেরিকার সাবেক এই তারকার পায়ে শাসনের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখতেন বাবা স্টেফানো ক্যাপ্রিয়াতি। একসময় অতিষ্ঠ হয়ে ক্যাপ্রিয়াতি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘আমার জীবনটাকে নষ্ট করে দিও না। আমাকে একা থাকতে দাও।’ ক্যারিয়ারের মাঝপথে মাদকাসক্ত হয়ে পড়া এবং বিপণিবিতান থেকে গয়না চুরির যে ঘটনা ঘটিয়েছেন ক্যাপ্রিয়াতি, এর পেছনে বাবার অতিশাসনেরও প্রভাব দেখেন অনেকে।
ফ্রান্সের সাবেক তারকা মেরি পিয়ার্সও আছেন এই তালিকায়। মেরি খেললে গ্যালারিতে হাজির থাকতেন বাবা জিম পিয়ার্স। পূর্বাপর পরিস্থিতি বিবেচনা না করে উঁচুস্বরে ছুঁড়ে দিতেন মন্তব্য। তাঁর এক মন্তব্য তো ‘ইতিহাস’ই হয়ে গেছে। একবার কোর্টে খেলার সময় চিৎকার করে পিয়ার্সের উদ্দেশে জিম বলেছিলেন, ‘গো অন মেরি, কিল দ্য বিচ!’ বাবার ব্যবহারে দিনে দিনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন পিয়ার্স। হত্যার হুমকির অভিযোগ আনেন বাবার বিরুদ্ধে। এক পর্যায়ে মহিলা টেনিস অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লুটিএ) পিয়ার্সের ম্যাচ চলাকালীন কোর্টে নিষিদ্ধ করেন জিমকে।
ডব্লুটিএ নিষিদ্ধ করেনি মারিয়ন বার্তোলির বাবা ওয়াল্টারকে। তবে তাঁর বাবার বিরূপ আচরণের কথা ভেবেই ফ্রান্সের ফেড কাপে দলের বাইরে রাখা হয়েছে বার্তোলিকে। যে কারণে এবারের অলিম্পিকগামী দলেও তাঁর থাকাটা সংশয়ের মধ্যে। গত উইম্বলডনের দর্শকেরা তো এক ম্যাচে দেখেছেন বার্তোলি তাঁর বাবাকে প্রকাশ্যেই কোর্ট ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।
বাবার প্রসঙ্গ যখন উঠলই তখন দামির ডকিচ বাদ যান কী করে! বিব্রত হওয়ার মতো একাধিক ঘটনা ঘটার পর বাবার সঙ্গে সম্পর্কই চুকিয়ে ফেলেছিলেন ইয়েলেনা ডকিচ। বাসায় অস্ত্র রাখার অপরাধে এবং বেলগ্রেডের অস্ট্রেলীয় হাইকমিশন উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বছর খানেক জেলও খেটেছেন দামির। পরে তাঁর আচরণে পরিবর্তন দেখে গত বছর শেষের দিকে প্রায় এক দশক পর সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেন ডকিচ।
ক্যারোলিন ওজনিয়াকির বাবার প্রসঙ্গটাও এই লেখায় অপ্রাসঙ্গিক হবে না। এক নম্বর তারকা হয়েও শিরোপা জিততে পারছিলেন না বলে মাত্র মাস দুয়েক আগে বাবা ও কোচ পিয়তরের বলয় থেকে বেরিয়ে ওজনিয়াকি নিয়োগ দেন স্প্যানিশ কোচ রিকার্ডো সানচেজকে। কিন্তু থিতু হওয়ার আগেই বরখাস্ত করা হলো তাঁকে। কারণ আর কিছু নয়, বাবা পিওতরের হস্তক্ষেপ!
শাহরিয়ার ফিরোজ
No comments